আজকের শিরোনাম :

কাউকে সুবিধা দিতে নয়, আইনের ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ : ইসি আলমগীর

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩, ১৭:৫৪ | আপডেট : ০৪ জুন ২০২৩, ১৮:০৩

কাউকে সুবিধা দেওয়ার জন্য কিংবা কাউকে অসুবিধায় ফেলার জন্য নয়, আইন যেভাবে বলেছে সেভাবে আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। আইনের বাইরে কাউকে দেখার বা তাকানোর সুযোগ নেই বলে মনে করেন তিনি।

রোববার (৪ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ইসি আলমগীর বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগলিক সুবিধা এবং স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য আমলে নেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এক গেজেটে ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে। যার ফলে ১০টি সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়।

চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন যে খসড়া সীমানার তালিকা প্রকাশ করেছিল তাতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। হঠাৎ চূড়ান্ত গেজেটে অযাচিতভাবে পরিবর্তন করা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। কমিশনার মো. আলমগীর এসব বিষয় নিয়েও কথা বলেন।

আলমগীর বলেন, যে আবেদনগুলো লজিক্যাল (যৌক্তিক) মনে হয়েছে সেগুলো আমলে নিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের লজিক্যাল কাজ করার ক্ষমতা সংবিধান দিয়েছে, আইন দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সেটাই করেছে।

কাকে পাস আর কাকে ফেল করার জন্য ১০ আসনের সীমানায় পরিবর্তন করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি আসন জাতীয় নির্বাচনের আগে সীমানা নির্ধারণের জন্য খসড়া প্রকাশ করতে হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যে তালিকা ছিল সেটাই আমরা খসড়া হিসেবে প্রকাশ করেছিলাম। এই কমিশনের যে চিন্তা-ভাবনা, তা হলো যেহেতু দু'টি নির্বাচন মোটামুটি এই সীমানায় হয়েছে এবং ১৮ সালে নির্বাচন হয়েছে, এটাকে যতটা সম্ভব পরিবর্তন না করা। ২০১৪ সালে ৪০টি এবং ২০১৮ সালে ২৫টি আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছিল। তার আগে আরও বেশি ছিল। এই সমস্ত পরিবর্তন করলে বেশি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যত কম পরিবর্তন করা যায়, এটা ছিল আমাদের টার্গেট।

আইনে যেহেতু বলা আছে খসড়া প্রকাশ করতে হবে এবং আপত্তি থাকলে তা গ্রহণ করতে হবে- এই কথা জানিয়ে কমিশনার বলেন, আমরা সেটা করতে বাধ্য। এজন্য খসড়া প্রকাশ করার পর আহ্বান করেছিলাম। এই খসড়া পরিবর্তন করার জন্য ৩৮টি আসনের সীমানা পরিবর্তনের জন্য ১২৬টি আবেদন জমা পড়ে। আর ৬০টি আবেদন পড়েছিল, যে খসড়া ঠিক আছে কোনো রকম পরিবর্তন করার দরকার নাই। কমিশন এরপর শুনানি দিয়েছে। সবার শুনানি, যত কথা ছিল, যত কাগজপত্র, ম্যাপ জমা দিয়েছে; আমরা দীর্ঘ সময় ধরে পর্যালোচনা করেছি একাধিক বৈঠকে। আমরা চার দিন শুনানি নিয়েছিলাম।

ইসি বলেন, সবকিছু দেখে যেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেটা হলো সংশ্লিষ্ট এলাকার ভেটাররা কী মনে করেন। কোনো স্থানীয় নির্বাচনে কে আসবেন, কে আসবেন না, কে হয়েছেন, কে হয় নাই, সেটা দেখার বিষয় আমাদের না।

আলমগীর বলেন, আগামী নির্বাচনে কে নমিনেশন পাবেন, কোন দল থেকে সেটা তো আমরা জানি না। অতএব, উনাদের বক্তব্য যতটা না গুরুত্বপূর্ণ তার বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকার ভোটার কী বলেন। ভোটারদের সবাইকে তো আর ডাকা যায় না। যারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থাকেন বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, মেম্বার, কাউন্সিলর এবং উপজেলার যারা চেয়ারম্যান ছিলেন, তারা যে বক্তব্য রেখেছেন সেগুলো এবং বর্তমানে সংসদ সদস্য আছেন তাদের বক্তব্য আমরা শুনেছি। দেখা গেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়ত সংসদ সদস্য এরকম বলছেন, আবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অন্য রকম বলছেন। আমরা দুটোই ধৈর্য সহকারে শুনেছি এবং পর্যালোচনা করেছি।

আইনে ভৌগলিক অখণ্ডতা ও প্রশাসনিক সুবিধা আগে দেখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর জনসংখ্যা যতটুকু সম্ভব আমলে নিতে হবে। জনসংখ্যাকে আগেও প্রাধান্য দেওয়া সম্ভব হয়নি, এখনো হয়নি। কেননা জনসংখ্যা যদি আমরা আমলে নিতে যাই তাহলে অনেক জেলায় আসন আরও কমে যাবে। কোনো জেলায় একটা আসন হয়ে যাবে। আমরা এটা করি না। সেই ভিত্তিতে আমরা পাঁচটা আসনে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই পাঁচটা আসনের কারণে বাকি পাঁচটাতে পরিবর্তন এসেছে।

ইউনিয়নভিত্তিক ভৌগলিক অখণ্ডতা আছে বলে জানান মো. আলমগীর। পৌরসভা, সিটিতে ওয়ার্ডভিত্তিক ভাগ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

১২৬টি আবেদনের মধ্যে ৮৪টি কুমিল্লা থেকে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে অনেক পড়েছে। এই হিসেবে অনেক মনে হয়েছে। বেশ কিছু আবেদন ছিল, আসন সংখ্যা বাড়ানো, সে ক্ষমতা তো ইসির নেই। প্রত্যেকটা আসনে কে পক্ষে কে বিপক্ষে বলে সব রেকর্ড করেছি। একেবারে আদালতের রায়ের মতো করে।

বিশেষ ব্যক্তিকে সুবিধা দিতে এটা করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে আমরা চিনি না। কোনো বিশেষ ব্যক্তিরদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখি না, ইন্টারভিউও দিই না। যা হওয়ার শুনানি অনুযায়ী হয়েছে।

আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে অভিযোগ করেছেন তার কাছে নিশ্চয়ই প্রমাণ আছে। তাকে সেই প্রমাণ নিয়ে হাজির হতে হবে আদালতে অথবা দুর্নীতি দমন কমিশনে। প্রমাণের দায়িত্বও তো উনার। অথবা আমাদের কাছেও আনতে পারেন। আমরাও বিষয়টি দেখব।

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ