আজকের শিরোনাম :

নিম্ন আয়ের ৩৭ শতাংশ পরিবার একবেলা না খেয়ে থাকে: সানেম

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩, ১০:০১

গত ছয় মাসে নিম্ন আয়ের পরিবারের মাসিক আয় গড়ে কমেছে; কিন্তু খরচ বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। শুধু খাদ্যে এই খরচ বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এই কারণে একবেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে ৩৭ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবারকে। এ ছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার গ্রহণ করছে ৭১ শতাংশ পরিবার। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য।

গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সানেম জরিপটি প্রকাশ করেছে। জরিপের ফল উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষ কীভাবে মোকাবিলা করছে এবং সামনের দিনগুলোর বিষয়ে তাদের ভাবনা কী, তা বিশদভাবে বোঝার জন্য সানেম নিম্ন আয়ের থানাগুলোর ওপর জরিপ পরিচালনা করেছে। ২০২৩ সালের ৯ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে ১৬০০ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাদেশের আটটি বিভাগীয় জেলা ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।

জরিপের ফল তুলে ধরে ড. সেলিম রায়হান বলেন, ব্যয় বাড়ার বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করছেন—এমন প্রশ্ন রাখা হয় সাধারণ মানুষের কাছে। জবাবে ৯০ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার বলেছে, তারা তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছে। ধার করে চলছে ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ বলেছে, তারা নন-ফুড আইটেমের খরচ কমিয়ে এনেছে। সঞ্চয় করার সুযোগ কমিয়ে এনেছে ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ওভারটাইম কাজ করছে ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ আর ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ তাদের সঞ্চয় যা ছিল তা থেকে অতিরিক্ত খরচ করছে।

সানেমের জরিপে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার খরচ ১৩ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী আয় তো বাড়েইনি, বরং কমেছে। জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আছে ৪০ শতাংশ পরিবার। এর মধ্যে বেশিরভাগ আছে টিসিবির কার্ডধারী। তবে টিসিবির কার্যক্রম গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি। জরিপে আরও বলা হয়, প্রয়োজনের তুলনায় খাবার কম খাচ্ছে বলে মনে করে ৭১ শতাংশ পরিবার। জরিপে আরও বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে এই ১৬০০ পরিবারের মাসিক আয় গড়ে ৫ টাকা কমে ১৪ হাজার ২৫ টাকা হয়েছে। কিন্তু খরচ ১৩ শতাংশ বেড়ে ১৪ হাজার ৫৬৯ টাকা হয়েছে। খাদ্যে এই খরচ বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এর ফলে ৭৪ ভাগ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছে। শহর ও গ্রামের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় খাদ্য পরিবর্তন করেছে ৯৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। গ্রামে সেটা ৮৬ শতাংশ। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ধার করে চলছে শহরের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং গ্রামের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যেও নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যাপকভাবে খরচ কমিয়েছে। পোশাক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। শহরের পরিবারগুলো খাবারের খরচে বেশি কাটছাঁট করছে। গ্রামের মানুষ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে বেশি কাটছাঁট করছে।

ড. সেলিম রায়হান আরও বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষ কেমন আছে—এর জন্য জরিপ না করেও বলা যায়। এই জরিপে যা উঠে এসেছে তা হয়তো অনেকের জানা। তবে নীতিনির্ধারকদের কাছে বিষয়গুলো পেশাগত দায়িত্বের মধ্য দিয়ে তুলে ধরার জন্য এই প্রয়াস। সানেমের গবেষণা অনুযায়ী, সরকারি হিসাবের মূল্যস্ফীতির চেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ এই চাপ বেশি অনুভব করে। তিনি বলেন, আমরা জানি বৈশ্বিকভাবে জ্বালানিসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে দেশের বাজার ব্যবস্থার কিছু সমস্যা তো আছেই। এদিকে দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। সবমিলিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ এখন অনেক বেশি। তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য শুধু গ্লোবাল সমস্যাই দায়ী নয়। অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাও দায়ী। আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় ইমপারফেকশন রয়েছে। আমরা গত কয়েক মাসে ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য দেখেছি। প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হতে হবে।

সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বলেন, ঋণ নেওয়াকে অনেকে উদ্ধার পাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে নিয়েছেন। তবে এসব ঋণে সুদের হার অনেক বেশি। তাতে সুদের দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়তে পারে এসব মানুষ।

সানেমের জরিপে সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ বলেছেন, এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। জরিপে আরও বলা হয়, শুধু একবেলা না খেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যাই বাড়েনি। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে যতটা প্রয়োজন তার চেয়ে অর্ধেক আয় করেন দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা। এ সময় তাদের লিভিং ওয়েজ বা মোটামুটি মানসম্মত জীবনযাপনের জন্য যে আয় দরকার তা বসবাসের এলাকাভেদে ছিল ১৯ থেকে ২৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রকৃত আয় ও ন্যূনতম চাহিদা পূরণে দরকারি অর্থ চাহিদার মধ্যে পার্থক্য ছিল ৫১ থেকে ৬০ শতাংশ।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ