স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বুয়েটে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:২৫

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বুয়েট কাউন্সিল ভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার প্রধান অতিথি ও বুয়েটের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খাঁন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, আমাদের দেশপ্রেম আছে, সেটাকে যদি কাজে না লাগাই তাহলে হবে না। আমাদের বুয়েটের ওপর যে আস্থা আছে, সেটাকে যদি কাজে না লাগাই বা কোনো কাজে ব্যবহার না করি, তা হতে পারে না। আমাদের প্রযুক্তি আছে, আমরা গবেষণা করি, জ্ঞান তৈরি করি। সেটাকে কাজে লাগাতে হবে, আমাদের যা আছে তা ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা যেকোনো কাজ করতে পারি। আমাদের শক্তি আছে, বুদ্ধি আছে, মেধা আছে। কাজেই আমাদের দক্ষতা, প্রযুক্তির প্রসার ঘটানো উচিত। আমাদের মেধা দিয়ে যাতে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে পারি, আজকের দিনে আমাদের এই প্রত্যয় হওয়া উচিত।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মাঠে পরিচালিত গণহত্যার ভিডিওচিত্র ধারণকারী বুয়েটের অধ্যাপক ড. নূরুল উলার অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, নূরুল উলা স্যারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে আমাদের কিছু একটা করা উচিত। সেটা হতে পারে নূরুল উলা স্যার যে ল্যাবরেটরিতে কাজ করতেন, সেটা উনার নামে নামকরণ করা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবন উনার নামে নামকরণ করা কিংবা নূরুল উলা স্যারের নামে স্কলারশিপ চালু করা। তাছাড়া, উনার নামে কোনো কিছু করা যায় কিনা সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো যেতে পারে।

উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষকদের ভালোবাসতেন। তিনি বুয়েটের প্রথম সমাবর্তনে এসেছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স করে দিয়েছিলেন। বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কী রকম সম্পর্ক ছিল তা আমরা নূরুল উলার সঙ্গে সম্পর্ক দেখেই বুঝতে পারি। বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষক বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন ছিল। তিনি নূরুল উলাকে ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে আবদার করেছিলেন। আর নূরুল উলা মাত্র ৯ দিনে গোটা বাংলাদেশ কাভার করে এমন একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিয়েছিলেন।

অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার আরও বলেন, অধ্যাপক নূরুল উলা জগন্নাথ হলের গণহত্যার ভিডিওচিত্র ধারণ করেছিলেন। তার এ কাজটি মুক্তিযুদ্ধের একটি দলিল। এ ভিডিও চিত্রটি মুক্তিযুদ্ধের একটি দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এজন্য অধ্যাপক নূরুল উলা এবং তার কাজের স্বীকৃতি প্রয়োজন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুয়েটের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খাঁন বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এত বর্ণাঢ্য ইতিহাস, আমাদের চর্চার অভাবে হারিয়ে যাবে, তা হতে পারে না।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মাঠে গণহত্যার কিছু দুর্লভ ভিডিওচিত্র ধারণকারী বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক ড. নূরুল উলার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, আজকের এ স্বাধীনতা দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই নূরুল উলা স্যারের অবদানের কথা বলি আর স্বাধীনতার মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক অর্জনের কথা বলি। যা বলি না কেন সবকিছুকেই যদি সমুন্নত রাখতে চাই তাহলে আমাদের কিছু বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ধরনের সংগঠন আছে। সেসব সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন দিবস যেমন: স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় শোক দিবসে সুর্নিদিষ্ট কিছু কার্যক্রম দেখতে চাই। কারণ, একটি কথা বলা হয়, যখন আপনি সংস্কৃতি চর্চা থেকে দূরে সরে যাবেন তখন অপসংস্কৃতি, অপ দিয়ে যা কিছু আছে সবকিছু সেখানে আস্তে আস্তে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ে গ্রাস করে। আমি আমাদের এ ক্যাম্পাসে এসব জাতীয় প্রোগ্রাম দেখতে চাই। কেন এখানে দুই দিনব্যাপী স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হবে না? কেন এখানে দুই দিনব্যাপী বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান হবে না? মুক্তিযুদ্ধসহ আমাদের এত বর্ণাঢ্য ইতিহাস, আমাদের চর্চার অভাবে তা হারিয়ে যাবে, তা হতে পারে না।

সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার সাব্বির আহমেদ বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে অবদান রেখেছেন। কিন্তু, ড. নূরুল উলা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে ভিডিও করেছেন সেটা আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। বুয়েটের প্রযুক্তি কাজে লগিয়ে এআই ব্যবহার করে এ ডকুমেন্টকে আরও আপডেট করা যেতে পারে। স্বাধীনতার এসব দলিলসমূহ সংরক্ষণ করতে হবে অন্যথায় ইতিহাস বিকৃতি ঘটতে পারে।

সভায় বুয়েটের শিক্ষক ড. নূরুল উলার ধারণকৃত ভিডিও যেটি এনবিসি নিউজে প্রকাশ করা হয়েছিল সেটি প্রদর্শন করা হয়। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ড. নূরুল উলার সাক্ষাৎকার সম্বলিত একটি লিফলেট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।

বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বুয়েটের সিন্ডিকেট সদস্য, ডিন, বিভাগীয় প্রধান, ইনস্টিটিউট, পরিদপ্তর ও দপ্তরের পরিচালক, হল প্রভোস্ট, শিক্ষকবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ