আজকের শিরোনাম :

আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান দ্বন্দ্ব: কোন দেশের সামরিক শক্তি কেমন?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২:১৩

আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে গেছে বিতর্কিত নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে।

আজারবাইজানের অন্তত একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ফেলে দিয়েছে আর্মেনিয়ার বাহিনী। দুই তরফ থেকেই জানানো হয়েছে, এই লড়াইয়ে কিছু বেসামরিক মানুষ মারা গেছে।

নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই দ্বন্দ্ব আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে

কিন্তু কোন দেশের সামরিক শক্তি কতটা?

বিশ্বে দেশগুলোর সামরিক শক্তির যে তালিকা প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার, তাতে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের শক্তির একটি ধারণা পাওয়া যায়।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের ১৩৮টি দেশের মধ্যে আজারবাইজানের অবস্থান ৬৪, অন্যদিকে আর্মেনিয়ার অবস্থান ১১১-এ।

আজারবাইজানের জনসংখ্যা ১ কোটি ৪৬ হাজার হলেও আর্মেনিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ৩০ লাখ ৩৮ হাজার। আয়তনের দিক থেকেও যেখানে আর্মেনিয়া মাত্র ২৯,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার, সেখানে আজারবাইজানের আয়তন প্রায় তিনগুণ ৮৬, ৬০০ বর্গকিলোমিটার।

দুই দেশের মধ্যে সামরিক শক্তির প্রধান পার্থক্যগুলো কোথায়?

সৈন্য সংখ্যা

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ইনডেক্স অনুযায়ী, আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনীর মোট সদস্য ১ লাখ ২৬ হাজার। তাদের সংরক্ষিত বাহিনীতে রয়েছে ৩ লাখ কর্মী।

সেই তুলনায় আর্মেনিয়ার সৈন্য সংখ্যা অর্ধেকের কম। দেশটিতে কর্মরত সৈন্য রয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার। সংরক্ষিত সেনা সদস্য হিসাবে রয়েছে ২ লাখ সদস্য।

প্রতিরক্ষা বাজেট

এই ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে সামরিক খাতের বাজেটেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। আজারবাইজানের সামরিক বাজেট আর্মেনিয়ার প্রায় দ্বিগুণ।

আজারবাইজান যেখানে সামরিক খাতে ব্যয় করে ২৮০ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে আর্মেনিয়া ব্যয় করে ১৩৮ কোটি মার্কিন ডলার।

এয়ারক্রাফট

আজারবাইজানের সামরিক বাহিনীতে মোট এয়ারক্রাফটের সংখ্যা ১৪৮টি। অন্যদিকে আর্মেনিয়ার এয়ারক্রাফট রয়েছে ৬৪টি।

এর মধ্যে আর্মেনিয়ার কোন যুদ্ধবিমান নেই, তবে হামলায় ব্যবহার উপযোগী অ্যাটাক এয়ারক্রাফট রয়েছে নয়টি।

অন্যদিকে আজারবাইজানের যুদ্ধবিমান রয়েছে ১৭টি। এর বাইরে তাদের অ্যাটাক এয়ারক্রাফট আছে ১২টি।

হেলিকপ্টার

হেলিকপ্টারের সংখ্যার দিক থেকে আজারবাইজান এগিয়ে থাকলেও আক্রমণকারী হেলিকপ্টারের তালিকায় এগিয়ে রয়েছে আর্মেনীয়। আজারবাইজানের হেলিকপ্টার রয়েছে ৮৮টি, যার মধ্যে ১৭টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার। আর আর্মেনিয়ার হেলিকপ্টার রয়েছে ৩৭টি। তার মধ্যে ২০টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার।

সামরিক যান

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, সাঁজোয়া যানের দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে আজারবাইজান। তাদের ট্যাংক রয়েছে ৫৭০টি আর আর্মাড কার রয়েছে ১, ৪৫১টি।

আর্মেনিয়ার ট্যাংকের সংখ্যা অনেক কম। তাদের মাত্র ১১০টি ট্যাংক রয়েছে। অন্যদিকে তাদের আর্মাড কারের সংখ্যা ৭৪৮টি।

আর্টিলারি

আর্টিলারির দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে আজারবাইজান। দেশটির স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি গান রয়েছে ১৮৭টি আর ফিল্ড আর্টিলারি রয়েছে ২২৭টি।

আর্মেনিয়ার স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি গান রয়েছে ৩৮টি আর ফিল্ড আর্টিলারি রয়েছে ১৫০টি।

আজারবাইজানের যেখানে রকেট প্রজেক্টর রয়েছে ১৬২টি সেখানে আর্মেনিয়ার আছে অর্ধেকের কম, ৬৮টি।

নৌযান

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ইনডেক্স অনুযায়ী, আর্মেনিয়ার কোন রণতরী নেই। তবে আজারবাইজানের নৌ বাহিনীর মোট ৩১টি রণতরী রয়েছে।

এর মধ্যে আজারবাইজানের একটি ফ্রিগেট, চারটি সাবমেরিন রয়েছে। আর্মেনিয়ার এসব কোন নৌযান নেই।

এছাড়া আজারবাইজানের মাইন অপসারণে সক্ষম সাতটি যুদ্ধজাহাজ আর উপকূলে টহল দিতে সক্ষম ১৩টি পেট্রল বোট আছে। দুই দেশের কারোই বিমানবাহী রণতরী কিংবা ডেস্ট্রয়ার নেই।

অন্যান্য

আর্মেনিয়ায় মোট ১১টি বিমানবন্দর রয়েছে, যেখানে আজারবাইজানে রয়েছে ৩৭টি।নআর্মেনিয়ার কোন বাণিজ্যিক জাহাজ নেই, তবে আজারবাইজানের বাণিজ্যিক জাহাজ রয়েছে ৩১৩টি।

সড়কপথ, রেলপথ, বন্দরের দিক থেকেও আর্মেনিয়ার চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে আজারবাইজান।

আজারবাইজান তেল সম্পদে সমৃদ্ধ। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বড় একটি অংশ তারা রপ্তানি করে। তবে আর্মেনিয়ার তেল নেই। চাহিদার পুরোটাই তাদের আমদানি করতে হয়।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, সামরিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে রাশিয়া, চীন ও ভারত। শীর্ষ ১০দেশের মধ্যে আরো রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, মিশর এবং ব্রাজিল।

সামরিক শক্তির দিক থেকে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ইনডেক্স অনুযায়ী, ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা ৪৬তম।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ