গণ পরিবহন আগের ভাড়ায় ফিরবে, স্বাস্থ্যবিধি মানা কতোটা সম্ভব?
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২০, ২২:২০
বাংলাদেশে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে গণ পরিবহন আগের ভাড়ায় ফিরে যাবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এক্ষেত্রে মাস্ক পরা, যতো আসন তার বেশি যাত্রী না নেয়াসহ কয়েকটি শর্ত বেঁধে দেয়া হয়।
তবে বাংলাদেশে যে হারে মানুষ বাসে চলাচল করে এসব শর্ত মেনে তারা আদৌ বাস পরিচালনা করতে পারবেন কিনা এমন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ বাস মালিক এবং নিয়মিত বাসযাত্রীরা।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণে না আসায় গণপরিবহন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিলে বড় ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বাংলাদেশে গত পহেলা জুন থেকে এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী নেয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার। এ কারণে বাসের ভাড়াও ৬০% বাড়ানো হয়।
শুরুর দিকে বাসের কর্মচারীরা এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও দুই সপ্তাহ যেতে না যেতে বাসগুলো আগের মতোই গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা শুরু করে এবং ভাড়াও দ্বিগুণ রাখে বলে অভিযোগ করেন নিয়মিত বাসযাত্রী রাকা চৌধুরী।
এখন সরকার বাসের ভাড়া আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিনি সেটাকে স্বাগত জানালেও এতে বাস কর্মচারীরা অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
"দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েও তারা নিয়ম মানে না, তাহলে বেশি ভাড়া কেন দেবো?। আমরা যাত্রীরা প্রতিবাদ করতাম শুরুতে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালত বা পুলিশের চেকপোস্ট থাকলে তারা স্টপেজের আগেই যাত্রীদের নামিয়ে দিতো। আমরাও সহ্য করেছি। এখনও ঝুঁকি নিয়েই চলছি কি করবো, প্রতিদিন গাড়িতে বা সিএনজিতে চড়ার সামর্থ্য তো নেই।"
দ্বিগুণ ভাড়া নেয়া সত্ত্বেও বাস মালিকরা স্বাস্থ্যবিধিও তোয়াক্কা না করায় যাত্রী অধিকার সংগঠনগুলো সম্প্রতি বাসের ভাড়া আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানায়।
তারই প্রেক্ষিতে আজ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে গণপরিবহন আগের ভাড়ায় চলবে বলে ঘোষণা দেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বাসে যতো সিট ততজনের বেশি যাত্রী না তোলা, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজের ব্যবস্থা রাখা, ট্রিপের শুরু এবং শেষে যানবাহন জীবাণুমুক্ত করাসহ কিছু শর্ত বেঁধে দেয়া হয়।
কোন বাস এসব নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি করেন মি. কাদের।
তিনি বলেন, "ভাড়া বাড়ানোর পরেও অনেক বাস আরও অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে, গাদাগাদি করে যাত্রী তুলেছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এবার নিয়ম মানতেই হবে। আইন অমান্যকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে কার্যক্রম জোরদার করতে বিআরটিএকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশ, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশকে তদারকির অনুরোধ জানাচ্ছি।"
এদিকে বাংলাদেশের একটি বড় সংখ্যক জনগোষ্ঠী নিয়মিত যাতায়াতে ক্ষেত্রে বাসের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় আগের ভাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস পরিচালনা করা রীতিমতো অসম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙা।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা এই দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে বলে তিনি জানান।
অনেকটা ক্ষুব্ধভাবেই তিনি বলেন, "এখন সব মানুষই তো কাজে যাবে, বাসে উঠবে। আমার স্টাফরা কিভাবে তাদের নামিয়ে দেবে? নামিয়ে দিলে স্টাফদের মারধোর করা হবে, গাড়ি ভেঙ্গে দেবে, সেটার ক্ষতিপূরণ তো সরকার দেবে না। এখন এই ভাড়ায় যদি বাস চালাতেই হয় তাহলে সেটা তদারকির দায়িত্ব পুলিশকে নিতে হবে। এটা আমরা পারবো না। আমরা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।"
এছাড়া ট্রেন বা বিমানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দায় যাত্রীদের ওপর বর্তালেও বাসের ক্ষেত্রে কেন সেই দায় শুধু মালিকদের ওপর চাপানো হচ্ছে সেটা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
"বাজারে মানুষ ভিড়, জাহাজে, ট্রেনে গাদাগাদি করে লোক উঠছে, বিমানের সব সিট ফুল। কিন্তু সব বিধিনিষেধ হবে বাসকে নিয়ে। ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সেটার জরিমানা তো সরকার দেয় না, যাত্রীকেই দিতে হয়। তাহলে বাসের জরিমানা ড্রাইভার দেবে কেন? এই আইনটা সমান করে দিক তাহলে।" বলেন মি. রাঙা
এদিকে বাংলাদেশে যেখানে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার এখনও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী সেখানে বাসগুলো স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোরভাবে তদারকির পরামর্শ দেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মাহফুজা রিফাত।
"এখন করোনাভাইরাস সারাদেশ জুড়ে ছড়িয়েছে, ঢাকায় এটার প্রকোপ এখনও অনেক বেশি। বর্তমানে যে পরিস্থিতি সে হিসেবে এখনই আমাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার সময় আসেনি। কিন্তু আমাদের জনসংখ্যা এতো বেশি বাসে এই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুব কঠিন। তারপরও যতোটা সম্ভব সেটা যেন প্রতিপালন করা হয় এজন্য সরকারের নজরদারি অনেক বাড়াতে হবে।"
এবিএন/মমিন/জসিম