আজকের শিরোনাম :

কবি বন্দে আলী মিয়ার প্রয়াণ দিবস আজ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২১, ২৩:৩৬

আমাদের ছোট গায়ে ছোট ছোট ঘর

থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর।

পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই

একসাথে খেলি আর পাঠশালায় যাই।

বিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরিয়েছে অথচ এই কবিতা পড়েনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। কবিতাটি লিখেছিলেন মাটি ও মানুষের কবি বন্দে আলী মিয়া।

গ্রামীণ জীবনের রূপকার এই কবির জন্ম পাবনায়। ১৯০৬ সালে পাবনা শহরতলীর রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা মুন্সী উমেদ আলী মিয়া এবং মাতা নেকজান নেসা। পিতা-মাতার একমাত্র আদরের সন্তান তিনি। তার শৈশব কৈশোর কেটেছে পাবনাতে। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার দিকে যত খেয়াল, তার চেয়ে বেশি ঝোঁক ছবি আঁকার দিকে। কিন্তু তিনি খ্যাতি লাভ করেছেন কবি হিসেবেই।

কবি বন্দে আলী মিয়া ছোটবেলায় বাড়ির কাছেই রাধানগর মজুমদার একাডেমি নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। দীর্ঘ কয়েক বছর পড়ালেখা শেষে ১৯২৩ সালে তিনি এ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমিতে ভর্তি হন। দীর্ঘ চার বছর তিনি সেখানে পড়ালেখা করেন। সে সময়ে কোন মুসলমান শিক্ষার্থী এই চিত্রবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত না, তিনিই ছিলেন একমাত্র মুসলিম শিক্ষার্থী। তার পরে অবশ্য শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন এ একাডেমিতে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯২৭ সালে কবি কৃতিত্বের সঙ্গে আর্ট একাডেমির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। আর্থিক সংকটের কারণে কবির পড়ালেখা বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। তিনি কিছুদিন টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া সাদত কলেজে পড়ালেখা করেছিলেন। সেখানে অধ্যয়ন বেশিদিন না করে আবার কলকাতা পাড়ি জমিয়েছিলেন এবং বিদ্যাসাগর কলেজেও ভর্তি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা কর্পোরেশন পরিচালিত টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন এবং ১৯৩৪ সালে টিচার্স সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

কবি বন্দে আলী মিয়া সব্যসাচী লেখক ছিলেন। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তার ছিল সফল ও স্বাচ্ছন্দ্য পদচারণা। বিভিন্ন লেখক সাহিত্যের নির্দিষ্ট শাখায় খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করলেও সর্বক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর খুব একটা দেখা যায়নি। কিন্তু বন্দে আলী মিয়ার ক্ষেত্রে যে সেটা সম্ভব হয়েছে তা অনায়াসেই বলা যায়। তিনি কাব্য, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সংগীত সকল ক্ষেত্রেই কৃতিত্বের দাবিদার এ কথা নিঃসন্দেহে স্বীকার করেন সবাই।

এছাড়া তিনি শিশু-কিশোরদের জন্য প্রচুর গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার সব লেখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৯ টি কাব্যগ্রন্থ , ১০ টি উপন্যাস , ৩ টি ছোট গল্প , ১১ টি নাটক, এবং সংগীতভিত্তিক ২ টি নাটক। এছাড়া তার জীবনের দিনগুলি  একটি বিশেষ রচনা। কবি বন্দে আলী মিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ময়নামতির চর।

মূলত ময়নামতির চর কাব্যগ্রন্থই তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়। তাছাড়া বাংলা শিশুসাহিত্যের ইতিহাসে কবি বন্দে আলী মিয়ার বইয়ের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। শ্রম, নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও নিরলস সাহিত্য চর্চার জন্য তিনি আমাদের শিশুসাহিত্যে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। কঠিন ও গম্ভীর জিনিসকে সহজ ও সরলভাবে প্রকাশ ও পরিবেশনের জাদু জানতেন তিনি। এবং সেই গুনের স্বীকৃতি ও সম্মান হিসেবে ১৯৬২ সালে শিশুসাহিত্যে তাকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৬৫ সালে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট পুরস্কার পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন সাহিত্য- সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে পুরস্কার ও সম্বর্ধনা জানানো হয় এবং ১৯৮৮ সালে কবিকে মরণোত্তর একুশে এবং ১৯৯০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।

জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি রাজশাহীতে অবস্থান করছিলেন। ১৯৭৯ সালের ১৭ জুন দিনে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। গুণী এই কবি আমাদের সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবেন আজীবন।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ