আজকের শিরোনাম :

শুরু করছি জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়

  জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

০২ জুন ২০২৪, ১৪:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

মধ্যাহ্ন
১.
হিঙ্গলগঞ্জের মাটিতে পা রেখে পাসপোর্ট অফিসের পাট চুকিয়ে জয়ন্ত চললো বাজারে কার্তিক দত্তর জুতোর দোকানে। দোকানে বসেন তাঁর মেঝভাই অবনী দত্ত। তিনি হঠাৎ জয়ন্তকে দেখে চিনতে পারলেন না। বললেন, 
তুমি কে যেনো! 
- আমাকে চিনলেন না? আমি ঈশ্বরীপুরের কালিকানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে।
- ওহহো, তাইতো! কত্তো বড়ো হয়ে গিয়েছো। তা কোথায় চললে? 
- কোলকাতায়। 
- তা যেয়ো, আজ আমাদের বাড়িতে থেকে যাও। 
- না দাদা, আমাকে আজই কোলকাতায় যেতে হবে। আপনি একটা নৌকো ঠিক করে দিন হাসনাবাদ পর্যন্ত।
- এখন তো নৌকোয় কেউ যায়না। বেশ কিছুদিন হলো অটো চলছে। তুমি অটো স্ট্যান্ডে গেলেই গাড়ি পেয়ে যাবে। মাঝে কাটাখালিতে নেমে খেয়া পার হয়ে ওপারে গিয়ে হাসনাবাদের অটোও পেয়ে যাবে। তুমি দুপুরের খাবার খেয়েছো? 
- না, এখন কিছু খাবোনা। ক্ষিধে নেই। 
- ঠিক আছে, অন্ততপক্ষে একটু মিষ্টিমুখ করো। 
এই বলে পাশের মিষ্টির দোকানের দিকে মুখ তুলে বললেন,
দুলাল, চারটে ল্যাংচা আর এক গ্লাস ঘোল পাঠিয়ে দাও- ঘোলের ওপর ননী ভাসে যেনো! 
জয়ন্ত শশব্যস্তে বলে উঠলো, 
দাদা, এতো মিষ্টি!
- আরে, দুপুরে কোথায় খাবে তার ঠিক নেই ! আর লম্বা জার্নিতে ঘোল খেলে শরীরটা ঠান্ডা থাকবে। 
- মেজদা, হাসনাবাদ থেকে দুপুরের ট্রেন ক'টায়, জানেন? 
- ট্রেন?
- হ্যাঁ, মার্টিন ট্রেন। 
- সেই ট্রেন তো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তোমার দাদু স্যার বীরেন গভর্ণমেন্টের ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের কাছে তাঁর এই ট্রেন কোম্পানি দিয়ে দিয়েছেন। এখন গভর্ণমেন্ট এটা অধিগ্রহণ করেছে। এর নাম হয়েছে- ইস্টার্ন রেলওয়ে। এখন সেখানে ব্রডগেজ লাইন বসানোর কাজ চলছে।
জয়ন্তর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এই ন্যারো গেজের লাইনে ঝিকঝিক শব্দ তুলে ট্রেনযাত্রার ছবি এখনও তার স্মৃতিতে ভাসছে। মিষ্টি আর ঘোল খাওয়ার পরে কার্তিক দত্তর ভাই একটা প্যাকেট জয়ন্তর হাতে দিয়ে বললেন,
এটা রাখো। এতে একজোড়া ফ্লেক্সের স্পঞ্জ স্যান্ডেল আর মহেন্দ্র দত্তর ভাঁজকরা ছাতা আছে- নতুন বেরিয়েছে। জার্ণিতে কাজে লাগবে। 
জয়ন্ত খুশী হলো। সে বিদায় জানিয়ে অটো স্ট্যান্ডে গিয়ে উঠে পড়লো গাড়িতে। অটো চলতে লাগলো। কাটাখালিতে নেমে নৌকোতে খাল পার হয়ে ওপারে উঠে হাসনাবাদের অটো ধরলো। কিছুক্ষণ চলে হাসনাবাদের নদী পার হয়ে ওপারে গিয়ে শ্যামবাজারের বাসে চেপে বসলো। এই প্রথম সে মুখ বোঁচা বাস দেখলো। চমৎকার- ভেতরে অনেক জায়গা। 
বাস চলতে লাগলো। টাকী, বশিরহাট পেরিয়ে দেগঙ্গা, তারপরে ধানকুড়িয়া, বারাসাত পেরিয়ে বাস চলতে লাগলো দমদম হয়ে কোলকাতার দিকে। পথে ধানকুড়িয়া পার হতে পুরোনো রেল স্টেশন গাইন গার্ডেন পেরোতেই জয়ন্তর মনে পড়লো আগেকার কথা। সে শুনেছে, দূর্গের মতো এই বাড়িতেই দূর্গেশনন্দিনী ছাড়া অনেক সিনেমারই শুটিং হয়েছে। এখন এই প্রাসাদটিকে তার খুব একা মনে হলো, কেমন যেনো নিস্তব্ধ- প্রাণ নেই। শুধুমাত্র ইটের গাঁথুনি! 
একে একে বারাসাত, দমদম পেরিয়ে শ্যামবাজারে এসে থামলো মুখ-বোঁচা বাসটা। শ্যামবাজারের মোড়ে এসে জয়ন্তর নাকে এক অজানা অথচ মজার গন্ধ এলো। অনেকটা তেলেভাজা, ঘুগনি, ফুচকা আর গম ভাঙ্গানো কলের মিলিত গন্ধ! এই গন্ধ নাকে আসতেই তার খুব ক্ষিধে পেয়ে গেলো। সে চারিদিকে চেয়ে দেখলো, শ্যামবাজারের পূব-উত্তর কোণায় একটা বড়ো রেস্টুরেন্ট। নাম- ক্যালকাটা কফি হাউজ। সে ব্যাগ হাতে ঢুকে পড়লো। একটা কালো বোর্ডে খড়ি দিয়ে  লেখা খাবারের তালিকা। সাদা পোষাক আর পাগড়ি পরা একজন ওয়েটারকে বললো,
দুই পিস ব্রেড-বাটার।
- আর কিছু?
- না।
- সঙ্গে কফি দেবো?
- দিন। 
কিছুক্ষণ পরে গোলমরিচের গুঁড়ো দেওয়া মাখন মাখানো দুই পিস পাঁউরুটি টোস্ট আর এক পেয়ালা কফি এলো। জয়ন্ত এই প্রথম কফি খেতে চলেছে। স্বাদ একটু তেতো মনে হলেও খেয়ে খুব চাঙ্গা লাগলো- মনটা বেশ ফুরফুরে মনে হলো। 
শ্যামবাজার মোড় থেকে হাওড়া স্টেশনের বাস ধরে বিবেকানন্দ রোড, স্ট্র‍্যান্ড রোড, হাওড়া ব্রিজ পার হয়ে যখন হাওড়া স্টেশনে পৌঁছলো, তখন সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত। সেখান থেকে ৫৪ নম্বর বাসে উঠে হাওড়া ময়দান পেরিয়ে নীলমণি মল্লিক লেন স্টপেজে নেমে ক্লান্ত পায়ে খুঁজে পেলো ৯/বি নাম্বার সাঁটানো বাড়িটি। কয়েকবার মেইন গেটের কড়া নাড়তে বেরিয়ে এলো ছোটদি- কল্পনা। সে অবাক হয়ে বললো, 
খোকন-  তুই!
- হ্যাঁ, ছোটদি। 
- আয় আয়, ভেতরে আয়। মুখটা শুকিয়ে গেছে! সারাদিন কিছু খাসনি?
- হ্যাঁ, শামবাজারে হালকা কিছু খেয়ে নিয়েছি। এখন আর  কিছুই খাবোনা। আমি খুবই ক্লান্ত রে, একটা বিছানা পেতে দে, আমি একটু ঘুমোবো। 

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ