আজকের শিরোনাম :

শ্যামনগরে যত্রতত্র চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:০৬

শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র অবৈধভাবে ভুগর্বস্থ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নিয়ম নীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি নদী, খাল ও জলাশয় থেকে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বাধ সংলগ্ন এলাকায় বা কৃষি জমিতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাত-দিন নিরবিচ্ছিন্ন বালু উত্তলন করা হয় বিভিন্ন এলাকায়। বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও জমিতে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে। তেমনি বিকট শব্দে স্থানীয় পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। বিরক্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ রয়েছে বেশিরভাগ এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় এসব বালু উত্তোলন হয়। 

শনিবার দুপুরে শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের খুটিকা এলাকার রাস্তা সংলগ্ন বিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মসজদের নিকটে বিলে ড্রেজার দিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়। বাইনতলা গ্রামের খোকন মেম্বার  এই বালু উত্তলোন করছে বলে এলাকাবাসী জানান। 

বাইনতলা এলাকার এক ব্যক্তি জানান, নিকটস্থ ৩ তলা স্কুল ভবনের নিকট থেকে বালু উত্তলোন করায় আমরা আতঙ্কে রয়েছি কখন যে স্কুলটি দেবে মাটির নিচে চলে যায়। এলাকাবাসী বলেন, এই ব্যাপারে আমরা সহকারী কমিশনার ভূমি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্যামনগর, অতিরুক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব সাহেবকে জানিয়েছি কোন আইনগত ব্যবস্থা হয়নি। শুধু পদ্মপুকুর নয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এভাবে আইন অমান্য করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ এসব বালু দিয়ে বেশিরবাগ ক্ষেত্রে নিচু জমি ভরাট করে উচু করা হচ্ছে। স্থান, এলাকা ও দূরত্ব ভেদে প্রতি ফুট বালু ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বালু বিক্রি থেকে প্রাপ্ত টাকার একটা অংশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে ড্রেজার মালিকদের পক্ষ থেকে জানা গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুটিকাটা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, শুধু খুটিকাটা  নয়, আমাদের ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। এ বিষয়ে কথা বললে প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়তে হয়। তাই ক্ষতি হলেও মুখ বুঝে সহ্য করতে হয় আমাদের। 

বালু উত্তোলনকারী ও ড্রেজার মেশিনের মালিক বলেন, সবাই উত্তোলন করে তাই আমিও মেশিন বানিয়েছি। চুক্তি করে বালু উত্তোলন করছি। সামান্য লাভ হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার ফোন দিয়েছিল বন্ধ করে দিয়েছি। খোকন মেম্বার  বলেন, এই বালু দিয়ে মাদ্রাসার মাঠ ভরাট করছি। যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতে পারে। মাঠ ভরাট হলে মেশিন বন্ধ করে দিব। বিভিন্ন গবেষণা রিপোট অনুযায়ী বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের নানা ক্ষতি হয়। এর মধ্যে উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলে নেতিবাচক পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানি ও বায়ুদূষণ হওয়ার মত ঘটনা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে। বালু উত্তোলনের সময় সৃষ্ট বায়ুদূষণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার ফলে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে। ফলে মৎস্য প্রজনন-প্রক্রিয়া পাল্টে যাওয়ার পাশাপাশি চাষাবাদের জমিও নষ্ট হচ্ছে। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বলেন, ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের সব থেকে বড় যে ক্ষতি হয় সেটা হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূচিত্র নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে ওই এলাকার জনজীবনের উপর স্থায়ী বিরুপ প্রভাব পড়ে। ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন বন্ধ না করা গেলে বাংলাদেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর অনেক বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে দাবি করেন তিনি। 

বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর উপধারা ১ অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবেনা। ধারা৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারীকে দুই বছরের কারান্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিতর  করার বিধান রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যায়না। 

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযান চালিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনকারীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

এবিএন/আলমগীর সিদ্দিকী/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ