আজকের শিরোনাম :

ধুনটে সেচ প্রকল্পের লাইসেন্স দিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৩৯

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ধুনট-শেরপুর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) আসমাউল বিন হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি সেচ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ন ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) পর্যন্ত ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ এনে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৭টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগিরা।

জানাগেছে, বর্তমান সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ভর্তূকীর মাধ্যমে স্বল্প খরচে প্রতিটি এলাকায় কৃষকের নিজ জমিতে নির্দিষ্ট পরিমান দূরত্বে গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিচ্ছেন। এজন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অফিসে নলকূপ স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয় কৃষকদের। আবেদন করার পর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শনের পর তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা সেচ কমিটির কাছে দাখিল করার নিয়ম রয়েছে।  

সেচ কমিটির সদস্যদের মধ্যে সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিএডিসি অফিসের ধুনট-শেরপুর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) আসমাউল বিন হোসেন ও সদস্য হিসেবে রয়েছেন আরো ৫ জন সরকারি কর্মকর্তা।

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে সেচ কমিটির সদস্য সচিব বিএডিসি অফিসের কর্মকর্তা আসমাউল বিন হোসেন সরেজমিন তদন্ত না করেই এবং সরকারি নিয়ম না মেনেই ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধভাবে সেচ সংযোগের ছাড়পত্র দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে ধুনট উপজেলায় গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য স্থানীয় কৃষকেরা দালালদের মাধ্যমে ৬০০টি আবেদন করেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) শেরপুর জোনাল অফিসে। তন্মধ্যে সম্প্রতি ২০৬টি আবেদন ধুনট উপজেলার সেচ কমিটির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।  

ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের উজালশিং গ্রামের মৃত অজাহার আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী সরকারি বরাদ্দের নলকূপ (সেচ) স্থাপনের অনুমোদন পাওয়ার পর তাকে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই কৃষক অভিযোগ করেছেন, তার নলকূপ থেকে ৮০০ ফুট দূরত্বে অন্য জন্যকে লাইসেন্সের দেওয়ার নিয়ন থাকলেও বিএডিসি অফিসের কর্মকর্তা আসমাউল বিন হোসেন সরেজমিন তদন্ত না করেই ঘুষ নিয়ে ৪০০ ফুটের মধ্যে অন্য অরেকজনকে নতুন লাইসেন্সের অনুমোদন দিয়েছেন।

গোপালগর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, গত ৪ বছর আগে তিনি সেচের লাইসেন্স পেলেও নিয়ম বহিভূতভাবে মাত্র ৪৫০ ফুট দূরত্বে জহুরুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সেচের লাইসেন্স প্রদান করেন বিএনডিসি কর্মকর্তা আসমাউল বিন হোসেন।

তবে বিএডিসি কর্মকর্তা আসমাউল বিন হোসেনের ঘুষ ও দূর্ণীতির কাছে শুধু কৃষক নজরুল ইসলাম ও আব্দুল মজিদই জিম্মি নয়, তাদের মতো আরো প্রায় ১৭ জন সেচ মালিক ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অন্য অভিযোগকারীরা হলেন, বিলকাজুলী গ্রামের সেচ গ্রহীতা হাফেজ আলী, সাতটিকরি গ্রামের আমিনুল ইসলাম, চিকাশী গ্রামের নজরুল ইসলাম, গজারিয়া গ্রামের কাজীমুদ্দিন, কান্তনগর গ্রামের ছানোয়ার হোসেন, নলডাঙ্গা গ্রামের হেলাল উদ্দিন সহ ১৭ জন এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো শতাধিক লোকজন।

তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ধুনট-শেরপুর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) আসমাউল বিন হোসেন বলেন, সেচ কমিটির সরেজমিন তদন্তের দায়িত্বে থাকলেও ব্যস্ততার কারনে অন্য কর্মকর্তাদের দিয়ে মাঝে মধ্যে মধ্যে তদন্ত করানো হয়। তবে তিনি, নিয়ম বহিভূতভাবে কিভাবে ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট দূরত্বের মধ্যে নলকূপ স্থাপনের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স দিলেন এই কর্মকর্তা, এবিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

এবিষয়ে ধুনট উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, নলকূপ স্থাপনের অনুমোদন পেতে কৃষকের আবেদনের ভিত্তিতে বিএডিসি কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে সেচ কমিটির সভায় তা অনুমাদন দেয়া হয়। কিন্তু নতুন লাইসেন্স প্রদানের বিষয়ে অনেকগুলো অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ তদন্ত করে অনুমোদনযোগ্য না হলে সেই সকল সেচের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।


এবিএন/ইমরান হোসেন ইমন/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ