আজকের শিরোনাম :

আগামীকাল বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক হবে সিলেটের

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৪৬

আগামীকাল বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে লড়াই দিয়ে টেস্ট অভিষেক হচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। ঘন্টা বাজিয়ে শুরু হবে ম্যাচটি। তাই ঘন্টার মাধ্যমে দেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যুর তকমা পেতে যাচ্ছে সিলেটের লাক্কাতুরায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। সিলেটের অভিষেক টেস্ট জয় দিয়ে স্মরনীয় করে রাখাই মূল লক্ষ্য হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। পক্ষান্তরে ওয়ানডে সিরিজ হারলেও টেস্টে ঘুড়ে দাঁড়ানোই প্রধান লক্ষ্য স্বাগতিকদের। দু’ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটি শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টায়।

সবুজ চা-বাগান ও পাহাড়ের টিলা দিয়ে ঘেরা দেশের অন্যতম নয়নাভিরাম সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। যে কারো মন জয় করে নেয়ার মত ভেন্যু এটি। টি-২০ ম্যাচ দিয়ে ২০১৪ সালেই সিলেটের অভিষেক ঘটে। তবে আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচ দিয়ে। কিন্তু এখনো ওয়ানডে বা টেস্টের স্বাদ পায়নি এই সুন্দর ভেন্যুটি। অবশেষে আগামীকাল টেস্ট অভিষেক হতে যাচ্ছে সুন্দরে ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। সিলেটের অভিষেকের সাক্ষী হচ্ছে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল।

টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে গেল ২৭ অক্টোবর সিলেটে পৌঁছায় ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয়ী বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে পরের দিনই সিলেটে চলে আসে বাংলাদেশ। সুন্দরের টানেই আগেভাগে সিলেটে চলে আসা মাহমুদুল্লাহ-মুশফিক-মুস্তাফিজদের।
গেল কয়েকদিন টেস্টকে সামনে রেখে ঘাম ঝড়িয়েছে বাংলাদেশ দল। ম্যাচের আগেরদিনও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। মাঠের উত্তর পাশে স্লিপ-গালি পজিশন নিয়ে ফিল্ডিং-এ ব্যস্ত ছিলেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম, ইমরুল কায়েস-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা। আর পূর্ব দিকেই উচুঁ ক্যাচে মোমিনুল হককে শান দিচ্ছিলেন ফিল্ডিং কোচ। তবে দক্ষিণ দিকে ব্যাটিং-বোলিং নিয়ে অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন ওপেনার লিটন দাস, মোহাম্মদ মিথুন, নাজমুল ইসলামরা।

চারটি নতুন মুখ নিয়ে দুই ম্যাচ সিরিজের দল সাজায় বাংলাদেশ। নতুন মুখরা হলেন- ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিথুন, স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু, পেসার খালেদ আহমেদ ও অলরাউন্ডার আরিফুল হক। এদের মধ্যে মিথুন ও আরিফুলের সিরিজের প্রথম টেস্টেই অভিষেকের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ম্যাচের আগের দিনও নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। উইকেটের অবস্থা বুঝে ম্যাচের দিন সকালেই প্রথম টেস্টের একাদশ সাজানো হবে।

চলতি বছর দু’টি সিরিজে চারটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তিনটি হারের সাথে ১টি টেস্ট ড্র করতে পারে বাংলাদেশ। বছরের শুরুতে চট্টগ্রামে শ্রীলংকার সাথে টেস্ট ড্র করে বাংলাদেশ। এরপর ওই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে লংকানদের কাছে হারে টাইগাররা। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দু’টি টেস্টেই হারে বাংলাদেশ। এমন হারের পেছনে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ছিলো চোখে পড়ার মত। অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টে দু’ইনিংসে ৪৩ ও ১৪৪ রন করে বাংলাদেশ। এরপর জ্যামাইকা টেস্টের দুই ইনিংসে ১৪৯ ও ১৬৮ রান করে টাইগাররা। দু’টি ম্যাচেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আঙ্গুলের ইনজুরির কারণে খেলতে পারছেন না সাকিব। তাই অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
বছরের শুরুতে সাকিবের অনুপস্থিতিতে দেশের মাটিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট ও টি-২০ সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। তার নেতৃত্বে শ্রীলংকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। আর টি-২০ সিরিজ হারে ২-০ ব্যবধানে। সিলেটের এই ভেন্যুতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিলো একটি টি-২০। ৭৫ রানের ব্যবধানে ঐ টি-২০টি হারে বাংলাদেশ। সেটিই ছিলো সিলেটের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

এবারও সাকিবকে ছাড়া সিলেটে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলতে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া থাকছেন না ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবালও। তাই দলের হাল ধরতে হবে মুশফিকুর রহিম, অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, মোমিনুল হক, লিটন দাস, মেহেদি মিরাজ, মুস্তাফিজদের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ স্বপ্নের মত কেটেছে ইমরুলের। দু’টি সেঞ্চুরিতে ৩৪৯ রান করেছেন তিনি। তাই সিরিজ সেরা ছিলেন ইমরুল। ওয়ানডে সিরিজের ফর্ম টেস্টেও অব্যাহত রাখার লক্ষ্য থাকবে ইমরুলের। ব্যাট হাতে ফর্মে ছিলেন লিটন, মিথুন ও মুশফিকুর।

তবে ওয়ানডে সিরিজে নিজেকে প্রমান করতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। অবশ্য সিরিজে মাত্র একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পান তিনি। ওই ম্যাচে শূন্য হাতে ফিরেন মাহমুদুল্লাহ। ব্যাট হাতে ফর্মে আছেন মোমিনুল। চলমান জাতীয় লিগে চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে অপরাজিত ১১১ রান করেন তিনি। বোলিং-এ বাংলাদেশের পক্ষে সেরা ছিলেন অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ২ ম্যাচে ৪ উইকেট নেন তিনি। এছাড়া টেস্ট দলে থাকা বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুলেরও শিকার ছিলো ৪ উইকেট।

ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর টেস্ট লড়াইয়ে নামার আগে একটি তিনদিনের প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় জিম্বাবুয়ে। কিন্তু ওই অনুশীলন ম্যাচে নিজেদের ভালোভাবে মেলে ধরতে পারেনি তারা। কারন বৃষ্টির কারনে সর্বমোট ৬৬ ওভার খেলা হয়। ফলে ম্যাচটি ড্র হয়। অনুশীলন ম্যাচ শেষ করে গতকালই সিলেটে আসে জিম্বাবুয়ে। আজ দুপুরের পর অনুশীলন করেছে তারা। ব্যাটিং-বোলিং দিয়েই নিজেদের অনুশীলন পর্ব শুরু করে সফরকারীরা।

তবে ব্যাকফুটে থেকেই টেস্ট সিরিজ শুরু করতে হবে জিম্বাবুয়েকে। সদ্যই বাংলাদেশের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারের ক্ষত রয়েছে তাদের। এ ছাড়া এই ফরম্যাটে ২০১৩ সালের পর কোন ম্যাচই জিতেনি জিম্বাবুয়ে। সাতটি টেস্ট সিরিজ খেলে সবক’টিতেই হেরেছে তারা। এর মধ্যে বাংলাদেশের কাছে একটি সিরিজ। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় জিম্বাবুয়ে। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট লড়াইয়ে জয়ের পাল্লা ভারী জিম্বাবুয়েরই। ১৪ ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে ৬টিতে জিতে তারা। ৫টি জিতে বাংলাদেশ। 
তাই এই স্মৃতি কতটা উৎসাহী করে তুলতে পারে মাসাকাদজা-টেইলরদের সেটিই এখন দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ দল : মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মোমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ চৌধুরি রাহি, শফিউল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মিথুন, খালেদ আহমেদ ও নাজমুল ইসলাম অপু।

জিম্বাবুয়ে দল : হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (অধিনায়ক), ব্রায়ান চারি, ক্রেইগ আরভিন, ব্রেন্ডন টেইলর, সিন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা, পিটার মুর, রেগিস চাকাভা, ডোনাল্ড তিরিপানো, কাইল জার্ভিস, ব্রেন্ডন মাভুতা, জন নিয়ুম্বু, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, রায়ান বার্ল, তেন্ডাই চাতারা ও ক্রিস এমপফু।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ