আজকের শিরোনাম :

ভাঙনের শব্দে ঘুম ভাঙছে তিস্তা পাড়ের মানুষের

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২২, ১৬:২৬

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের হরিচরণশর্মা গ্রামের তিস্তা নদীর তীরের বাসিন্দা ছালেহা বেগম (৬০)। যার এখন তিস্তা নদীর করালগ্রাসী ভাঙনের প্রতিটি রাত কাটে নির্ঘুম অবস্থায়। ছালেহা বেগম বললেন, সংসারের এটা-সেটা কাজ করে গভীর রাতে বিছানায় যাই। ক্লান্ত শরীরে দ্রুত ঘুম আসে। হঠাৎ নদী ভাঙনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙা চোখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি এই বুঝি ঘরবাড়ি ভেসে যায়! জেগে উঠে বাইরে থেকে ঘুরে আসি। এভাবে নির্ঘুম রাত কাটে। তিস্তা নদীর পাড়ের ছালেহা বেগমের মতো রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের হরিচরণশর্মা, চরগনাই, হয়বত খাঁ, আজম খাঁ, চর বিশ্বনাথ গ্রামের তিস্তা নদী তীরবর্তীর সবাই একই আতঙ্কে ভুগছেন।

বুধবার (২৯ জুন) সকালে তিস্তা নদীর ভাঙন কবলিত ওই গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ভাঙনের আতঙ্কে কেউ ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ গাছ কাটছেন। বাইরের কোনো লোককে দেখলেই তাঁরা ঘিরে ধরেন। তাদের সামনে ভাঙন ঠেকানোর দাবি জানান।

উপজেলার টেপামুপুর ইউনিয়নের চর গনাই গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম (৫০) বলেন, এ বছর তিস্তার ভাঙনে এই এলাকার কয়েকটি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সেইসঙ্গে নদীগর্ভে আবাদী জমি, গাছপালা বিলিন হয়ে গেছে। তারা এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। একই এলাকার হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি সব কিছু হারিয়ে নদীর কাছেই একচালা ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, বাপু সারারাত ঘুমাতে পারি না। তিস্তা নদী সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। কখন যে এই বাড়িটাও নেয়। ভাঙ্গনের ভয়ে দিন পাড়ি দিচ্ছি। রাতে ভাঙনের শব্দে ঘুমাতে পারি না। অথচ ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে তিস্তা বাচাঁও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কাউনিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ তাহমিনা তারিন ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এ প্রসঙ্গে টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, এ বছর তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের ফলে তার ইউনিয়নের হরিচরণশর্মা, চর গনাই, বিশ্বনাথসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২২টি বাড়িসহ প্রায় ২৫ একর জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি কোনও সহায়তা না পাওয়ায় এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে নদী ভাঙ্গন রোধে বাঁশের খুটি দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি।

এ ব্যাপারে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা তারিন বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। টেপামধুপুর ইউনিয়নের হরিচরণশর্মা, চর গনাই, বিশ্বনাথসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২২টি বাড়িসহ প্রায় ২৫ একর জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।

তিনি আরো বলেন, আজ বুধবার থেকে ভাঙ্গন ঠেকাতে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫০টি জিও ব্যগ ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ভাঙ্গন কবলিত মানুষের মাঝে ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ