আজকের শিরোনাম :

চকরিয়া-পেকুয়ায় ১’শ মন্ডপে পালিত হবে দূর্গোৎসব

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:৪৬

সনাতনী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী দূর্গাপূজা। এই দূর্গাপূজাকে ঘিরে সনাতনীদের মাঝে ভয়ে যায় আনন্দের হিল্লোল। তবে, গত বছর কুমিল্লার নানুয়ার দিঘীতে দূর্গাপূজার মন্ডপে মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র ধর্মগ্রন্ত অবমাননার অভিযোগ তুলে দেশব্যাপী তান্ডবের সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। এর থেকে বাদ যায়নি কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা। এসময় ভাংচুর করা হয় দূর্গা প্রতিমা, লুট করা হয় হিন্দুদের বসতঘর এবং দোকানপাট। 

এই ঘটনার পর সনাতনী সম্প্রদায়ের মন থেকে এখনও কাটেনি সেই আতংক। তাই চলতি বছরের এই দূর্গোৎসবকে ঘিরে আনন্দের পরিবর্তে আতংক বিরাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও তাতেও আশ্বস্ত হতে পারছেনা পুজারীরা। 

চকরিয়া থানা সুত্রে জানা গেছে, গত ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা, সাহারবিল ও চিরিংগা ইউনিয়নে দূর্গা মন্ডপে হামলা চালানো হয়। এসময় সাহারবিলের জেলে পল্লীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। লুট করা হয় হিন্দুদের বসতঘর ও দোকানপাট

এই ঘটনা পর ১৬ অক্টোবর চকরিয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ৬২ জনের নাম উল্লেখসহ প্রায় ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামী হিসেবে দেখানো হয়। এই তিনটি মামলায় গত এক বছরে মাত্র ৬ জন আসামী গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় আইন-শৃংখলা বাহিনী। বর্তমানে গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা জামিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাতে পেকুয়া উপজেলার বেশ কিছু হিন্দু এলাকায় হামলা চালায় সাম্প্রদায়িক গোষ্টী। এসময় হামলাকারীরা পূজামন্ডপ, বসতঘরসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে জখম করে। 
পরবর্তীতে ১৫ অক্টোবর পেকুয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে ১৭জনের নাম উল্লেখসহ প্রায় ৩/৪’শ জনকে অজ্ঞাত আসামী হিসেবে দেখানো হয়। পরবর্তীতে তিনটি মামলার মধ্যে দুটি মামলার চার্জসীট আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে। 

জানা গেছে, সনাতনী সম্প্রদায়ের দূর্গোৎসবকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দফায় দফায় সম্প্রতি সমাবেশ, আন্ত:ধর্মীয় সংলাপসহ নানা ধরনের আয়োজন করে চলেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ আশ্বাসও দেয়া হচ্ছে। এবারের পূজায় নিরাপত্তার জন্য প্রতি পূজা মন্ডপে আনসার সদস্য মোতায়েনের ব্যবস্থাও করেছে প্রশাসন। এছাড়াও পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে বলে প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে।    

পেকুয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুমন বিশ্বাস বলেন, গত বছরে পূজা মন্ডপে হামলা ঘটনার প্রেক্ষিতে এখনও সনাতনী সম্প্রদায়ের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। আমরা চাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ এবং উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে পূজার সমাপ্তি ঘটাতে।

চকরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ বলেন, গত বছর দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশব্যপাী যে হিন্দু সম্প্রদায়ের মঠ-মন্দিরসহ বসতঘরে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা খুবই দু:খজনক। তার থেকে বাদ যায়নি চকরিয়াও। আমরা এই ন্যাক্কারজন ঘটনা এখনও ভুলতে পারিনি। আমরা কেউ সুন্দরভাবে মায়ের আরাধনা করতে পারিনি। প্রশাসনের পাশপাশি আমাদেরকে পূজামন্ডপে পাহারা দিতে হয়েছে। তাই এবার যাতে শান্তিপূর্ণভাবে দূর্গোৎসব শেষ করে দূর্গা মা’কে বিদায় জানাতে সেজন্য সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। 

এসব বিষয়ে জানতে চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) তফিকুল আলম বলেন, গত বছর দূর্গাপূজার সময় কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চকরিয়া-পেকুয়ায় পূজা মন্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসব ঘটনার পরপরই দুই থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৬টি মামলা দায়ের হয়। ছয়টি মামলার মধ্যে চারটি মামলার চার্জসীট আদালতে দেয়া হয়েছে। বাকি দুটি মামলার চার্জসীট শীঘ্রই দেয়া হবে। 

তিনি আরও বলেন, এবারের পূজায় কোন রকম অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তত রয়েছে এবং সার্বক্ষণিক মাঠে নিয়োজিত থাকবে। আশকরছি সনাতনী সম্প্রদায় সমস্ত ভয়ভীতি কাটিয়ে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবে।

এবিএন/মুকুল কান্তি দাশ/জসিম/আব্দুর রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ