আজকের শিরোনাম :

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একই বিদ্যালয়ে দুই বন্ধু প্রধান শিক্ষক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৩৯

মামলা জটিলতায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দুইজন প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করায় বিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় সুবিদখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। মামলা থাকায় বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটিসহ উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা নিতে পারছেন না কোনো ব্যবস্থা।

জানা গেছে, ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এক আদেশে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মামুনকে বিদ্যালয় থেকে দক্ষিণ চালিতাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং সুবিদখালী সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মো. মনিরুজ্জামানকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বদলির আদেশ দেয়ায় শুরু হয় জটিলতা। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মো. মনিরুজ্জামান মামুন নিজেকে অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে মর্মে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত শুনানিতে প্রধান বিচারপতি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা দিয়ে মনিরুজ্জামান মামুনের করা মামলাটি খারিজ করে দেন। মামলা খারিজ করায় তিনি আবার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বরিশালে মামলা করলে ২০১৮ সালে মামলাটি ডিজএলাউ করায় মনিরুজ্জামান মামুন আবারো প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন।

মনিরুজ্জামান মামুন একের পর এক মামলা করে বিজ্ঞ আদালত এবং কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করাসহ কর্তৃপক্ষকে হয়রানি ও বিব্রত করায় বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপপরিচালকের কার্যালয় থেকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেন, যা বর্তমানে চলমান। কাজী মো. মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরে ২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও বর্তমানে মো. মনিরুজ্জামান মামুন সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।

সুবিদখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারহানা আইরিন বলেন, এক স্কুলে দুইজন প্রধান শিক্ষক থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদানসহ সব কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া মামুন স্যারে বেতন পাচ্ছেন কিন্তু কাজী মনিরুজ্জামান স্যারে দীর্ঘদিন বেতন পাচ্ছেন না, এটা অমানবিক আশাকরি কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমস্যার সমাধান করবেন।

সুবিদখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন মো. বাদল সরদার বলেন, আমি ২০১৩ সালে যোগদান করে দুইজন প্রধান শিক্ষক পেয়েছি। সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমাকে, মামুন স্যারের কথা শুনলে বলে তার লোক, আবার কাজী মনিরুজ্জামান স্যারের সঙ্গে কথা বললে মামুন স্যার বলে আমি তার লোক, তাই আমি খুব সমস্যায় আছি। খুব দ্রুত যাতে এই সমস্যার সমাধান হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর অনুরোধ করছি।

সুবিদখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান মামুনের কাছে একই স্কুলে দুইজন প্রধান শিক্ষকের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ মেনেই আমি দায়িত্ব পালন করছি, তাছাড়া আমার বন্ধু কাজী মো. মনিরুজ্জামান ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে, সে এই স্কুলে আসতে চেয়েছিল তাই এ বদলির আদেশ অনৈতিক মনে করে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আশা করি শিগগিরই সুষ্ঠু সমাধান হবে।’

সুবিদখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক কাজী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ যথাযথভাবে পালন করে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক রিট পিটিশনে মামলা খারিজ হওয়ার পরেও যোগদানের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো বেতন পাইনি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমার পরিবারে বৃদ্ধ মা-বাবা এবং এক মেয়ে ও দুই ছেলে পড়াশোনা করছে। প্রায় ১২ বছর ধরে কোনো বেতন ভাতা পাচ্ছি না। এতোগুলো বছর ধার-দেনা করে ও আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় কোনোভাবে সংসার চালাচ্ছি। ঋণের বোঝা খুব ভারি হয়ে গেছে। বকেয়া বেতন পেলে ঋণ শোধ করে হাফ ছেড়ে বাঁচতে পারি। আশাকরি কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করে আমার স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেবে।’

মির্জাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল হক বলেন, এ ব্যাপারে মামলা চলমান থাকায় দীর্ঘদিনেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি, আশা করছি খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।

পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান বলেন, শুনেছি দীর্ঘদিন এ বিষয়ে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। আর আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি, তাছাড়া মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। বর্তমানে বিভাগীয় পর্যায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, আশাকরি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ