আজকের শিরোনাম :

মোবাইল জগতে বকেয়া নিয়ে বাক-বিতন্ডা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০১৯, ২১:১২

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দু'টি মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণ এবং রবি'র বিরুদ্ধে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়া না দেয়ার অভিযোগ তুলে সরকার তাদের শাস্তি দেয়ার প্রশ্নে নোটিশ পাঠাচ্ছে।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি'র কর্মকর্তারা বলেছেন, যে বিধিতে এই নোটিশ পাঠানো হবে, তাতে কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের বিষয় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে রয়েছে।

গ্রামীণফোন এখনও সালিশের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাইছে। আর রবি'র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার চূড়ান্ত কোন পদক্ষেপ হিসেবে তাদের নোটিশ দেয়া হলে রবি আদালতে যাবে।

বিটিআরসি দাবি করে আসছে, গ্রামীনফোন এবং রবি, এই দু'টি কোম্পানির কাছে ২০ বছরে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। অডিট করে তারা এটি জানতে পেরেছে।

এর মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছে পাওনা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি।

এই পাওনা আদায়ে চাপ দিতে গিয়ে এর আগে কোম্পানি দু'টির ইন্টারনেটের গতি বা ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। এছাড়া বিটিআরসি তাদের দেয়া অনাপত্তিপত্র বা এনওসি প্রদান বন্ধ করেছিল।

এখন আরও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার জন্য টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার কোম্পানি দু'টিকে নোটিশ দেয়ার সরকারের নির্দেশের কথা বলেছেন।

বিটিআরসি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রেজাউল কাদের বলছিলেন, এখন তাদের কমিশন বৈঠক করে নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে।

"আইন অনুযায়ী শো'কজ করতে হলে বা নোটিশ পাঠাতে হলে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। সরকার সে অনুমোদন দিয়েছে। সেটা এখন বিটিআরসিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এবং সেটা কমিশন মিটিংয়ে উঠবে।"

তিনি আরও বলেছেন, "বকেয়া না দেয়ায় আমরা প্রথমে তাদের ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু গ্রাহকের কথা চিন্তা করে সেই পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হয় নাই।এখন তাদের যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে এনওসি আমরা দিচ্ছি না।"

কোন ধরণের শাস্তি দিতে এই নোটিশ দেয়ার প্রয়োজন হয়- এই প্রশ্নে রেজাউল কাদের বলেছেন, মোবাইল ফোন পরিচালনার সম্পর্কিত যে বিধিতে এই নোটিশ দেয়া হবে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের বিষয় আছে। কিন্তু এর আগে বিভিন্ন ধরণের শাস্তির কথাও বলা আছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

"এটা ধারা অনুযায়ী বলা হবে যে, তুমি যদি পাওনা টাকা না দাও, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।এতে সর্বোচ্চ লাইসেন্স বাতিলের কথা আছে। তারমানে এই নয় যে, সর্বোচ্চ শাস্তিই হবে। নোটিশে তাকে পাওনা পরিশোধের জন্য ৬০দিনের একটা সময় দেয়া হবে। এরপর বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।"

রবি আদালতে যাবে

বকেয়া টাকা নিয়ে বিটিআরসি'র দাবির ব্যাপারে আপত্তি করে আসছে গ্রামীণফোন এবং রবি। বিটিআরসি'র অডিটের পদ্ধতি নিয়েও কোম্পানি দু'টির প্রশ্ন রয়েছে।

তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টাতে একটা সমাধানের ব্যাপারে সরকার এবং বিটিআরসি সেভাবে আগ্রহ দেখায়নি।

সরকার এবং বিটিআরসি নোটিশ পাঠানোর যে কথা বলছে, তাতে সমাধান সম্ভব নয় বলে মোবাইল ফোন কোম্পানি দু'টির কর্মকর্তারা মনে করেন।

রবি'র চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি কর্মকর্তা সাহেদ আলম বলেছেন, এখন নোটিশ পাঠিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলে তারা আদালতের আশ্রয় নেবেন।

"পাবলিক রিকোভারি অ্যাক্ট আছে, সে অনুযায়ী না গিয়ে আপনি প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।প্রথমে আমাদের ব্যান্ডউইথ বন্ধ করা হলো। তারপর ব্যবসায় বিঘ্ন ঘটাতে এনওসি বন্ধ করা হলো।এখন বলছেন, লাইসেন্স তুলে নেয়া হবে। এ ধরণের পদক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে বিনিয়োগ বিরোধী।"

"আমরা খুব চেষ্টা করেছিলাম কোন আইনি ব্যবস্থায় না যাওয়ার জন্য।যাতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়। এক্ষেত্রে সম্ভবত আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে, আমরা যেন আইন ব্যবস্থায় যাই।"

রবি' এবং গ্রামীণ-দু'টি কোম্পানিই এতদিন সালিশের মাধ্যমেও সমাধানের দাবি করে আসছিল।

গ্রামীণফোনের মুখপাত্র মোঃ: হাসান বলেছেন, তারা এখনও সালিশের মাধ্যমে সমাধান চান।

বিটিআরসির হিসেব অনুযায়ী দেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে গ্রামীণের ৭ কোটি ৪৮ লাখ আর রবির ৪ কোটি ৭৭ লাখ গ্রাহক আছে। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ