আজকের শিরোনাম :

ভারতের রোমাঞ্চকর জয়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:৩৬

জস হ্যাজলউডের বলটা লং অফের দিকে ঠেলে দিয়েই প্রাণপন দৌড় শুরু করলেন রিশাভ পান্ত। ভারতের জয়ের জন্য দরকার তখন ৩ রান। দৌড়ে হলেও জয়টা নিশ্চিত করা চাই। শেষতক ওই বলটা গড়াতে গড়াতে পার হলো বাউন্ডারি। ২৩ বছর বয়সী পান্তের ব্যাটের ছোঁয়াতেই গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ার ৩২ বছরের দুর্গে হানা দিল ভারত। সিরিজ নির্ধারণী চতুর্থ ও শেষ টেস্টটিতে শেষ মুহূর্তে এসে ৩ উইকেটের রোমাঞ্চকর এক জয় পেয়েছে আজিঙ্কা রাহানের দল। 

৩২ বছর ধরে ব্রিসবেনে অপরাজিত অস্ট্রেলিয়া। শেষবার হেরেছিল ১৯৮৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এর পর কোনো দলকে তারা গোনায় ধরে না। উড়তে থাকা সেই অস্ট্রেলিয়াকে মঙ্গলবার মাটিতে নামালো ভারত। সেটাও ইতিহাস গড়ে। গ্যাবায় চতুর্থ ইনিংসে সব চেয়ে বেশি রান করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়াই। ১৯৫১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটে ২৩৬ রান তুলে জিতেছিল তারা। ভারতের লক্ষ্য ছিল ৩২৮। পরিসংখ্যান বোঝাচ্ছে, ভারতের কাজটা কত কঠিন ছিল। তবুও হাল ছাড়ে না ভারত। দৃঢ় মানসিকতা, জেদ, লড়াই শেষে ভারত জেতে ম্যাচ। 

পড়ন্ত বিকেলে ১৮ বল আগে ৩ উইকেট হাতে রেখে ব্রিসবেন বন্দরে নোঙর ফেলে ভারত। সেই সঙ্গে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় সফরকারীরা। 

৮৯ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন রিশাভ পান্ত। এ ছাড়া ৯১ রানের নজরকাড়া ইনিংস খেলেছেন শুভমান গিল। পূজারার ব্যাট থেকে আসে ৫৬ রান। ত্রয়ীর হাফ সেঞ্চুরিতে ভারত ব্রিসবেনে উড়িয়েছে বিজয়ের পতাকা। স্বপ্নপূরণের দিন। ট্রফি জয়ের দিনে ভারত সম্মান জানায় দর্শকদের। জাতীয় পতাকা তুলে ধরে মাঠ প্রদক্ষিণ করেছে টিম ইন্ডিয়া।

আগের দিন ৪ রান তুলে নিয়েছিল ভারতের উদ্বোধনী জুটি। মঙ্গলবার দিনের শুরুর ঘণ্টা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ভারত পিছিয়ে পড়েছিল। অস্ট্রেলিয়া থিতু হওয়ার আগেই তুলে নেয় রোহিত শর্মার উইকেট। কামিন্সের বলে উইকেটের পেছনে ভারতের সহ-অধিনায়ক ক্যাচ দেন ৭ রানে। তবে শুরুর ধাক্কা ভালোভাবে সামলে নেন শুভমান গিল ও চতেশ্বর পূজারা।

ওই ১ উইকেট নিয়ে ৮৩ রানে বিরতিতে যায় দল। বিরতি থেকে ফিরে গিল ফিফটিতে নিজের নাম তোলেন রেকর্ডবুকে। ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে ফিফটি পাওয়ার রেকর্ড গড়েন।

মাইলফলক ছোঁয়া ইনিংসটি বড় করে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু ৯ রানের অক্ষেপে পুড়েন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৯১ রানে লায়নের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন স্মিথের হাতে। ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটি সাজাতে যথেষ্ট সাহস দেখিয়েছেন। প্রতি আক্রমণে গিয়ে ৮ চার ও ২ ছক্কায় হাঁকান।

দ্বিতীয় উইকেটে গিল ও পূজারার ২৪০ বলে ১১৪ রানের জুটি ভেঙে প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাস দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক রাহানেকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি কামিন্স। ২২ বলে ২৪ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ভারতের অধিনায়ক। 

পাঁচে ব্যাটিংয়ে আসার কথা মায়াঙ্ক আগারওয়ালের। কিন্তু পান্তকে পাঠিয়ে ভারত লক্ষ্য তাড়া করার চ্যালেঞ্জ নেয়। সেই চ্যালেঞ্জে ভারত সফল। পূজারাকে সঙ্গে নিয়ে পান্তের জুটি ১৪১ বলে ৬১ রানের। পান্ত বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাটিং করলেও পূজারা ছিলেন চোয়ালবদ্ধ। বাজে বল শাসন করেছেন। ভালো বল সমীহ করে খেলেছেন। তাতে একপ্রান্তে উইকেটও ছিল, আরেকপ্রান্তে রান এসেছে অনায়েসে।

ইনিংসের শুরু থেকেই পূজারা ছিলেন ধীরস্থির। নিজের খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসার একটুও প্রয়োজন অনুভব করেননি। উইকেটে টিকে থাকার মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করে গিয়েছেন। বলের পর বল ছেড়েছেন। বোলারদের দুর্দান্ত গতির বল খেলেছেন সিদ্ধহস্তে। কোনো চাপ ছিল না। রান তোলার তাড়া ছিল না। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা দেখিয়েছেন। ১৯৬ বলে পেয়েছেন ফিফটি যা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি বল খেলে ফিফটি। আগের টেস্টে সিডনিতে ১৭৪ বলে ফিফটি তুলেছিলেন।  নতুন বল নেওয়ার পর ম্যাচে খানিকটা রোমাঞ্চ ছড়ায়।

২০ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১০০ রান। কিন্তু দ্বিতীয় বলে ভারত ধাক্কা খায়। কামিন্স ভাঙেন পূজারার প্রতিরোধ। ডানহাতি পেসারের লেন্থ বল পূজারার পেছনের পায়ে আঘাত করে। আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ চেয়েছিলেন। কিন্তু পূজারাকে ড্রেসিংরুমের দীর্ঘ পথ ধরতেই হয়। ২১১ বলে মাত্র ৭ বাউন্ডারিতে ৫৬ রান করেন। 
আগারওয়াল ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো কিছু করতে পারেনি। ৯ রানে ফেরেন সাজঘরে। তখন মূল ভরসা একমাত্র পান্ত। তবে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের থেকে চাপ কমিয়ে নেন ওয়াসিংটন সুন্দর। কামিন্সকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কায় উড়ানোর পর পয়েন্ট দিয়ে একটি দারুণ চার হাঁকান। এর আগে কভার ড্রাইভে বল পাঠান সীমানায়। পান্ত লায়নকে স্কুপে চার বানানোর পর ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠান চোখে পলকে। দুইজনের জুটিতে আসে ৫৫ বলে ৫৩ রান।

সবকিছুতেই তখন ভারতের জয়জয়কার। তবুও রোমাঞ্চ শেষ হয়েও শেষ হয় না। জয়ের রান যখন এক সংখ্যায় নেমে আসে তখন সুন্দরকে লায়ন ও শার্দুল ঠাকুকে হ্যাজেলউড সাজঘরের পথ দেখান। কিন্তু ম্যাচসেরা নির্বাচিত হওয়া পান্ত নিজের মনোবল নষ্ট করেননি। অস্ট্রেলিয়ার বাতাসও গায়ে মাখেননি।হ্যাজেলউডের লেন্থ বল লং অন দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে জয় তুলে নেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংসটি হয়তো আজীবনের প্রিয় হয়ে থাকল তার জন্য।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ