রঙ-তুলির শেষ আঁচড়, মণ্ডপে-মণ্ডপে উৎসবের আমেজ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ অক্টোবর ২০২১, ২১:৩১ | আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২১, ২১:৩৬ | অনলাইন সংস্করণ

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে মণ্ডপগুলোতে; ভক্তকূলের জন্য দেবী দুর্গা আসছেন মর্ত্যলোকে।  রাত পোহালেই দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ, বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।  মণ্ডপগুলোতে তাই ব্যস্ততার শেষ নেই। প্রতিমার গায়ে পড়েছে রঙ-তুলির শেষ আঁচড়; অলংকরণ ও সাজসজ্জা।

করোনো সংক্রমণের মধ্যে গত বছর সীমিত পরিসরে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হলেও চলতি বছর কিছুটা বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের পূজা। ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

আশ্বিন বিদায় বেলায় শিউলি ফুলের মৌ মৌ গন্ধে যখন চারিদিক মাতোয়ারা। কাশফুলে শুভ্রতা ছড়িয়ে তখনই এসেছে শারদীয় দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে তাই এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।  সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী-এবার মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে গত ৬ অক্টোবর। ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। পরদিন ১২ অক্টোবর মহাসপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান। ১৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী এবং ১৪ অক্টোবর মহানবমী পূজা। ১৫ অক্টোবর মহাদশমী বা বিজয়া দশমী হবে। এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।  

পঞ্জিকা অনুযায়ী, দেবী দুর্গা এবার আসছেন ঘোটকে চেপে; ফিরবেন দোলায় চেপে।

রোববার ঢাকেশ্বরী মন্দির, রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্যান্ডেলের সাজসজ্জার পাশাপাশি শেষ মুহূর্তের ধোয়া-মোছার কাজ চলছে: রঙ-তুলিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রংমিস্ত্রিরা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার দেশজুড়ে এক হাজার ৯০৫টি মণ্ডপ বেড়েছে; মোট মণ্ডপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১১৭টি।

ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল জানান, এ বছর ঢাকায় ২৩৮টি মণ্ডপে পূজা হবে; গতবারের তুলনায় মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ৫টি।

দুর্গাপূজা শুরুর একদিন আগে মণ্ডপগুলোতে সাজসাজ রব চলছে; কোথাও কোথাও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।

রোববার দুপুরে রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, বেদিতে তোলার আগে প্রতিমাকে শেষবারের মতো সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পী সুব্রত পাল। প্রতিমার কানে দুল পরিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

দেড় মাস ধরে তিনিসহ ছয়জন কারিগর মিলে এ প্রতিমা তৈরি করেছেন।

রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রমের পূজা কমিটির সভাপতি উৎপল সাহা জানান, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এখন প্রসাদ কেনার কাজ চলছে।

তিনি এলন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় উন্নতি ঘটেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দিয়েছে। আশা করছি, গত বছরের তুলনায় এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অঞ্জলি প্রদানের পর্ব আলাদা আলাদা গ্রুপে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, বেদির চারপাশে ককশিটের তৈরি ফুলে ফুলে সাজিয়ে তুলছেন চারুকলার একদল শিক্ষার্থী; বেদির সামনে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জায় সময় কাটছে তাদের। মণ্ডপের ভেতরে সিলিং ফ্যানের ঝুল পরিষ্কার করছেন শ্রমিকরা; চারপাশে রঙ করায় ব্যস্ত সময় কাটছে রংমিস্ত্রীদের।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে; রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, নারী ও পুরুষ দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা লাইন তৈরির কাজ চলছে।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ