চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ে নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কেন এত সন্দেহ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:২৬

চীনের বিশাল টেলিকম কোম্পানি হুয়াওয়ে গত কয়েকদিন ধরেই সংবাদ শিরোনাম। কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে কানাডা। তাকে এখন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এই কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির চেষ্টা চলছিল।

কিন্তু চীন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। চীন বলেছে, হুওয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মাং ওয়ানজুকে কানাডায় গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে ঐ কোম্পানির ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চলছে।

মাং ওয়ানঝুউ শুধু হুওয়াওয়ের একজন শীর্ষ নির্বাহীই নন, তিনি একই সঙ্গে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার কন্যা। তার এই গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ এক নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কিছু পশ্চিমা দেশ এরই মধ্যে হুয়াওয়ের সাজ-সরঞ্জাম তাদের দেশের টেলিকম নেটওয়ার্কে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তারা এর কারণ হিসেবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা বলছে।

চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরোধের মূলে আসলে কী? কেন তারা এই কোম্পানি নিয়ে এত সন্দিহান? আসলেই কি এটি পশ্চিমা দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য হুমকি?

হুয়াওয়ে কী করে

হুয়াওয়ে হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানিগুলোর একটি। মূলত মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের যন্ত্রপাতি তৈরি করে এটি। এক্ষেত্রে তাদের আগে মূলত নকিয়া এবং এরিকসনের মতো কোম্পানিরই একচেটিয়া ব্যবসা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে হুয়াওয়ে তাদের ছাড়িয়ে গেছে।

সম্প্রতি নেটওয়ার্কিং যন্ত্রপাতি ছাড়াও হুয়াওয়ে স্মার্টফোনও তৈরি করতে শুরু করেছে। বিশ্বে মোবাইল ফোনের বাজারের ১৫ শতাংশ এরই মধ্যে তাদের দখলে। কেবল মাত্র অ্যাপল এবং স্যামসাং তাদের তুলনায় এগিয়ে আছে।

এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা হচ্ছেন রেন ঝেংফেই। তিনি চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন সাবেক অফিসার। ১৯৮৭ সালে তিনি এই ব্যবসা শুরু করেন। হুয়াওয়ের সদর দফতর চীনের শেনজেনে। এক লাখ আশি হাজার মানুষ এই কোম্পানিতে কাজ করেন। এটির মালিকানা ৮০ হাজার কোম্পানি কর্মীর হাতে।

হুয়াওয়ে নিয়ে উদ্বেগ কেন

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে কোম্পানি প্রতিষ্ঠাতা যেহেতু চীনের সামরিক বাহিনীর লোক ছিল, তাই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি হতে পারে। বিশেষ করে যেভাবে এটি বিশ্ব পরিসরে একটি বিশাল কোম্পানি হিসেবে দাঁড়াচ্ছে।

অনেকে মনে করেন, হুয়াওয়ে যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সব প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণে, তাই এটিকে তারা ইচ্ছে করলে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে বা যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারে। বিশেষ করে যখন কীনা চালকবিহীন গাড়ি থেকে শুরু করে ঘরের ফ্রিজ-টেলিভিশন পর্যন্ত ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে বিশেষ করে উল্লেখ করছে চীনে গত বছর পাশ হওয়া একটি আইনের কথা। এই আইনে চীনের সব কোম্পানিকে দেশটির জাতীয় ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্কের সঙ্গে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।

এই আইনের পর যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড তাদের দেশের স্থানীয় কোম্পানিগুলোর ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

কানাডাও হুয়াওয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পর্যালোচনা করে দেখছে। ব্রিটেন এখনো পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু য্ক্তুরাষ্ট্রের দিক থেকে ব্রিটেনের ওপর চাপ রয়েছে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য।

ব্রিটেন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না

ব্রিটিশ সরকার স্বীকার করেছে যে হুয়াওয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। ব্রিটেনের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার সম্প্রতি হুয়াওয়েকে অনুরোধ করেছে ব্রিটেনের টেলিকম নেটওয়ার্কে যেসব সমস্যা ঝুঁকি তৈরি করছে সেগুলো ঠিক করতে।

ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স সংস্থা এমআই-সিক্সের প্রধান আলেক্স ইয়াংগার সামনে অনেক সিদ্ধান্ত নিবে হবে বলে জানিয়েছেন। কারণ যে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে নিরাপত্তার বিষয়গুলো মনিটর করা অনেক কঠিন হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ