তাজরীন ট্র্যাজেডির এক দশক : আটকে আছে বিচারকাজ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৪০

রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এক দশক পেরিয়ে গেলেও কেবল সাক্ষ্য গ্রহণেই থমকে আছে বিচারকাজ। মামলার ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১১ জন।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে মোট ১১৭ জন পোশাক শ্রমিক নিহত ও ২০০ জনের অধিক আহত হন। অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের ১০ বছরেও শেষ হয়নি বিচারকাজ। সাক্ষীরা নির্ধারিত সময়ে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় মামলাটির বিচার থমকে আছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। মামলাটি শেষ করতে আর কত দিন লাগবে তাও জানেন না তারা।

আলোচিত এ মামলাটি বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সর্বশেষ গত ৪ অক্টোবর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ দিন ধার্য ছিল। ওই দিন সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর আদালতে তাজরীন ফ্যাশনস-এর এমডি দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। 

মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত সাত বছরে আলোচিত এ মামলায় ২০১৬ সালে ৫ জন, ২০১৭ সালে দুজন, ২০১৯ ও ২০২১ সালে একজন করে মোট দুজন এবং ২০২২ সালে দুজনসহ সর্বমোট ১১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া ২০১৮ ও ২০২০ সালে কোনো সাক্ষী সাক্ষ্য দেননি।  

সাক্ষী দেওয়ার জন্য বার বার সমন পাঠানোর পরও আদালতে আসছেন না সাক্ষীরা। তাদের আদালতে হাজির করতে পরোয়ানা জারি করেও কোনো সুফল মিলছে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ। ইতোমধ্যে ছয় পুলিশসহ ২৬ সাক্ষীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

যে ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তারা হলেন, আশুলিয়া থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক এস.এম. বদরুল আলম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোস্তফা কামাল, আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান, সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী উপ-পরিদর্শক মো. জাহিদুর রহমান, উপ-পরিদর্শক মো. রবিউল আলম ও এএসআই মো. শফিকুল ইসলাম।

বিচার শুরুর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি মামলাটির। সাক্ষ্যগ্রহণে থমকে থাকা মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি চায় আসামিপক্ষ।

আসামিপক্ষের আইনজীবী এ টি এম গোলাম গাউস বলেন, অধিকাংশ তারিখেই মামলার সাক্ষী আদালতে হাজির হচ্ছে না। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় বিচার কাজ এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। সাক্ষী না আসলেও আসামিদের তো নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমরা চাই মামলাটি যেন দ্রুত শেষ হয়। ন্যায়-অন্যায় আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে।

মামলা নিষ্পত্তি করতে আর কত সময় লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ.কে.এম. শাহ নেওয়াজ বলেন, মামলাটি নিষ্পত্তি করতে কত সময় লাগবে তা সঠিক বলা যাচ্ছে না। সাক্ষী আসলে ছয় মাসে বিচারকাজ শেষ করে দেওয়া যাবে। আর সাক্ষী না আসলে আরো দশ বছরেও শেষ হবেনা। তবে আমরা চাই দ্রুততার সাথে মামলার নিষ্পত্তি হোক। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে সাক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের আদালতে হাজির করে যত দ্রুত সম্ভব মামলাটির বিচার শেষ করার চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১৭ পোশাক শ্রমিক মারা যান এবং আহত হন দুই শতাধিক। কারখানাটিতে ১ হাজার ১৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। ৯তলা ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে সর্বাধিক ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় ৫৮ জনকে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকিদের মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় তাদের অশনাক্ত অবস্থায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ