আজকের শিরোনাম :

রাজধানীর যেসব এলাকায় উষ্ণতা বেশি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:০৬

প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে দেশ। ঢাকায়ও বেড়েছে তাপমাত্রার পারদ। জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে রাজধানী তাপমাত্রার বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকায় তাপমাত্রা অনুভূত হয় অনেক বেশি ।

রাজধানীর শাহবাগ, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উষ্ণতার মাত্রা সবচেয়ে কম। এসব এলাকায় বসবাসকারীরা এই গ্রীষ্মে তুলনামূলক কম বিপদে আছেন। রাজধানীর সবচেয়ে উষ্ণ এলাকা এখন কামরাঙ্গীরচর ও আদাবর। এ ছাড়া ধানমন্ডি এলাকায়ও উষ্ণতার মাত্রা তীব্র হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে ২৪ এপ্রিল প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তাপমাত্রা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, দরিদ্র মানুষের উপস্থিতি এবং ঘনবসতির পরিমাণ ও বস্তির সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।

সমীক্ষা অনুযায়ী, উষ্ণতার বিপদে থাকা এলাকাগুলো হচ্ছে কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, গাবতলী, গোড়ান, বাসাবো, টঙ্গী, শহীদনগর, বাবুবাজার, জুরাইন, হাজারীবাগ, পোস্তগোলা, যাত্রাবাড়ী, তেজকুনীপাড়া, নাখালপাড়া, সায়েদাবাদ, কুর্মিটোলা, আজমপুর, কামারপাড়া, মোহাম্মদপুর, আদাবর ও মহাখালী। গ্রীষ্মের পুরো সময়জুড়ে এসব এলাকা তাপপ্রবাহের বিপদে থাকছে।

তবে শাহবাগ, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় উষ্ণতার বিপদ কম। এমনকি কম ঝুঁকির অন্য এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তরখান, খিলক্ষেত ও ডেমরা। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কামরাঙ্গীরচর ও আদাবরের তাপমাত্রা এতটাই বেশি যে, সেখানে ঘরের বাইরে বের হয়ে অল্প সময় অবস্থান করলেই নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এসব এলাকার রিকশাচালক, ভ্যানচালক, হকার, নির্মাণশ্রমিক ও নিম্নআয়ের মানুষেরা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম কাজ করতে পারছেন। দাবদাহের কারণে রোগবালাই বেড়ে দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকার মধ্যে মতিঝিল, ফার্মগেট, মহাখালী, কারওয়ান বাজার ও গুলশান এলাকায় উষ্ণতা মাত্রাতিরিক্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। কিন্তু এসব এলাকার বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহারের কারণে ভেতরে অবস্থান করা মানুষ কম ঝুঁকিতে আছেন। তবে ভবনগুলোর বাইরে বা সড়ক এবং উন্মুক্ত স্থানে উষ্ণতা আরও বেড়ে যাচ্ছে এসব ভবনের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কারণে।

নগরবিদ ও পরিবেশবিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর ৯০ শতাংশ এলাকা গ্রীষ্মকালের প্রায় পুরোটা সময় উষ্ণ বা তাপীয় দ্বীপে পরিণত হচ্ছে। ঢাকার পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা উত্তরা, মিরপুর ও ধানমন্ডিতেও একই ধরনের উষ্ণতার বিপদ তৈরি হয়েছে। অল্প জায়গায় বিপুলসংখ্যক মানুষের বসতি, অতিমাত্রায় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার, গাছপালা ও জলাভূমি না থাকা এবং রাজধানী শহরের বেশির ভাগ জায়গা কংক্রিটের স্থাপনা দিয়ে আচ্ছাদিত হয়ে যাওয়ার কারণে অতি উষ্ণতার ঝুঁকি বছর বছর বাড়ছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঢাকার যেখানে গাছপালা ও জলাভূমি কম; সেখানে বৃক্ষ ও জলাভূমি আছে এমন এলাকার চেয়ে তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি আমাদের অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বাতাস সঞ্চালন না হওয়া, সবুজ নিধন হওয়ার ফলে প্রতিবছর ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সূর্যকিরণের সময় বেড়েছে। প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা আমরা সূর্যকিরণ পাচ্ছি। বায়ুপ্রবাহ কম। এ জন্য প্রায় সারাদেশেই তাপপ্রবাহ বিদ্যমান আছে। এর মধ্যে আবার বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে তাপমাত্রা অল্প কমলেও গরমের অনুভূতি একই রকম আছে।

এদিকে আজ সোমবার সকাল ৯টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।


 

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ