উনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত কবি ‘অক্ষয়কুমার বড়াল’
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২১, ২৩:৩৮
ক্ষয়কুমার বড়াল উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের একজন বিখ্যাত কবি। ১৮৮০ সালে কলকাতার চোরবাগানের এক স্বর্ণব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন অক্ষয়কুমার বড়াল। ছোট বেলায় তার স্কুল জীবন শুরু হয় কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে। হেয়ার স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি বিহারীলাল চক্রবর্তীর কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। বিহারীলাল চক্রবর্তী ছিলেন বাংলা ’গীতিকবিতার’ প্রবর্তক। তারই অণুপ্রেরণায় কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন বড়াল।
‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার ১২৮৯ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ সংখ্যায় তার প্রথম কবিতা ‘রজনীর মৃত্য’ প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বিহারীলালের সাক্ষাৎ ভাবশিষ্য’ নামে আখ্যায়িত করেছিলেন বড়ালকে। অক্ষয়কুমার বড়াল বাংলা গীতিকবিতার ইতিহাসে বড়াল কবি নামে পরিচিত ছিলেন। তার কবিতার মধ্যে ছিল নিসর্গ, সৌন্দর্যবাদ, কল্পনামূলক প্রেম, শোক, নারীপ্রেমের শান্তরস এবং মানববন্দনা। ১৯ জুন ১৯১৯ সালে তিনি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কবি বড়ালের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো প্রদীপ (১৮৮৪), কনকাঞ্জলি (১৮৮৫), ভুল (১৮৮৭), শঙ্খ (১৯১০)’ এষা (১৯১২) প্রভৃতি। কবির অসম্পূর্ণ নাম ‘চণ্ডীদাস’ (১৯১৭)। তার সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে আছে কবি রাজকৃষ্ণ রায়ের কবিতা (১৮৮৭), গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর অশ্রুমালা (১৮৮৭) প্রভৃতি।
মধ্যাহ্নে
একেলা জগত ভুলে,
পরে আছি নদীকূলে
পরেছে নধর বট হেলে ভাঙা তীরে
ঝুরুঝুরু পাতাগুলি কাপিছে সমীরে।
চাতক কাতরে ডাকে, চরে বক নদীবাঁকে
ডাকে কুবো কুবকুব লুকায়ে কোথায়?
গাভী শুয়ে তরুতলে, হংসী ডুবে উঠে জলে
ডিঙাখানি বেঁধে মাঝি ঘরে ফিরে যায়।
নিঝুম মধ্যাহ্নকাল অলস স্বপনজাল
রচিতেছি আনমনে নিরবে বসিয়া।
দূর মাঠ পানে চেয়ে, চেয়ে চেয়ে শুধু চেয়ে
রয়েছি পরিয়া।
হৃদয় এলায়ে পরে, যেন কী স্বপন ভরে
মুদে আসে আঁখিপাতা যেন কী আরামে।
আনমনে চাহি চাহি, কত ভাবি কত গাহি
পড়িছে গভীর শ্বাস, গানের বিরামে।
খসে খসে পরে পাতা, মনে পরে কত গাঁথা
ছায়া ছায়া কত ব্যাথা, ঘুরে ধরাধামে।
নিবেদন
কোথা পাব বাল্মীকির সে উদাত্ত স্বর?
কোথা কালিদাস-কণ্ঠ ষড়জ-মধুর?
কোথা ভবভূতি-ভাষ-গৈরিক-নির্ঝর?
ছিন্ন-কণ্ঠ পিক আমি, মরণ-আতুর।
সে নহে সাবিত্রী, সীতা, দময়ন্তী, সতী,
চিরোজ্জ্বল দেবী-মূর্তি কবিত্ব-মন্দিরে;
লয়ে ক্ষুদ্র সুখ দুঃখ মমতা ভকতি,
ক্ষুদ্র এক বঙ্গনারী দরিদ্র কুটিরে।
নহে কল্পনার লীলা-স্বরগ নরক;
বাস্তব জগৎ এই, মর্মান্তিক ব্যখা।
নহে ছন্দ, ভাব-বন্ধ, বাক্য রসাত্মক;
মানবীর তরে কাঁদি - যাচি না দেবতা।
এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি
এই বিভাগের আরো সংবাদ