আশ্রয়ণ প্রকল্পে রড ছাড়াই ঢালাই ইউএনও-অ্যাসিল্যান্ড গিয়ে ভাঙলেন ৬টি ঘর

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২২, ১৩:০৭

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ঢালাইয়ের কাজ চলছিল রড ছাড়াই। কোনোটিতে চারটার বদলে দেওয়া হচ্ছিল একটি। শুধু রড নয়, সিমেন্টও দেওয়া হচ্ছিল কম। এ কাজ চলছিল রাতের আঁধারে। খবর পেয়ে প্রথমে ছুটে যান অ্যাসিল্যান্ড। তাঁকে দেখেই শ্রমিকেরা পালিয়ে যান। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর সেখানে পুলিশ নিয়ে যান ইউএনও। এরপর রাতেই ইউএনও, এসি ল্যান্ডের উপস্থিতিতে আংশিক নির্মাণ করা ছয়টি ঘর ভাঙা হয়। 

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামে গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। 

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের একটি। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজটি করছি। এই কাজে কোনো গাফিলতি বা অনিয়মের সুযোগ নেই। আমরা রাতে খবর পেয়েছি, রাতেই ব্যবস্থা নিয়েছি। স্থানীয় বাসিন্দা, প্রশাসন ও কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজমপুর গ্রামের পাশে সুরমা নদীর তীরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ১১০টি ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। ২ একর ৪৩ শতক জমিতে এ ঘরগুলো হবে। সঙ্গে থাকবে স্কুল ও মসজিদ। দুই মাস হলো কাজ চলছে। মাঝখানে বন্যার কারণে কাজ বন্ধ ছিল। উপজেলা প্রশাসন নিজেদের তদারকিতে এ কাজ করাচ্ছে। 

কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আম্বিয়া আহমদ কাজের তত্ত্বাবধান করছেন। কাজটি করছেন উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও উপজেলা শ্রমিক লীগের (একাংশ) সভাপতি তাজির আলী। তিনি রাজমিস্ত্রি, শ্রমিক, নির্মাণসামগ্রী সবকিছুর ব্যবস্থা করছেন। যাঁরা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও তদারকির দায়িত্বে আছেন, তাঁরা কেউ দায় এড়াতে পারেন না। এখন শুধু মিস্ত্রি আর শ্রমিকের ওপর সব দোষ দেওয়া হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। এটির তদন্ত হওয়া উচিত। এ ছাড়া সবগুলো ঘরই পরীক্ষা করে দেখা দরকার। না হলে ভবিষ্যতে এসব ঘর ভেঙে পড়তে পারে। কানন আলম, আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আইনজীবী সুরমা নদীর পূর্ব পাড়ে উপজেলা সদর। পশ্চিম পাড়ে আজমপুর গ্রাম। উপজেলা সদর থেকে খেয়া পার হলেই গ্রামটি। উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরে যেতে হলে এই গ্রাম হয়ে যেতে হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, আজমপুর খেয়াঘাটের উত্তর পাশে নদীর চরে নির্মাণ করা হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পর এসব ঘর। এখন পর্যন্ত ৫৯টি ঘরের কাজ চলছে। এর মধ্যে ৪৫টি ঘরের কাজ ওপরের বিম পর্যন্ত হয়েছে। দেয়ালে ইট লাগানো হলেও সিমেন্টের প্লাস্টারের কাজ বাকি আছে। 

আজমপুর গ্রামের লোকজন জানান, তাঁদের গ্রামের পাশে প্রকল্পটি হলেও এই গ্রামের কেউ কাজে যুক্ত নন। কাজ করাচ্ছেন নদীর ওপারের রায়নগর গ্রামের তাজির আলী। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। পিআইও এবং তাজির আলী মিলেই সব করছেন। কয়েকজন বলেন, শুধু এই ছয়টি ঘর নয়, যেগুলোর কাজ হয়ে গেছে, সেগুলোও পরীক্ষা করে দেখতে হবে ভেতরে রড দেওয়া হয়েছে কি না। লোকজন বলাবলি করছেন, রডের সঙ্গে বাঁশের কঞ্চি ছিল। কাজের মান ভালো হয়নি। 

আলী আহমদ (৩২) নামের এক ব্যক্তি বলেন, উপজেলা পরিষদ ভবন থেকে এখানে আসতে পাঁচ মিনিটের পথ। মাঝখানে শুধু নদী। অনিয়মটা হয়েছে তদারকিতে গাফিলতির কারণেই। গ্রামের আরেক বাসিন্দা তরুণ আইনজীবী কানন আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাঁরা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও তদারকির দায়িত্বে আছেন, তাঁরা কেউ দায় এড়াতে পারেন না। এখন শুধু মিস্ত্রি আর শ্রমিকের ওপর সব দোষ দেওয়া হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। এটির তদন্ত হওয়া উচিত। এ ছাড়া সবগুলো ঘরই পরীক্ষা করে দেখা দরকার। না হলে ভবিষ্যতে এসব ঘর ভেঙে পড়তে পারে। 

জানতে চাইলে পিআইও মো. আম্বিয়া আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, তাজির আলী এই ঘরগুলো নির্মাণের কাজ করছেন। তদারকিতে কোনো অবহেলা ছিল না। অন্য ঘরগুলোর কাজ ঠিক আছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে তাজির আলী বলেন, তিনি মিস্ত্রি, শ্রমিক ও নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করছেন। কাজ করাচ্ছে প্রশাসন। যাবতীয় হিসাব পিআইও দেখছেন। তাজির আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্র করছে। দুই দিন কাজে না থাকার সুযোগে কেউ মিস্ত্রিদের হাত করে এটা করিয়েছে। 

শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে কথা হয় উপজেলা সহকারী কমিশনার, ভূমি (এসি ল্যান্ড) ফয়সাল আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, গতকাল রাত আটটায় প্রথমে খবর পেয়ে এসে দেখেন, রড ছাড়াই কাজ হচ্ছে। এরপর ইউএনও আসার পর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে ছয়টি ঘর ভেঙে ফেলেন। রোববার সকালে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেছেন।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ