আজকের শিরোনাম :

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন না পেলে কী হবে?

  স্ক্রলডটইন

১৯ আগস্ট ২০২০, ১৩:৪৪ | অনলাইন সংস্করণ

নভেল করোনাভাইরাসের ১৭৫টি ভ্যাকসিন বর্তমানে বিকাশমান আছে। প্রায় সব সরকার করোনাভাইরাস মহামারীকে মোকাবেলা করছে এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে যে ভ্যাকসিন শেষ পর্যন্ত ভাইরাসের বিরুদ্ধে বিস্তৃতভাবে সুরক্ষা দিতে পারবে এবং আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নেবে।

কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই যে এমনটা ঘটবে। এমনকি সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ঘটনার ক্ষেত্রেও আমরা এখনো নিশ্চিত নই যে কোনো ভ্যাকসিন স্থায়ীভাবে কভিড-১৯ থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারবে এবং ধীরে ধীরে ভাইরাসকে নির্মূল করতে কিংবা প্রাদুর্ভাবকে সীমিত রাখতে পারবে কিনা।

হয়তো ভ্যাকসিন উপসর্গের তীব্রতা কমাতে পারবে কিংবা সাময়িক সুরক্ষা দিতে পারবে। যদি সে রকম হয় তাহলে কী হবে?

কিছু মানুষ যুক্তি দেখিয়ে বলেন, যথেষ্ট পরিমাণ জনগণ কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে এবং ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারলে আমরা হার্ড ইমিউনিটিতে পৌঁছতে পারব। ফলে ভাইরাস আর বিস্তৃত হতে পারবে না। কিন্তু হার্ড ইমিউনিটি বলতে কী বোঝায় এবং কীভাবে ভাইরাস ছড়ায়, এটা সে সম্পর্কিত ভুল ধারণা। কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য এটা বাস্তবসম্মত উপায় নয়।

হার্ড ইমিউনিটি হচ্ছে তা যা আমাদের সাহায্য করে ভ্যাকসিন ব্যবহারের মাধ্যমে রোগ নির্মূল করতে। জনসংখ্যার সে অংশ, যাদের ভ্যাকসিন দেয়া জরুরি হার্ড ইমিউনিটিতে পৌঁছার জন্য। এটা হিসাব করা হয় ব্যাসিক প্রি-প্রডাক্টিভ রেট (আরও) ব্যবহার করে।

এটা হচ্ছে আক্রান্ত মানুষের গড় যেখানে তারা প্রত্যেকে কোনো ধরনের মেডিকেল ও জনস্বাস্থ্যের হস্তক্ষেপ ছাড়াই প্রাকৃতিভাবে রোগটি ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটি নির্ভর করছে রোগটা কতটা সংক্রামক এবং কীভাবে এটি বিস্তার লাভ করছে তার ওপর।

আর নম্বর যত উচ্চ হবে, তত অনেক বেশি মানুষকে ইমিউন হতে হবে ভ্যাকসিন গ্রহণের মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তৃতি থামানোর জন্য। পাশাপাশি এটাও মেনে নিতে হবে যে কিছু মানুষ ভ্যাকসিন নিতে পারবে না। কেউ কেউ মেডিকেলের কারণে এবং কেউ হয়তো এটাকে প্রত্যাখ্যান করবে।

অনেক রোগ অনেক দেশে নির্মূল হয়েছে ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি উৎপাদনের মাধ্যমে। কিন্তু হার্ড ইমিউনিটি এমন কিছু না যা কিনা প্রাকৃতিক সংক্রমণ দ্বারা অর্জিত হতে পারে।

এক্ষেত্রে হামের উদাহরণ নেয়া যেতে পারে, যা কিনা ভাইরাস দ্বারা হয়। এটি কয়েক শতক ধরে মানুষের সঙ্গে আছে, যা কিনা উচ্চমাত্রায় সংক্রামক। যার আরও মান হচ্ছে ১৫।

এর অর্থ হচ্ছে এ রোগে আক্রান্ত একটি শিশু আরো ১৫ জনকে সংক্রমিত করতে পারে। যার ফলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের জনসংখ্যার প্রায় ৯৫ শতাংশকে এ রোগের প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। অনেক মানুষ যারা কিনা হাম থেকে সেরে উঠেছে, তাদের আবার ভালো ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ফলে তারা বাকি জীবন এ রোগ থেকে সুরক্ষা লাভ করে।

কিন্তু তার পরও হাম শৈশবের খুব কমন রোগ। প্রতিটি নতুন প্রজন্ম এ রোগের প্রতি সংবেদনশীল এবং খুব বেশি মানুষ প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধী হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে পারে না।

১৯৩০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্থানে ক্ষণস্থায়ী হার্ড ইমিউনিটি রেকর্ড করা হয়। কিন্তু এটা ছিল ব্যতিক্রম এবং তাই বেশির ভাগ দেশ হামের ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম শুরু করে এবং তারা রোগ নির্মূলের কাছাকাছি আসে।

বিজ্ঞানীদের মতে, সার্স-কোভ-২-এর আরও মান হচ্ছে ৪ থেকে ৬-এর মাঝে। যা কিনা রুবেলা ভাইরাসের সঙ্গে সাদৃশ্যসম্পন্ন। হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করে রুবেলা দূরীকরণে যে ভ্যাকসিনেশন লেভেল প্রয়োজন তা হলো ৮৫ শতাংশ।

করোনাভাইরাসের প্রাকৃতিক ইমিউনিটি

আমরা জানি যে অন্যান্য করোনাভাইরাস (যেখানে সার্স, মার্স এবং কিছু পুরনো ভাইরাস অন্তর্ভুক্ত) তারা হামের মতো ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না। কভিড-১৯-এর গবেষণা দেখায় এমনকি হটস্পটেও যেখানে গত কয়েক মাসে অনেক বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা দেখা গেছে, সেখানে ১০ শতাংশেরও কম জনগণের মাঝে সংক্রমণ থেকে ইমিউন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

এটি যা বলছে তা হলো প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধ গড়ার যে প্রচেষ্টা তা কাঙ্ক্ষিত ৮৫ শতাংশ থেকে অনেক দূরে, যা কিনা হার্ড ইমিউনিটির জন্য দরকার। এর অর্থ হচ্ছে ভ্যাকসিন ছাড়া ভাইরাসটি এন্ডেমিক হিসেবে থেকে যাবে। এটি তখন জনগণের মাঝে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে সেসব করোনাভাইরাসের মতো, যা কিনা সর্দি-জ্বরের কারণ।

গবেষণা দেখায় কিছু মানুষ বছরে একবারের বেশি সাধারণ সর্দি-জ্বরের করোনাভাইরাসের একই স্ট্রেইন পেয়ে থাকে। এছাড়া অনেক দেশ কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখেছে, এমনকি যখন তারা ভেবেছিল যে সংক্রমণ কম-বেশি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।

তাই এ সম্ভাবনা আছে যে করোনাভাইরাসের চলমান প্যাটার্ন আরো বেশি স্থানীয় সংক্রমণ হিসেবে থাকবে। যেখানে শীতের সময়ে আরো অনেক বেশি কেস দেখা যাবে। যদি প্রথম কেস শনাক্ত হওয়ার পর দ্রুত আইসোলেটেড করা না যায়, তবে এ সংক্রমণ বিস্তৃতভাবে ভৌগোলিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে।

এ কারণে জনস্বাস্থ্য বিধিগুলো যেমন সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরা এবং হাত ধোয়ার যে অভ্যাস তা মেনে চলা বেশ জরুরি। যা ভাইরাসের স্তরকে নিচে রাখতে পারে।

যদি এটা করার ক্ষেত্রে সফল হওয়া যায় তাহলে শেষ পর্যন্ত ভাইরাস আর বিস্তৃত হতে পারবে না, যেমনটা হয়েছিল সার্স-কোভ ভাইরাসের ক্ষেত্রে। ২০০২-০৪ সালে যার প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল। কিন্তু কভিড-১৯ অনেক বেশি সংক্রামক এবং কম মরণাঘাতী। তাই একে নিয়ন্ত্রণ করা সার্সের চেয়ে কঠিন। তাই এভাবে এটিকে নির্মূল করা সম্ভব নাও হতে পারে।

বহু লোক করোনায় মারা গেছে এবং অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভুগছে। যদি এ ভাইরাস এন্ডেমিক হয়ে যায়, আমাদের তার পরও চেষ্টা করতে হবে সংক্রমণ যত বেশি সম্ভব রোধ করার।

একটি ভ্যাকসিন এই মহামারীর সমাপ্তি ঘটাতে পারে কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে হার্ড ইমিউনিটি তৈরির আগ পর্যন্ত আমরা হয়তো কভিড-১৯-এর হুমকি দীর্ঘ সময় ধরে মোকাবেলা করব।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ