আজকের শিরোনাম :

ঝুপড়ি ঘরের ভাড়ায় আধুনিক ফ্ল্যাটে থাকবে ৩০০ পরিবার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২১, ১২:৩৪

রাজধানীর মিরপুরে বস্তিবাসীদের জন্য ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবনে ৫৩৩টি আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার।

এর মধ্যে প্রথম দফায় ৩০০টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়েছে।

বস্তির ঝুপড়ি ঘরের সমান বা তার চেয়েও কম ভাড়ায় এসব আধুনিক ফ্ল্যাট পাচ্ছেন বস্তিবাসীরা।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের স্ব-অর্থায়নে বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে নির্মিত ভাড়াভিত্তিক ৩০০টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় দফায় বাকি ২৩৩টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হবে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচিত ৩ জন উপকারভোগী বস্তিবাসীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বরাদ্দপত্র তুলে দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

এ সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিভিন্ন সময় বস্তি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সময় বস্তিতে ঘুরার সময় দেখেছি তাদের মানবেতর জীবন।  

তিনি বলেন, বস্তিতেও তাদের ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়। সেখানে রান্নার আলাদা ব্যবস্থা থাকে না, বাথরুমের জন্য লাইন ধরতে হয়, নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এসব ফ্ল্যাট স্বাস্থ্য সম্মত, উন্নত-আধুনিক সুবিধা সম্বলিত। আজকে ফ্ল্যাট পেয়ে বস্তির এ মানুষগুলো সুন্দর জীবন পাবে এটা ভালো লাগছে।

পর্যায়ক্রমে বস্তিবাসীদের জন্য আরও ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট করার পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

দেশের সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না।

একই অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঢাকায় নির্মিত ২৪৭৪টি ফ্ল্যাট সংবলিত ৫টি আবাসন প্রকল্প এবং মাদারীপুরে নির্মিত সমন্বিত অফিস ভবন উদ্বোধন করেন।

এ সময় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের বাউনিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় ছয় বিঘা জমির ওপর ১৪তলার পাঁচটি ভবনে ৫৩৩টি আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রতিটি ভবনে রয়েছে কমিউনিটি হল, দুটি লিফট ও প্রশস্ত সিঁড়ি, অগ্নিনির্বাপণ ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা, ৪০ কেভিএ জেনারেটর ও ২৫০ কেভিএ সাব-স্টেশন, প্রশস্ত ওয়াকওয়ে ও সৌন্দর্যবর্ধনের লাইটিংসহ আধুনিক সুবিধা।

৬২০ থেকে ৭১৯ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি ফ্ল্যাটে রয়েছে দুটি করে বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি ড্রয়িং রুম, বেসিন, রান্নাঘর ও দুটি বাথরুম। ফ্ল্যাটের দুই পাশে ফাঁকা জায়গা। ফ্ল্যাটগুলো টাইলস করা।

প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী আধুনিক এসব ফ্ল্যাটের ভাড়া সাড়ে ৭ হাজার টাকা রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে, এ ভাড়া আরও কমতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাধারণত বস্তিতে টিনের ঝুপড়ি ঘরে এ আকারের একেকটি রুমের ভাড়া ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বস্তিতে অনেকগুলো পরিবারকে অত্যন্ত নিম্নমানের একই টয়লেট, রান্নাঘর ও গোসলখানা ব্যবহার করতে হয়। আধুনিক সুবিধা বলতে কিছুই থাকে বস্তিতে।

তুলনা করলে অর্থের পরিমাণের দিক থেকে বহুতল ভবনে নির্মিত এসব ফ্ল্যাটের ভাড়া বস্তির ঝুপড়ি ঘরের সমান বা কম।

আধুনিক ফ্ল্যাটগুলোর ভাড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ফ্ল্যাটগুলোর ভাড়া আমাদের ডিপিপিতে সাড়ে সাত হাজার টাকা আছে। এখন এটা হয়তো পুর্নবিবেচনা করবে। কমাতে পারে, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে বস্তিতে ভাড়া যে রকম সে রকমই নেওয়া হবে। ওখানে আশপাশে বস্তিতে যারা থাকেন, সেখানে তারা একটা রুম ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন।

৫৩৩টি ফ্ল্যাটের মধ্যে প্রথম দফায় ৩০০টি হস্তান্তরের পর বাকিগুলো কবে নাগাদ হস্তান্তর করা হবে জানতে চাইলে মোস্তফা কামাল বলেন, ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষের মধ্যে বাকি ২৩৩টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামীতে বস্তিবাসীর জন্য এ রকম আরও ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

মঙ্গলবার বস্তিবাসীর মধ্যে ভাড়াভিত্তিক এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রাজধানীর মতিঝিল, আজিমপুর, মিরপুর, মালিবাগ ও তেজগাঁও এলাকায় পাঁচটি আবাসন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।

আজিমপুর সরকারি কলোনিতে রয়েছে ১৭টি ২০তলা ভবনে ১ হাজার ২৯২টি ফ্ল্যাট, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে ২৮৮টি ফ্ল্যাট, মালিবাগে চারটি ২০তলা ভবনে ৪৫৬টি ফ্ল্যাট এবং মতিঝিলে পাঁচটি ২০তলা ভবনে ৩৮০টি ফ্ল্যাট।

এছাড়া উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আটতলার দুটি আবাসিক ভবন। এগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ