করোনাভাইরাস টিকা নিয়ে সর্বশেষ : আশার আলো কতটা?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৪৯
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করার ছয় মাস পর সারা বিশ্বের মানুষ এখন একটা সফল টিকার জন্য অধীর আগ্রহে দিন গুনছে। কিন্তু বলা হচ্ছে বিজ্ঞানীরা কার্যকর টিকা উদ্ভাবনে সফল হলে, এবং তার সফল উৎপাদন সম্ভব হলেও তা বিশ্বের সব মানুষকে সরবরাহের জন্য যথেষ্ট হবে না।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং ওষুধ প্রস্তুতকারকরা করোনাভাইরাসের একটা সফল টিকার উদ্ভাবন, পরীক্ষা এবং উৎপাদনের জন্য এখন তাই নতুন করে একটা বাস্তব সময়সূচি তৈরি করতে উঠে পড়ে লেগেছে।
সারা বিশ্বে এই সফল টিকার সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য নজিরবিহীন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে ক্রমশই উদ্বেগ বাড়ছে যে করোনার ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোর প্রয়োজনকে আমলে না নিয়েই হয়ত এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে ধনী দেশগুলো।
তাহলে কীভাবে বিতরণ হবে এই টিকা, এর মূল্য কী হবে এবং এই বৈশ্বিক সঙ্কটে কোন দেশকে যে অবহেলা করা হচ্ছে না, সেটাই বা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে?
সংক্রামক রোগের টিকা উদ্ভাবন, পরীক্ষা ও উৎপাদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণত কয়েক বছর লেগে যায়। তারপরেও সবসময় সেই টিকা যে সফল হয় তাও নয়।
এ পর্যন্ত মাত্র একটি সংক্রামক রোগের টিকা সফল হয়েছে। সেটি হল গুটিবসন্ত, যেটি সম্পূর্ণ নির্মূল করা গেছে। কিন্তু তাতেও সময় লেগেছে ২০০ বছর।
বাকিগুলো- যেমন পোলিও, টিটেনাস, হাম, মাম্পস এবং যক্ষ্মা- এখনও মানুষের সঙ্গ ছাড়েনি। যদিও এসব রোগের টিকা আছে এবং টিকার কল্যাণে অন্তত এসব রোগের মহামারি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে কী আশা?
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক হিসাবে কোন টিকা কাজ করবে, কয়েক হাজার মানুষের ওপর এখন তার পরীক্ষা চলছে। গবেষণা থেকে সরবরাহ- একটা কার্যকর টিকা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সচরাচর সময় লাগে ৫-১০ বছর। সেটা এখন করার চেষ্টা হচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যে। এরই মাঝে উৎপাদনের কাজও তড়িৎ গতিতে চালানো হচ্ছে। বিনিয়োগকারী এবং ওষুধ প্রস্তুতকারকরা কার্যকর একটা টিকা তৈরি করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ খরচের বিশাল ঝুঁকি নিয়েছে। রাশিয়া বলছে, তাদের উদ্ভাবিত স্পুটনিক-৫ টিকা রোগীর শরীরে প্রয়োগ করার পর সেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি তৈরি করতে সফল হয়েছে, এমন লক্ষ্মণ দেখা গেছে। এবং তারা অক্টোবর মাসেই গণহারে এই টিকার উৎপাদন শুরু করবে। চীন বলছে তারাও সফল টিকা তৈরি করেছে, যা সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেয়া হচ্ছে। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের এত দ্রুত টিকা উৎপাদন নিয়ে বিজ্ঞানী মহল উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। যেসব টিকার মানবদেহে পরীক্ষা বা ক্লিনিকাল ট্রায়াল তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেসব টিকার তালিকায় এই দুই দেশের টিকাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়ের অর্থ হল, মানুষের শরীরে তার পরীক্ষামূলক ব্যাপক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। যেসব টিকার উদ্ভাবন কাজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাদের মধ্যে কয়েকটি, এবছরের শেষ নাগাদ অনুমোদন পেতে পারে বলে আশা করছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে কোভিড-১৯এর জন্য গণহারে টিকাদান শুরু হতে ২০২১এর মাঝ নাগাদ হবে বলে তারা মনে করছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা তৈরির লাইসেন্স ব্রিটেনের যে ওষুধ প্রস্তুতকারক অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে দেয়া হয়েছে, তারা সারা বিশ্বে এই টিকা তৈরির কাজ তরান্বিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারকদের সাথে কাজ করছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা যুক্তরাজ্যকে দশ কোটি এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশকে সম্ভবত ২০০ কোটি টিকা দিতে রাজি হয়েছে- অবশ্য যদি এই টিকা সফল হয়। ফাইজার এবং বায়োএনটেক তাদের টিকা তৈরি কর্মসূচির পেছনে একশ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং তারা আশা করছে এবছরের অক্টোবর মাসেই তারা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার অধীনে একধরনের অনুমোদন পেতে পারবে। সেটা হলে, ২০২০র শেষ নাগাদ তারা দশ কোটি টিকা উৎপাদন করতে পারবে এবং ২০২১এর শেষ নাগাদ তাদের পক্ষে আরও ১৩০কোটি টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এছাড়াও আরও বিশটির মত ওষুধ প্রস্ততকারক তাদের টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল দিচ্ছে। এর সবগুলো যে সফল হবে তা নয়। সাধারণত মাত্র ১০% টিকার ট্রায়াল সফল হয়ে থাকে। তবে এবারে ব্যতিক্রম হচ্ছে সারা বিশ্ব এক লক্ষ্যে কাজ করছে এবং সফল টিকা তৈরির ব্যাপারটায় সব দেশ আগ্রহী। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল, এতগুলোর মধ্যে যদি একটা টিকাও সফল হয়, সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য তার দ্রুত উৎপাদন ও জোগান অসম্ভব একটা চ্যালেঞ্জ হবে। কার আগে কে টিকা তৈরি করতে পারে এনিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। ভ্যাকসিন নিয়ে জাতীয়তার মনোভাব দুশ্চিন্তার
টিকা তৈরির প্রক্রিয়া সফল হবার আগেই বিভিন্ন দেশ টিকা সংগ্রহের দৌড়ে নেমে গেছে। অনেক দেশ টিকা উৎপাদনে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থার সাথে কয়েক মিলিয়ন টিকা কেনার চুক্তি করে ফেলেছে - এমনকী সেসব টিকা আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাবার আগেই। উদাহরণ স্বরূপ, সফল হোক বা না হোক তা চূড়ান্ত হবার আগেই ছয়টি সংস্থা থেকে করোনার টিকা কেনার জন্য বড় অঙ্কের ক্রয় চুক্তি করে ফেলেছে ব্রিটেন। এর জন্য কত খরচ করা হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি। আমেরিকা দ্রুত সফল টিকা উৎপাদনে অর্থ বিনিয়োগ করে ৩০ কোটি টিকা কেনার আশা করছে। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) অঙ্গরাজ্যগুলোকে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে নভেম্বরের শুরুতে টিকাদানের জন্য তারা যেন প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। কিন্তু সব দেশ একই অবস্থায় নেই। মেদিস্যঁ সঁ ফ্রতিয়েঁ সংস্থা যারা টিকা পৌঁছে দেবার কাজে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে আসছে, তারা বলছে এসব টিকা প্রস্তুতকারকদের সাথে অগ্রিম চুক্তি করে রাখাটা ‘ধনী দেশগুলোর দিক থেকে টিকা নিয়ে জাতীয়তাবাদী আচরণের একটা বিপদজনক ধারা’। এটা করার কারণে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলো টিকা সংগ্রহের দৌড়ে স্বভাবতই পিছিয়ে পড়বে কারণ বিশ্বে ভাইরাসের মজুত থাকবে যেহেতু সীমিত। আগেও দেখা গেছে, পৃথিবীর অনেক দেশ, জীবন রক্ষাকারী টিকার দামের কারণে টিকা জোগাড় করতে বড়ধরনের অসুবিধায় পড়ায় শিশুদের প্রাণঘাতী রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে পারেনি। কাজেই করোনার টিকার ক্ষেত্রে সমবন্টনের বিষয়টা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হবে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। টিকা বণ্টনের জন্য বৈশ্বিক টাস্ক ফোর্স
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চেষ্টা করছে মহামারি নিয়ে কাজ করছে এমন বিভিন্ন সংগঠন- যার মধ্যে রয়েছে গ্যাভি, সেপি ইত্যাদি সংস্থা এবং টিকা তৈরিতে একযোগে কাজ করছে এমন দেশগুলোর সরকাররা, তারা যাতে এ ব্যাপারে একটা ভারসাম্য রাখার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। কোভিডের টিকা উদ্ভাবন ও সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে কোভাক্স নামে যে বৈশ্বিক গোষ্ঠী তার সদস্য হয়েছে অন্তত ৮০টি ধনী দেশ। কোভাক্স-এর লক্ষ্য ২০২০ সাল শেষ হবার আগে করোনার ওষুধ কিনে তা বিশ্বের সব দেশে সুষমভাবে বন্টন করা। আমেরিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে না থাকার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তারা এই গোষ্ঠীতে নেই। কোভাক্স গোষ্ঠী আশা করছে, তাদের সম্মিলিত সম্পদ কাজে লাগিয়ে তারা আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার স্বল্পোন্নত ৯২টি দেশকে দ্রুত ও সমানভাবে কোভিড-১৯এর টিকা পাবার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারবে। কোভাক্স একই সাথে টিকার গবেষণার কাজে সহায়তা করছে এবং উৎপাদনের কাজ বাড়ানোর ব্যাপারেও টিকা প্রস্তুতকারকদের সাহায্য করছে। কোভাক্সের সদস্য একটি সংস্থা গ্যাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সেথ বার্কলে বলেছেন, ‘যদি এই টিকা শুধু ধনী দেশগুলো নিজেদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করার কথা ভাবে, তাহলে এই মহামারির প্রভাব ঠেকানো আদৌ সম্ভব হবে না। কারণ এই রোগ বিশ্বে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসাবাণিজ্য এবং সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজেই এর প্রভাব রুখতে এটাকে বিশ্বের সমস্যা হিসাবেই দেখতে হবে।’ এই টিকার দাম কত হবে?
টিকা তৈরির কাজে কয়েকশ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। টিকা কেনা ও সরবরাহের জন্য আরও কয়েক লক্ষ ডলারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এর দাম নির্ভর করবে টিকার ধরন, কারা টিকা প্রস্তুতকারক এবং কত টিকা অর্ডার করা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে। যেমন জানা যাচ্ছে ওষুধ কোম্পানি মর্ডানার বিক্রয় মূল্য হবে টিকা প্রতি ৩২ থেকে ৩৭ ডলার। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে মহামারির সময় তারা একেবারে ‘কেনা দামে’ অর্থাৎ খুবই কম দামে টিকা বিক্রি করবে- যার মূল্য পড়বে টিকা প্রতি মাত্র কয়েক ডলার। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা। কোভিড-১৯এর টিকা উৎপাদন কর্মসূচিতে তাদের ১৫ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা করছে গ্যাভি এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। ভারত এবং মধ্য ও স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য দশ কোটি ডোজ টিকা তৈরি ও তা সরবরাহের জন্য তাদের এই অর্থ সাহায্য দেয়া হয়েছে। সেরাম বলছে একটা ভ্যাকসিন তারা সর্বোচ্চ তিন ডলারে বিক্রি করবে। তবে যেসব রোগীকে টিকা দেয়া হবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের কোন মূল্য দিয়ে টিকা কিনতে হবে না। যেমন ব্রিটেনে মানুষ জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আওতায় বিনামূল্যে টিকা পাবেন। অন্যান্য দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া বলেছে তারা সেদেশের মানুষকে বিনা খরচায় টিকা দেবে। আমেরিকায় টিকার জন্য মূল্য দিতে হবে না, কিন্তু ডাক্তার বা স্বাস্থ্য কর্মী যারা টিকা দেবেন, আমেরিকান স্বাস্থ্য সেবার নিয়মে তাদের ফি দিতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করবে টিকার জন্য রোগীকে কী দাম দিতে হবে। কারা প্রথমে টিকা পাবে?
ওষুধ উৎপাদন যারা করছে এটা তাদের ওপর নির্ভর করবে না। ‘প্রত্যেক দেশ বা এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে ঠিক করতে হবে কাদের তারা প্রথম টিকা দেবে এবং কীভাবে দেবে,’ বিবিসিকে জানিয়েছেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট সার মেনে প্যাঙ্গালোস। প্রাথমিক সরবরাহ যেহেতু সীমিত থাকবে, তাই প্রথম অগ্রাধিকার দেয়া হবে স্বাস্থ্য সেবার সাথে যারা যুক্ত তাদের সুরক্ষা এবং রোগীর মৃত্যু ঠেকানোর ওপর। কোভাসের অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোকে, উচ্চ বা নিম্ন আয় নির্বিশেষে, জনসংখ্যার ৩%এর জন্য পর্যাপ্ত টিকা দেয়া হবে। সেটা স্বাস্থ্য ও সমাজ কল্যাণ কর্মীদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত হবে বলে গ্যাভি মনে করছে। টিকার উৎপাদন বাড়লে জনগোষ্ঠীর ২০%কে টিকা দেবার জন্য পর্যাপ্ত ডোজ সরবরাহ করা হবে। এই পর্যায়ে ৬৫-ঊর্ধ্ব এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা হবে। সব দেশ ২০% টিকা পাবার পর টিকা বন্টনের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হবে কোন্ দেশ কতটা ঝুঁকিতে এবং কোন্ দেশের জন্য কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশু আশংকা রয়েছে সেই বিষয়গুলো। কোন দেশ কোভাক্সের অন্তর্ভূক্ত হতে চাইলে ১৮ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেটা করতে হবে এবং ৯ই অক্টোবরের মধ্যে এর জন্য অর্থ জমা দিতে হবে। কীভাবে টিকা বিলি বন্টন হবে সেই প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা এখন চলছে। গ্যাভির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ধনী দেশগুলো তাদের জনগোষ্ঠীর আরও বেশি অংশের জন্য টিকার অনুরোধ জানাতে পারে, কিন্তু এই কর্মসূচির আওতায় সব দেশ ২০% জনগণের জন্য টিকা না পাওয়া পর্যন্ত কাউকে এর বেশি টিকা সরবরাহ করা হবে না। কীভাবে বিভিন্ন দেশে টিকা পৌঁছানোর কাজ করা হবে?
সবই নির্ভর করছে ভ্যাকসিন কতটা সফল হয় তার ওপর। আদর্শ টিকাকে ব্যয়সাধ্য হতে হবে, আদর্শ টিকার দীর্ঘমেয়াদী ও শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। টিকা এমন হতে হবে যা দ্রুত উৎপাদন করা এবং হিমায়িত সহজ সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছন সম্ভব হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, মেদিস্যঁ সঁ ফ্রতিয়েঁর মত সংস্থাগুলোর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকা কর্মসূচির জন্য নিরাপদে ও সফলভাবে টিকা পৌঁছে দেবার অভিজ্ঞতা আছে। সেজন্য তাদের হিমায়িত সরবরাহ ব্যবস্থাও আছে, যা কারখানা থেকে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকা পৌঁছে দিতে সক্ষম। তবে ইতোমধ্যেই যেসব টিকাদান কর্মসূচি চালু আছে তার সঙ্গে যখন কোভিডের টিকা পৌঁছনর কাজ যুক্ত হবে তখন তা যে বাড়তি চাপ ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে তাতে সন্দেহ নেই। টিকা সাধারণত হিমায়িত রাখতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। উন্নত বিশ্বের জন্য এটা বিরাট চ্যালেঞ্জ না হলেও যেসব দেশে অবকাঠামো দুর্বল, বিদ্যুত সরবরাহ অনির্ভরযোগ্য, এবং হিমায়িত রাখার ব্যবস্থাও অস্থিতিশীল, সেসব দেশের জন্য এটা অবশ্যই বড়ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে এই বেসরকারি সংস্থাগুলো মনে করছে। তারা বলছে, পরিবহন ব্যবস্থা এবং ফ্রিজ ও ফ্রিজার চালু রাখার জন্য জ্বালানির অব্যাহত সরবরাহও অনেক দেশেই সমস্যার কারণ হতে পারে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছেন তাদের টিকা কার্যকর হতে গেলে সবসময় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে। কোন কোন টিকা আবার খুবই ঠাণ্ডায়- হিমাঙ্কের ৬০ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে মজুত রাখার প্রয়োজন হবে। টিকাদান কর্মসূচি কীভাবে পরিচালনা করা হবে সেটা নিয়ে বিভিন্ন দেশকে চিন্তাভাবনা করতে হবে। যেহেতু নানা বয়সের মানুষকে করোনার টিকা দিতে হবে, তাই তাদের কাছে কীভাবে পৌঁছন যাবে সেটার জন্য যথাযথ পরিকল্পনার প্রয়োজন হবে। এর ওপর থাকবে মাঠ পর্যায়ে টিকা দেবার জন্য প্রশিক্ষণ। কাজেই সফল টিকা তৈরির জন্য বিশ্ব যখন বিজ্ঞানীদের দিকে তাকিয়ে আছে, তখন সফল টিকা হাতে এলে তা সংগ্রহ করা এবং মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার চ্যালেঞ্জগুলোও কীভাবে মোকাবেলা করা হবে সেটা নিয়ে বিভিন্ন দেশকে এখন থেকেই ভাবার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বলছেন শুধু টিকাই নয়, করোনাভাইরাস মোকাবেলার অন্য হাতিয়ারগুলো- যেমন পরিচ্ছন্নতা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এগুলোর কথাও ভুলে গেলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, কোভিড দূরে রাখতে এগুলো এখন কোভিড পরবর্তী আমদের ভবিষ্যত জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকবে অনেক দিন।
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক হিসাবে কোন টিকা কাজ করবে, কয়েক হাজার মানুষের ওপর এখন তার পরীক্ষা চলছে। গবেষণা থেকে সরবরাহ- একটা কার্যকর টিকা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সচরাচর সময় লাগে ৫-১০ বছর। সেটা এখন করার চেষ্টা হচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যে। এরই মাঝে উৎপাদনের কাজও তড়িৎ গতিতে চালানো হচ্ছে। বিনিয়োগকারী এবং ওষুধ প্রস্তুতকারকরা কার্যকর একটা টিকা তৈরি করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ খরচের বিশাল ঝুঁকি নিয়েছে। রাশিয়া বলছে, তাদের উদ্ভাবিত স্পুটনিক-৫ টিকা রোগীর শরীরে প্রয়োগ করার পর সেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি তৈরি করতে সফল হয়েছে, এমন লক্ষ্মণ দেখা গেছে। এবং তারা অক্টোবর মাসেই গণহারে এই টিকার উৎপাদন শুরু করবে। চীন বলছে তারাও সফল টিকা তৈরি করেছে, যা সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেয়া হচ্ছে। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের এত দ্রুত টিকা উৎপাদন নিয়ে বিজ্ঞানী মহল উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। যেসব টিকার মানবদেহে পরীক্ষা বা ক্লিনিকাল ট্রায়াল তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেসব টিকার তালিকায় এই দুই দেশের টিকাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়ের অর্থ হল, মানুষের শরীরে তার পরীক্ষামূলক ব্যাপক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। যেসব টিকার উদ্ভাবন কাজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাদের মধ্যে কয়েকটি, এবছরের শেষ নাগাদ অনুমোদন পেতে পারে বলে আশা করছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে কোভিড-১৯এর জন্য গণহারে টিকাদান শুরু হতে ২০২১এর মাঝ নাগাদ হবে বলে তারা মনে করছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা তৈরির লাইসেন্স ব্রিটেনের যে ওষুধ প্রস্তুতকারক অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে দেয়া হয়েছে, তারা সারা বিশ্বে এই টিকা তৈরির কাজ তরান্বিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারকদের সাথে কাজ করছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা যুক্তরাজ্যকে দশ কোটি এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশকে সম্ভবত ২০০ কোটি টিকা দিতে রাজি হয়েছে- অবশ্য যদি এই টিকা সফল হয়। ফাইজার এবং বায়োএনটেক তাদের টিকা তৈরি কর্মসূচির পেছনে একশ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং তারা আশা করছে এবছরের অক্টোবর মাসেই তারা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার অধীনে একধরনের অনুমোদন পেতে পারবে। সেটা হলে, ২০২০র শেষ নাগাদ তারা দশ কোটি টিকা উৎপাদন করতে পারবে এবং ২০২১এর শেষ নাগাদ তাদের পক্ষে আরও ১৩০কোটি টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এছাড়াও আরও বিশটির মত ওষুধ প্রস্ততকারক তাদের টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল দিচ্ছে। এর সবগুলো যে সফল হবে তা নয়। সাধারণত মাত্র ১০% টিকার ট্রায়াল সফল হয়ে থাকে। তবে এবারে ব্যতিক্রম হচ্ছে সারা বিশ্ব এক লক্ষ্যে কাজ করছে এবং সফল টিকা তৈরির ব্যাপারটায় সব দেশ আগ্রহী। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল, এতগুলোর মধ্যে যদি একটা টিকাও সফল হয়, সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য তার দ্রুত উৎপাদন ও জোগান অসম্ভব একটা চ্যালেঞ্জ হবে। কার আগে কে টিকা তৈরি করতে পারে এনিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। ভ্যাকসিন নিয়ে জাতীয়তার মনোভাব দুশ্চিন্তার
টিকা তৈরির প্রক্রিয়া সফল হবার আগেই বিভিন্ন দেশ টিকা সংগ্রহের দৌড়ে নেমে গেছে। অনেক দেশ টিকা উৎপাদনে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থার সাথে কয়েক মিলিয়ন টিকা কেনার চুক্তি করে ফেলেছে - এমনকী সেসব টিকা আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাবার আগেই। উদাহরণ স্বরূপ, সফল হোক বা না হোক তা চূড়ান্ত হবার আগেই ছয়টি সংস্থা থেকে করোনার টিকা কেনার জন্য বড় অঙ্কের ক্রয় চুক্তি করে ফেলেছে ব্রিটেন। এর জন্য কত খরচ করা হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি। আমেরিকা দ্রুত সফল টিকা উৎপাদনে অর্থ বিনিয়োগ করে ৩০ কোটি টিকা কেনার আশা করছে। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) অঙ্গরাজ্যগুলোকে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে নভেম্বরের শুরুতে টিকাদানের জন্য তারা যেন প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। কিন্তু সব দেশ একই অবস্থায় নেই। মেদিস্যঁ সঁ ফ্রতিয়েঁ সংস্থা যারা টিকা পৌঁছে দেবার কাজে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে আসছে, তারা বলছে এসব টিকা প্রস্তুতকারকদের সাথে অগ্রিম চুক্তি করে রাখাটা ‘ধনী দেশগুলোর দিক থেকে টিকা নিয়ে জাতীয়তাবাদী আচরণের একটা বিপদজনক ধারা’। এটা করার কারণে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলো টিকা সংগ্রহের দৌড়ে স্বভাবতই পিছিয়ে পড়বে কারণ বিশ্বে ভাইরাসের মজুত থাকবে যেহেতু সীমিত। আগেও দেখা গেছে, পৃথিবীর অনেক দেশ, জীবন রক্ষাকারী টিকার দামের কারণে টিকা জোগাড় করতে বড়ধরনের অসুবিধায় পড়ায় শিশুদের প্রাণঘাতী রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে পারেনি। কাজেই করোনার টিকার ক্ষেত্রে সমবন্টনের বিষয়টা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হবে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। টিকা বণ্টনের জন্য বৈশ্বিক টাস্ক ফোর্স
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চেষ্টা করছে মহামারি নিয়ে কাজ করছে এমন বিভিন্ন সংগঠন- যার মধ্যে রয়েছে গ্যাভি, সেপি ইত্যাদি সংস্থা এবং টিকা তৈরিতে একযোগে কাজ করছে এমন দেশগুলোর সরকাররা, তারা যাতে এ ব্যাপারে একটা ভারসাম্য রাখার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। কোভিডের টিকা উদ্ভাবন ও সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে কোভাক্স নামে যে বৈশ্বিক গোষ্ঠী তার সদস্য হয়েছে অন্তত ৮০টি ধনী দেশ। কোভাক্স-এর লক্ষ্য ২০২০ সাল শেষ হবার আগে করোনার ওষুধ কিনে তা বিশ্বের সব দেশে সুষমভাবে বন্টন করা। আমেরিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে না থাকার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তারা এই গোষ্ঠীতে নেই। কোভাক্স গোষ্ঠী আশা করছে, তাদের সম্মিলিত সম্পদ কাজে লাগিয়ে তারা আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার স্বল্পোন্নত ৯২টি দেশকে দ্রুত ও সমানভাবে কোভিড-১৯এর টিকা পাবার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারবে। কোভাক্স একই সাথে টিকার গবেষণার কাজে সহায়তা করছে এবং উৎপাদনের কাজ বাড়ানোর ব্যাপারেও টিকা প্রস্তুতকারকদের সাহায্য করছে। কোভাক্সের সদস্য একটি সংস্থা গ্যাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সেথ বার্কলে বলেছেন, ‘যদি এই টিকা শুধু ধনী দেশগুলো নিজেদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করার কথা ভাবে, তাহলে এই মহামারির প্রভাব ঠেকানো আদৌ সম্ভব হবে না। কারণ এই রোগ বিশ্বে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসাবাণিজ্য এবং সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজেই এর প্রভাব রুখতে এটাকে বিশ্বের সমস্যা হিসাবেই দেখতে হবে।’ এই টিকার দাম কত হবে?
টিকা তৈরির কাজে কয়েকশ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। টিকা কেনা ও সরবরাহের জন্য আরও কয়েক লক্ষ ডলারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এর দাম নির্ভর করবে টিকার ধরন, কারা টিকা প্রস্তুতকারক এবং কত টিকা অর্ডার করা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে। যেমন জানা যাচ্ছে ওষুধ কোম্পানি মর্ডানার বিক্রয় মূল্য হবে টিকা প্রতি ৩২ থেকে ৩৭ ডলার। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে মহামারির সময় তারা একেবারে ‘কেনা দামে’ অর্থাৎ খুবই কম দামে টিকা বিক্রি করবে- যার মূল্য পড়বে টিকা প্রতি মাত্র কয়েক ডলার। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা। কোভিড-১৯এর টিকা উৎপাদন কর্মসূচিতে তাদের ১৫ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা করছে গ্যাভি এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। ভারত এবং মধ্য ও স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য দশ কোটি ডোজ টিকা তৈরি ও তা সরবরাহের জন্য তাদের এই অর্থ সাহায্য দেয়া হয়েছে। সেরাম বলছে একটা ভ্যাকসিন তারা সর্বোচ্চ তিন ডলারে বিক্রি করবে। তবে যেসব রোগীকে টিকা দেয়া হবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের কোন মূল্য দিয়ে টিকা কিনতে হবে না। যেমন ব্রিটেনে মানুষ জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আওতায় বিনামূল্যে টিকা পাবেন। অন্যান্য দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া বলেছে তারা সেদেশের মানুষকে বিনা খরচায় টিকা দেবে। আমেরিকায় টিকার জন্য মূল্য দিতে হবে না, কিন্তু ডাক্তার বা স্বাস্থ্য কর্মী যারা টিকা দেবেন, আমেরিকান স্বাস্থ্য সেবার নিয়মে তাদের ফি দিতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করবে টিকার জন্য রোগীকে কী দাম দিতে হবে। কারা প্রথমে টিকা পাবে?
ওষুধ উৎপাদন যারা করছে এটা তাদের ওপর নির্ভর করবে না। ‘প্রত্যেক দেশ বা এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে ঠিক করতে হবে কাদের তারা প্রথম টিকা দেবে এবং কীভাবে দেবে,’ বিবিসিকে জানিয়েছেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট সার মেনে প্যাঙ্গালোস। প্রাথমিক সরবরাহ যেহেতু সীমিত থাকবে, তাই প্রথম অগ্রাধিকার দেয়া হবে স্বাস্থ্য সেবার সাথে যারা যুক্ত তাদের সুরক্ষা এবং রোগীর মৃত্যু ঠেকানোর ওপর। কোভাসের অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোকে, উচ্চ বা নিম্ন আয় নির্বিশেষে, জনসংখ্যার ৩%এর জন্য পর্যাপ্ত টিকা দেয়া হবে। সেটা স্বাস্থ্য ও সমাজ কল্যাণ কর্মীদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত হবে বলে গ্যাভি মনে করছে। টিকার উৎপাদন বাড়লে জনগোষ্ঠীর ২০%কে টিকা দেবার জন্য পর্যাপ্ত ডোজ সরবরাহ করা হবে। এই পর্যায়ে ৬৫-ঊর্ধ্ব এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা হবে। সব দেশ ২০% টিকা পাবার পর টিকা বন্টনের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হবে কোন্ দেশ কতটা ঝুঁকিতে এবং কোন্ দেশের জন্য কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশু আশংকা রয়েছে সেই বিষয়গুলো। কোন দেশ কোভাক্সের অন্তর্ভূক্ত হতে চাইলে ১৮ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেটা করতে হবে এবং ৯ই অক্টোবরের মধ্যে এর জন্য অর্থ জমা দিতে হবে। কীভাবে টিকা বিলি বন্টন হবে সেই প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা এখন চলছে। গ্যাভির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ধনী দেশগুলো তাদের জনগোষ্ঠীর আরও বেশি অংশের জন্য টিকার অনুরোধ জানাতে পারে, কিন্তু এই কর্মসূচির আওতায় সব দেশ ২০% জনগণের জন্য টিকা না পাওয়া পর্যন্ত কাউকে এর বেশি টিকা সরবরাহ করা হবে না। কীভাবে বিভিন্ন দেশে টিকা পৌঁছানোর কাজ করা হবে?
সবই নির্ভর করছে ভ্যাকসিন কতটা সফল হয় তার ওপর। আদর্শ টিকাকে ব্যয়সাধ্য হতে হবে, আদর্শ টিকার দীর্ঘমেয়াদী ও শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। টিকা এমন হতে হবে যা দ্রুত উৎপাদন করা এবং হিমায়িত সহজ সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছন সম্ভব হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, মেদিস্যঁ সঁ ফ্রতিয়েঁর মত সংস্থাগুলোর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকা কর্মসূচির জন্য নিরাপদে ও সফলভাবে টিকা পৌঁছে দেবার অভিজ্ঞতা আছে। সেজন্য তাদের হিমায়িত সরবরাহ ব্যবস্থাও আছে, যা কারখানা থেকে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকা পৌঁছে দিতে সক্ষম। তবে ইতোমধ্যেই যেসব টিকাদান কর্মসূচি চালু আছে তার সঙ্গে যখন কোভিডের টিকা পৌঁছনর কাজ যুক্ত হবে তখন তা যে বাড়তি চাপ ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে তাতে সন্দেহ নেই। টিকা সাধারণত হিমায়িত রাখতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। উন্নত বিশ্বের জন্য এটা বিরাট চ্যালেঞ্জ না হলেও যেসব দেশে অবকাঠামো দুর্বল, বিদ্যুত সরবরাহ অনির্ভরযোগ্য, এবং হিমায়িত রাখার ব্যবস্থাও অস্থিতিশীল, সেসব দেশের জন্য এটা অবশ্যই বড়ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে এই বেসরকারি সংস্থাগুলো মনে করছে। তারা বলছে, পরিবহন ব্যবস্থা এবং ফ্রিজ ও ফ্রিজার চালু রাখার জন্য জ্বালানির অব্যাহত সরবরাহও অনেক দেশেই সমস্যার কারণ হতে পারে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছেন তাদের টিকা কার্যকর হতে গেলে সবসময় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে। কোন কোন টিকা আবার খুবই ঠাণ্ডায়- হিমাঙ্কের ৬০ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে মজুত রাখার প্রয়োজন হবে। টিকাদান কর্মসূচি কীভাবে পরিচালনা করা হবে সেটা নিয়ে বিভিন্ন দেশকে চিন্তাভাবনা করতে হবে। যেহেতু নানা বয়সের মানুষকে করোনার টিকা দিতে হবে, তাই তাদের কাছে কীভাবে পৌঁছন যাবে সেটার জন্য যথাযথ পরিকল্পনার প্রয়োজন হবে। এর ওপর থাকবে মাঠ পর্যায়ে টিকা দেবার জন্য প্রশিক্ষণ। কাজেই সফল টিকা তৈরির জন্য বিশ্ব যখন বিজ্ঞানীদের দিকে তাকিয়ে আছে, তখন সফল টিকা হাতে এলে তা সংগ্রহ করা এবং মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার চ্যালেঞ্জগুলোও কীভাবে মোকাবেলা করা হবে সেটা নিয়ে বিভিন্ন দেশকে এখন থেকেই ভাবার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বলছেন শুধু টিকাই নয়, করোনাভাইরাস মোকাবেলার অন্য হাতিয়ারগুলো- যেমন পরিচ্ছন্নতা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এগুলোর কথাও ভুলে গেলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, কোভিড দূরে রাখতে এগুলো এখন কোভিড পরবর্তী আমদের ভবিষ্যত জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকবে অনেক দিন।
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ