রাশিয়ার শুদ্ধতম কবি আলেকজান্ডার ব্লকের জন্মদিন আজ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৩২
রাশিয়ার গীতিকবি আলেকজান্ডার ব্লককে বলা হয় রুশ কবিতার রুপালি যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবি। তার কাব্যিক প্রেরণা ছিল স্বাভাবিক, সহজাত। নিত্যদিনের মামুলি বিষয় ও ঘটনা থেকেও তিনি স্বর্গীয় ও অপার্থিব চিত্রকল্প তৈরি করতে পারতেন। তার পরিণত কবিতাগুলোর ভিত্তি হিসেবে এসেছে প্লেটোর তত্ত্বের আদর্শ সৌন্দর্য এবং নষ্ট শিল্পায়নের হতাশাজনক বাস্তবতার মাঝে বিরাজমান দ্বন্দ্ব।
প্রথম দিকের কবিতার ওপর প্রভাব ফেলে ভ্লাদিমির সরোভিয়েভের দর্শন ও ফিওদর তিইউতশেভ ও আফানাসি ফেতের কবিতা। ব্লকের প্রথম দিকের কবিতা প্রধানত নিবেদন করা হয়েছে তার আদর্শ নারীকে।
কবিতাগুলোতে অনেক প্রতীকের ব্যবহার করা হয়েছে। সেগুলোতে মরমিবাদের চিত্রকল্পও আছে। চারপাশের জগতের প্রতি কবির ইমপ্রেশনিস্টিক দৃষ্টির প্রতিফলন দেখা যায় এই সময়ের কবিতায়। তিনি ছন্দ, সংগীত ও শব্দের ওপর অনেক গুরুত্ব দিতেন। তাঁর পরবর্তী পর্বের কবিতাগুলো আরেকটু আলাদা; বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে এসেছেন কবিতাকে। দৈনন্দিন জীবনের চিত্র, বিপ্লবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়, মানুষের মনস্তত্ত্ব, বিয়োগান্ত ভালোবাসা এই সব।
বিশ শতকের শুরুতে যেসব কবিতা প্রকাশ করেন, সেগুলোতে এ রকম চিত্র পাওয়া যায়। ‘অসাবধান আনন্দ’, ‘তুষারের মুখোশ’, ‘ফায়না’, ‘তুষারে ঢাকা মাটি’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা আগের কবিতার চেয়ে বেশি মাত্রায় রাশিয়ার সমসাময়িক বাস্তবতার কথা বলে। এই সময়ের মধ্যে প্রতীকের ব্যবহারের দিক থেকে তিনি রুশ কবিদের প্রথম কাতারে চলে আসেন। তবে এ প্রসঙ্গে পাঠক-সমালোচকদের কারো কারো মনে হয়, তিনি প্রথম কাব্যগ্রন্থের মধ্যে যেমন উজ্জ্বল প্রতিশ্রুতি দেখান, তেমন সম্ভাবনার প্রমাণ পরের এসব কাব্যগ্রন্থে নেই মানে কিছুটা ঘাটতি আছে।
বিশ শতকের প্রথম দশ বছর পার করার পর প্রকাশ করা কবিতাগুলোতে রাশিয়া সম্পর্কে তাঁর চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করেন। রাশিয়ার অতীত, ভবিষ্যৎ, রাশিয়ার ফেলে আসা পদচিহ্ন, সমকালে রাশিয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো এসেছে এই পর্বের কবিতায়। ছন্দের অসমান স্পন্দন তৈরি করেন তখনকার কবিতায়। ১৯১৭ সালের বিপ্লবের আগে ব্লক ডায়েরিতে লেখেন, ‘একটা বিশাল কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তবে ঘটনাটা আসলে কী—আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি না।’ তখন তাঁর কবিতা এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রবন্ধে রাশিয়া নিয়ে তাঁর চিন্তার প্রকাশ দেখা যায়।
‘নিশিকাল’, ‘রাশিয়াবিষয়ক কবিতা’, ‘মাতৃভূমি’ এবং মহাকাব্য ‘উচিত শাস্তি’ এই সময় প্রকাশ করেন। ১৯০৫ সালের বিপ্লবকে ব্লক বেশ উত্সাহের সঙ্গেই গ্রহণ করেন। বিশাল ঘটনার আগমন সম্পর্কে তাঁর চিন্তায় যে আবহটা ছিল, তিনি মনে করেছিলেন অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে সেটার সর্বশেষ সমাধান আসবে। ১৯২১ সালে তিনি রাশিয়ার বিপ্লবের কুহক থেকে বেরিয়ে আসেন। পরের তিন বছর তিনি আর কবিতা লেখেননি।
তিনি ম্যাক্সিম গোর্কিকে বলেন, মানুষের প্রজ্ঞার প্রতি তার যে বিশ্বাস ছিল, সেটা শেষ হয়ে গেছে। এরপর তিনি কেন কবিতা লিখতে পারছেন না, তার কারণ ব্যাখ্যা করে বন্ধু কর্নি চুকোভস্কিকে জানান, ‘সব শব্দ শেষ হয়ে গেছে। দেখতে পাচ্ছ না, কোনো শব্দই শোনা যাচ্ছে না?’ কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর চিকিত্সক তাঁকে দেশের বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ৭ অগস্ট ব্লক মারা যান।
এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি
এই বিভাগের আরো সংবাদ