আজকের শিরোনাম :

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৭৯ রেলক্রসিংয়ের ৫৭টিতেই নেই গেটম্যান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২২, ১২:২৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৭৩ কিলোমিটার রেলপথে থাকা ৭৯টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ৫৭টিতেই নেই কোনো গেটম্যান।

অরক্ষিত এসব রেলক্রসিংয়ের উভয় দিকে সতর্কতামূলক নোটিশ টানিয়েই যেন দায় সেরেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এমনকি নোটিশ বোর্ডে লেখা হয়েছে, যেকোনো দুর্ঘটনার দায় শুধু পথচারী ও যানবাহন চালকদের।

এ অবস্থায় বিপজ্জনক এসব রেলক্রসিংকে 'মৃত্যুফাঁদ' মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এসব রেল ক্রসিংগুলোতে ট্রেন ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কোন কর্মী না থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

রেলওয়ে পুলিশের হিসেব মতে, সম্প্রতি কয়েক বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বিভিন্ন যানবাহনের চালক এবং যাত্রীসহ সাত জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর রোববার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর রেল ক্রসিংয়ে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা মেইল ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রাজঘর গ্রামের ছাদেক মিয়া (৭৫) ও তার দুই ছেলে রুবেল (৩২) ও পাভেল (২৩) মারা যান। 

সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার কাছাইট, ভাদেশ্বরা, মাছিহাতা, পাঘাচং, চিনাইরসহ কয়েকটি এলাকার রেলক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, কোনো গেটেই গেটকিপার নেই। অরক্ষিত ক্রসিং দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ ও যানবাহন।

জানা যায়, অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের বেশিরভাগ সড়ক স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে। কিন্তু রেলক্রসিংয়ের নিরাপত্তায় কোন উদ্যোগ নেয় না এলজিইডি। তাছাড়াও রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে রেল ক্রসিংগুলোর একটা বড় অংশই অরক্ষিত। 

রেলওয়ের আইন অনুযায়ী, রেলপথে ক্রসিং তৈরি করতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পূর্বানুমতি নিতে হয়। ক্রসিংয়ের স্থানে রেলপথের দুই পাশে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ফটক নির্মাণ করতে হয়। এ ছাড়া কমপক্ষে তিনজন প্রহরীর মজুরি, সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার খরচও বহন করতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এরপর সরেজমিনে পরিদর্শন করে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণের পর নিকটস্থ রেলস্টেশন থেকে ওই ক্রসিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়।

কিন্তু অনুমোদন নিয়ে রেলক্রসিং নির্মাণ ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়ায় লোকজন অনুমোদন ছাড়াই নিজেদের মতো করে রেলপথে দুই পাশে রাস্তা দেখিয়ে লেভেল ক্রসিং হিসেবে ব্যবহার করে।

আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে কসবার সালদা নদী রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রায় ৪৬ কিলোমিটার রেলপথ। এছাড়া আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে বিজয়নগর উপজেলাধীন হরষপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত সিলেট রুটে প্রায় ২৭ কিলোমিটার রেলপথ। রেলওয়ের হিসাব মতে, এই দীর্ঘ রেলপথে থাকা ৭৯টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ২২টির অনুমোদন রয়েছে।

গেটম্যান বিহীন বাকি ৫৭টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত। এই সব লেভেল ক্রসিংগুলোয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ ও ছোট-বড় যানবাহন। এতে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুঝুঁকির আশংকা রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অরক্ষিত এসব রেলক্রসিংকে বৈধতা দেয়ার পাশাপাশি এগুলোতে গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের মাছিহাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল-আমিনুল হক পাভেল বলেন, পাঘাচং রেলস্টেশনের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তের দুটি রেলক্রসিং-ই অনুমোদনহীন। এগুলোতে কোনো গেটকিপার নেই। এই পথ দিয়ে চাঁন্দপুর তমিজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজ, স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ স্থানীয় লোকজন চাঁন্দপুর বাজার ও মাছিহাতা ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। এত সংখ্যক লোকজন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করলেও এই দুটি রেলক্রসিংয়ের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয় না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। 

তিনি বলেন, এই ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগের দাবিতে রেল মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেও এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। মানুষের জানমাল রক্ষার্থে এখানে গেট কিপার দেওয়ার দাবি জানান এই ইউপি চেয়ারম্যান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নাগরিক ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান পারভেজ বলেন, রেল রাষ্ট্রের এত বড় একটা সেক্টর, অথচ জনগণের ছোট্ট এ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে তারা, যা খুবই লজ্জাজনক।

আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) মনিরুল ইসলাম বলেন, রেলওয়েতে এমনিতেই লোকবলের অভাব। এ অবস্থায় স্থানীয়ভাবে যত্রতত্র রেল ক্রসিং করা হচ্ছে। ফলে বিদ্যমান লোকবল দিয়ে এসব রক্ষণাবেক্ষণ করা রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তবে যেসব ক্রসিং বৈধ আছে, সেগুলো নষ্ট হয়ে গেলে আমরা দ্রুত মেরামতের চেষ্টা করি। 

এবিএন/আমিরজাদা চৌধুরী/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ