আজকের শিরোনাম :

বিভিন্ন দেশে শিশুর যেসব নাম রাখা নিষেধ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০১৯, ১৭:২৮

সন্তানের কী নাম রাখা হবে পিতামাতার কাছে সেটি অনেক কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সঠিক নাম বাছাই করে নেওয়া সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর নাম রাখা নিয়ে নানা দেশে নানারকমের রীতি নীতি চালু আছে। এসব রীতি আবহমান কাল ধরেই প্রচলিত। কোন কোন দেশে এবিষয়ে আইনও আছে।

এসব আইনে শিশুর জন্যে কী ধরনের নাম বাছাই করা যাবে না তার কিছু ইঙ্গিতও দেয়া আছে। শুধু কী নাম হবে সেটাই নয়, নাম রাখার কিছু আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াও আছে।

যেমন ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে পিতামাতাকে তাদের সন্তানের জন্মের ৪২ দিনের মধ্যে তার জন্যে একটি নাম নির্ধারণ করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে শিশুর নাম কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধন করা না হলে গুণতে হবে বড় অঙ্কের জরিমানা।

তার মানে হলো ব্রিটিশ রাজপরিবারে নতুন যে শিশু যোগ হয়েছে তার নাম চূড়ান্ত করার জন্যে প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান মের্কেলের হাতে আছে ছ'সপ্তাহ।

এই দম্পতি তাদের পুত্র সন্তানের নাম রেখেছেন আর্চি হ্যারিসন।

ইউরোপের অন্যান্য দেশে অভিভাবকরা নাম চূড়ান্ত করার জন্য আরো লম্বা সময় পেয়ে থাকেন। যেমন সুইডেনে ‌এজন্যে তিন মাস এবং ডেনমার্কে ছ'মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।

অনেক অভিভাবক শিশুর জন্মের আগে থেকেই কিছু কিছু নাম পছন্দ করে রাখেন। জন্মের পর তার মধ্য থেকে একটি নাম চূড়ান্ত করে ফেলেন।

কিন্তু অনেক পরিবারেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ খুব একটা সহজ হয় না। এসময় তাদেরকে নানা ধরনের মানসিক চাপের ভেতর দিয়েও যেতে হয়। আবার কারো কারো কাছে এই কাজটা খুবই সহজ। তারা খুব স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই সন্তানের নাম ঠিক করে ফেলেন।

কী নাম রাখা হবে সেটা নিয়ে অনেক গবেষণা হয় পরিবারে। সদস্যদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা হয়। অনেক পরিবারে ভোটাভুটির মাধ্যমেও নামটি চূড়ান্ত করা হয়।

ব্রিটেনে একটি প্যারেন্টিং ওয়েবসাইট বেবিসেন্টারের সম্পাদক স্যারাহ রেডশো বলেন, সময় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেই নামের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

"এমন নাম রাখবেন না যাতে পরে আপনাকে এ নিয়ে অনুশোচনা করতে হয়। অনেকেই তাড়াহুড়ো করে একটা নাম রেখে দেন, কিন্তু পরে তারা সেই নামটা আর পছন্দ করতে পারেন না" - বলেন তিনি।

তিনি জানান, তার সন্তানের নাম ঠিক করতেও তাদের তিন সপ্তাহের মতো সময় লেগেছে। কারণ তিনি ও তার স্বামী কোন একটি নামের ব্যাপারে একমত হতে পারছিলেন না।

ব্রিটিশ রাজপুত্র: প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের ছেলে 'আর্চি'র প্রথম ছবি

ব্রিটেনে শিশুর নাম রাখার ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা দেওয়া আছে। এই নির্দেশনা বিশ্বের অন্যান্য দেশে রীতিনীতির তুলনায় বেশ উদারই বলা চলে।

জেনারেল রেজিস্টার অফিস শিশুদের নামের নিবন্ধন করে থাকে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী নাম রাখার ব্যাপারে ব্রিটেনে সেরকম কোন বিধি-নিষেধ নেই, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।

যেমন যেসব নাম অন্য কারো জন্যে আক্রমণাত্মক হতে পারে এরকম নাম না রাখার কথা বলা হয়েছে। সেরকম কিছু মনে হলে কর্মকর্তারা ওই নাম নিবন্ধন করার ব্যাপারে অস্বীকৃতিও জানাতে পারেন। কিন্তু তার অর্থ এই না যে যার যা ইচ্ছে মতো শিশুর যে কোন নাম রেখে দিতে পারেন।

যেমন ২০১৬ সালে একটি ঘটনা ঘটেছিল। এক মা তার শিশু কন্যার নাম রাখতে চেয়েছিল সায়ানাইড। এই সায়ানাইড এক ধরনের বিষ। গুলি করে আত্মহত্যার আগে এডলফ হিটলার এই বিষ খেয়েছিলেন।

এরকম ক্ষেত্রে লেডি জাস্টিস কিং বলেছেন, এরকম ঘটনার ক্ষেত্রে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে।

নাম রাখার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের ব্যাপারে সুইডেন বিখ্যাত। দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নষ্ট হতে পারে এরকম কোন রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে দেশটিতে।

নামের বানান ঠিক মতো লেখা হচ্ছে কিনা সেদিকেও নজর রাখা হয় সুইডেনে। পিতামাতার জন্যে আছে নামের একটি তালিকা। সেখান থেকে একটি নাম বেছে নিয়ে ওই নামটি রাখার অনুমতি নিতে হয় সরকার ও স্থানীয় গির্জার কাছ থেকে।

এমন কোন নাম রাখা যাবে না যে নাম থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় না যে শিশুটি ছেলে নাকি মেয়ে। সুইডেনে প্রত্যেকটি নামের জন্যে একটি লিঙ্গও নির্ধারণ করা আছে।

জার্মানিতেও একই আইন প্রচলিত। সেখানে শিশুর এমন নাম রাখতে হবে যা থেকে ছেলে না মেয়ে সেটি স্পষ্ট বোঝা যায়।

স্থানীয় নিবন্ধন অফিস স্টান্ডেসাম্ট থেকেও এই নামের অনুমোদন নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রেও শিশুর নাম রাখার ব্যাপারে পিতামাতা বেশ স্বাধীনতা ভোগ করেন। তবেও সেখানে কিছু বিধি নিষেধ আছে। এব্যাপারে একেক অঙ্গরাজ্যে একেক রীতি নীতি প্রযোজ্য।

কোন কোন রাজ্যে বলা আছে একটি নাম সর্বোচ্চ কতো লম্বা হতে পারে। এমনকি কোথাও কোথাও নামের মধ্যে নম্বর ব্যবহারের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

মিশরে শিশুর জন্মের এক সপ্তাহ পর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার নাম চূড়ান্ত করা হয়।

ওই অনুষ্ঠানে জ্বালানো হয় তিনটি মোমবাতি। একেকটি মোমবাতি একেকটি নামের প্রতিনিধিত্ব করে। এবং শেষ পর্যন্ত যে নামের মোমবাতিটি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে জ্বলে সেই নামটিই বিজয়ী হয়। বিবিসি বাংলা

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ