আজকের শিরোনাম :

করোনাভাইরাস কেন কিছু মানুষকে অসুস্থ করতে পারে না?

  এমিলি লাবের-ওয়ারেন

২৯ আগস্ট ২০২০, ১১:০৬ | অনলাইন সংস্করণ

করোনাভাইরাস কেন বিশ্বব্যাপী এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তার একটি কারণ হচ্ছে, প্রথম কয়েকদিন আক্রান্তরা বেশ সুস্থই বোধ করে। ফলে ঘরে থাকার বদলে তারা বাইরে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে থাকে এবং নিজেদের অজান্তেই তারা ভাইরাস ছড়াতে থাকে। প্রাক-উপসর্গের এ অবস্থার সঙ্গে এ মহামারীকে আরো বেগবান করেছে রহস্যময় একটি গ্রুপ, যাকে আমরা বলছি উপসর্গহীন রোগী। অর্থাৎ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলেও কোনো উপসর্গ তার মাঝে দেখা যায়নি।

একাধিক গবেষণা বলছে, ২০ থেকে ৪৫ শতাংশের কিংবা আরো বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে অথচ তারা বুঝতেই পারে না তারা আক্রান্ত। কোনো জ্বর নেই, ব্যথা নেই, ঘ্রাণ এবং স্বাদের কোনো পরিবর্তন নেই, শ্বাসকষ্টও নেই। তারা মূলত কোনো  সমস্যাই বোধ করে না। 

উপসর্গহীন রোগ কেবল করোনাভাইরাসের সমস্যা নয়, সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রেও ঘটনাটি ঘটতে দেখা যায়। এপিডেমিওলজিস্ট নেইল ফার্গুসনের মতে, ১৯১৮ সালের মহামারীতেও সম্ভবত এমনটা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন কেন কিছু লোক অনাহত থেকে যাচ্ছে। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডোনাল্ড থেহা বলেন, এটা একটা ব্যাপক রহস্যময় বিষয়।

প্রচলিত তত্ত্ব হচ্ছে উপসর্গহীন রোগীদের ইমিউন সিস্টেম এতটাই কার্যকর যে তারা অসুস্থ হয় না। কিন্তু বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস ইমিউন সিস্টেমের আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া, অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা এবং সংক্রমণ দূর করতে অন্যান্য অণুর কার কেবল গল্পের একটি অংশ। এ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানবদেহ সব সময় হয়তো সর্বশক্তি দিয়ে ভাইরাস এবং অন্যান্য রোগজীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে না। এটি অনেক সময় সংক্রমণের সঙ্গে নিজেকে মানিয়েও নেয়। কখনো কখনো এতটাই নির্বিঘ্নে যে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এ বিষয়টি ডিজিজ টলারেন্স (রোগ সহনশীলতা) হিসেবে পরিচিত। এটি গাছের ক্ষেত্রে বেশি পরিচিত হলেও গত ১৫ বছরে প্রাণিজগতেও ঘটার বিষয়গুলোও নথিভুক্ত হয়েছে।

রোগ সহনশীলতা জিনগত প্রবণতা কিংবা আচরণের কিছু দিক অথবা জীবন ধারণ পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তি সহনশীলতার ক্ষমতা। ফলে অন্যদের অসুস্থ করে তোলে এমন রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়েও তারা সাফল্য অর্জন করে। সংক্রমণের ওপর নির্ভর করে সহনশীলতা বিভিন্ন ধরনের রূপ নেয়। যেমন কলেরার সংক্রমণ, যা কিনা ডায়েরিয়ার কারণ, এটি পানিশূন্যতা তৈরি করে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। যেখানে শরীর এমন প্রক্রিয়া চালনা করে যাতে ফ্লুইড বজায় রাখতে পারে এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক থাকে।

তবে যে গবেষক এ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন, তিনি এটি মানুষের মাঝে করে দেখেননি। তবু উপসর্গহীন সংক্রমণকে তারা মানুষের শরীরে রোগ সহনশীলতার প্রমাণ হিসেবে দেখায়। যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের মাঝে অন্তত ৯০ শতাংশ অসুস্থ হয় না। একই কথা কৃমিরোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইমিউনোলজির প্রফেসর ইরাহ কিং বলেন, এই কৃমিগুলো বড় জীব হওয়া সত্ত্বেও তারা মূলত আপনার টিস্যুগুলোর মাধ্যমে মাইগ্রেট করে এবং ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে অনেক মানুষ উপসর্গহীন থেকে যায়। এমনকি তারা জানেও না যে তারা আক্রান্ত। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন আগ্রাসী সংক্রমণকে সহ্য করতে শরীর আসলে কী করে?

বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে প্রাণীদেহে সংক্রমণের সময় টিস্যুর ক্ষতি কমানোর জন্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো পর্যবেক্ষণ করে আসছিলেন। সম্প্রতি তারা রোগ সহনশীলতার আলোকে এটা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। যেমন কিং এবং তার সহকর্মীরা ইঁদুরের শরীরের নির্দিষ্ট ইমিউন সেল শনাক্ত করেছেন, যা কিনা রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় ইনফেকশনের সময়, ফলে অন্ত্রের রক্তক্ষরণ কমে যায়। এমনকি যখন এ সংখ্যক কৃমি উপস্থিত থাকে তখনো। কিং বলেন, এটি দেখা গেছে গাছ, ব্যাকটেরিয়া ও অন্য স্তন্যপায়ীদের মাঝে। আমরা কেন ভাবি যে মানুষ সংক্রমণের মুখে নিজেদের স্বাস্থ্যকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে এ ধরনের পদ্ধতি বিকশিত করতে পারে না।

সম্প্রতি কিং এবং তার সহকর্মী এ ক্ষেত্রটিতে দীর্ঘমেয়াদি আশার আলো দেখার কথা বলেছেন। যেখানে রোগ সহনশীলতার বিষয়টি তারা গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করছেন। এটাকে তারা সংক্রামক রোগ গবেষণা ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে নতুন সোনালি যুগের সূচনা হিসেবে দেখছেন।

বিজ্ঞানীরা ঐতিহ্যগতভাবে জীবাণুকে শত্রু হিসেবে দেখেন। যার ফলে মূল্যবান অ্যান্টিবায়োটিকস ও ভ্যাকসিনগুলোর আবিষ্কার। কিন্তু সম্প্রতি গবেষকরা এটা বুঝতে পেরেছেন যে মানবদেহ ট্রিলিয়ন মাইক্রোবিয়েস দ্বারা অধ্যুষিত হয়ে আছে। ফলে মানুষ ও জীবাণুর সম্পর্ক আরো বেশি সূক্ষ্ম হয়েছে।

আনডার্ক থেকে সংক্ষেপে অনূদিত। সৌজন্যে : বণিক বার্তা

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ