আজকের শিরোনাম :

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-পটিয়া মহাসড়কে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৪২

চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে পরিবহন সেক্টরে চলছে চাঁদাবাজি। সরকারি ঘোষিত ৬০ টাকার পরিবর্তে অতিরিক্ত ৩ শত টাকা আদায় করছে মর্মে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আন্তজেলা বিলাসী কোস্টার/চেয়ার কোচ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয় নিয়ে (৫ ডিসেম্বর) রবিবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ বাস-মিনি বাস মালিক সমিতি সাধারন সম্পাদক হাজী মো: ইউনুছ, লাইনম্যান শওকত হোসেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আন্তজেলা বিলাসী কোস্টার/চেয়ার কোচ মালিক সমিতি সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান চৌধুরী ও লাইনম্যান মো: শফি বিবাদী করে পটিয়া বাস মালিক সমিতির সদস্য হাজী মো: সেলিম পটিয়া থানা ও ট্রাফিক পুলিশের নিকট পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের দুই সমিতিতে প্রায় ৪ শত জনেরও অধিক লোক সমিতির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গত ১ বছর পূর্বে সমিতি’র সভায় সর্বসম্মিতিক্রমে শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিটি গাড়ি ৩০ টাকা ও মালিক সমিতি ৩০ টাকা আদায়ের জন্য সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বিবাদীগন সরকারি নীতিমালা/ সিদ্ধান্ত অমান্য করে দীর্ঘদিন যাবত প্রতিটি গাড়ি থেকে ২৬০ টাকা আদায় করছে।

পরিবহনের শ্রমিকরা এই অনিয়ম ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীর্তি ও হুমকি দিয়ে আসছেন।

জের ধরে (৫ডিসেম্বর) রবিবার লাইনম্যান শওকত হোসেন, মো: শফি অপরাপর বিবাদীগনের যোগসাজসে পটিয়া বাসস্টেশনে প্রতিটি গাড়ি থেকে ৩ শত টাকা আদায় করিতে থাকে মর্মে অভিযোগ সূত্রে প্রকাশ। এই নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবিতন্ডা সৃষ্টি হলে আধা ঘন্টা চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পরে পটিয়া ট্রাফিক পুলিশ ইনচার্জ জিল্লুর রহিম, থানার এস আই হিরু বিকাশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাস মালিক সমিতি’র অর্থ সম্পাদক মো: ইয়াছিন ও মো: সেলিমের মধ্যস্থায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহন বাস মালিক ও চালক সূত্রে জানাযায়, পরিবহন খাতে চাঁদা এখন যেন অনেকটাই বৈধতা পেয়ে গেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজির চলছে এবং সময়ে সময়ে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির কৌশল বদল হয়েছে। সরকারীভাবে ঘোষিত সংশ্লিষ্ট মালিক সমিতি/ গ্রুপের জন্য ৩০ টাকা ও শ্রমিক ইউনিয়নের জন্য ৩০ টাকা মোট ৬০ টাকা চার্জ নিধারণ করলেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আন্তজেলা বিলাসী কোস্টার/চেয়ার কোচ মালিক সমিতি কর্মকর্তারা আদায় করছে প্রতিটি গাড়িতে পটিয়া থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য ১৩০ টাকা আবার নতুন ব্রিজ থেকে পটিয়া আসার জন্য ১৩০ টাকা।

এ ধরনের অতিরিক্ত টাকা আদায় বিষয় নিয়ে কয়েকজন গাড়ির মালিক ও চালক শ্রমিক প্রতিবাদ করার কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আন্তজেলা বিলাসী কোস্টার/চেয়ার কোচ মালিক সমিতি নামের এ সংগঠনটি দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত কোন নিবার্চন হয়নি। তবে এ সমিতিতে বেশকয়েকজন পরিবহন সেক্টরের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। গত ০৬/১২/২০২০ইং তারিখে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আন্তজেলা বিলাসী কোস্টার/চেয়ার কোচ মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি অবগতিতে জানানো হয় পটিয়া পৌরসভা টার্মিনাল ইজরা ফিস ৩০ টাকা, শ্রমিক ইউনিয়ন লেভি ৪০টাকা, লাইনম্যান খরচ ২০ টাকা, চেকার খরচ ১০ টাকা, টার্মিনাল শৃঙ্খলা কমিটি ১০ টাকা ও যৌথ কমিটি খরচ ২০ টাকা। মোট ১৩০ টাকা সমিতির সার্ভিস চার্জ আদায় করার নির্দেশনা দেন। চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে বৈধ গাড়ি ৮০টি ও অবৈধ গাড়ি ১২০টি চলাচল করছে। এর মধ্যে অবৈধ প্রতিটি গাড়ি থেকে প্রতিমাসে প্রাশাসনের নামে কর্তৃপক্ষ ৩ হাজার টাকা আদায় করেন বলে সূত্রে জানাযায়।

তার পাশাপাশি অভিযোগ রয়েছে, মহাসড়কে নিষিদ্ধ তিন চাকার গাড়ি সিএনজি, নাচিমম অটোরিকশাচালক ও মালিকরা মাসিক আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ থেকে টোকেন নিয়ে যানবাহন মহাসড়কে চলাচল করার অভিযোগ রয়েছে শ্রমিকদের। এই টাকার একাংশ ট্রাফিক পুলিশ ও ফাঁড়ি পুলিশ পেয়ে থাকে। তার ধারাবাহিকতায় মহাসড়কের ছোট-বড় ট্রাক, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকেও পুলিশ ও পরিবহনের চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের চাঁদাবাজি চলে। প্রকাশ্যেই পরিবহন শ্রমিক ও চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। দেখলেই পুলিশ মামলা করে। তবে এই মামলা অনেকটা লোক-দেখানো। তলে তলে পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করেই তিন চাকার গাড়িগুলো মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়ায়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নানা পয়েন্টে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এ সড়কে সক্রিয় চাঁদাবাজদের একাধিক সিন্ডিকেট। এদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন যানবাহনের চালকরা। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ সদস্য ও পরিবহন শ্রমিকরা মিলে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পরস্পরের যোগসাজশে কৌশলে সড়ক-মহাসড়কে চলছে টাকার খেলা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ বাস-মিনি বাস মালিক সমিতি সাধারন সম্পাদক হাজী মো: ইউনুছ সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে কয়েক হাজার ছোট-বড় অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এতে বাস মালিক সমিতি’র নামে কোন চাঁদা নেওয়া হয় না। কে বা কাহারা এই ধরনের কাজে জড়িতেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানান। তবে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বাস থেকে সার্ভিস চার্জ নেওয়া হয়, তবে কোন অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না বলে তিনি জানান।  

এবিএন/সেলিম চৌধুরী/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ