আজকের শিরোনাম :

ভারতে বেড়াতে গিয়ে কী পরিমাণ খরচ করেন বাংলাদেশিরা?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০১৮, ১১:৩৭

ঢাকা, ১৯ জুলাই, এবিনিউজ : ভারতে প্রতিবছর যে লাখ লাখ বাংলাদেশি পর্যটক যান ও যাদের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে, তারা ভারতে গিয়ে কী পরিমাণ টাকা-পয়সা খরচ করেন?

ভারতের পর্যটনমন্ত্রীর মতে, পশ্চিমা পর্যটকদের চেয়ে বাংলাদেশিদের খরচ করার পরিমাণ কিন্তু কোনো অংশে কম নয়।

বিবিসি বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, পাঁচতারা হোটেল বা বিমানের বিজনেস ক্লাসে অত না করলেও বাংলাদেশিরা কেনাকাটায় আর মেডিক্যাল বিলে ভারতে একটা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেন- আর সে কারণেই ভারত চাইছে সে দেশ থেকে আরও বেশি পর্যটক আসুন।

ভারতে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের খরচের ধরনটা কী রকম এবং ভারতের পর্যটন শিল্পই বা তাদের কী চোখে দেখছে? 

যে দেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক আসেন, আমেরিকাকে টপকে প্রায় বছরতিনেক হলো সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ ।

ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস থেকেই এখন বিশ্বের যে কোনো ভারতীয় মিশনের চেয়ে বেশি ভিসা মঞ্জুর হয়, আর প্রতি বছরই অন্তত ১৬ থেকে ১৭ লাখ বাংলাদেশি এখন ভারতে আসছেন।

কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর শ্বেতাঙ্গ পর্যটকদের মতো বেড়াতে এসে তারা অতটা খরচ করেন না বলে যে ধারণা আছে, ভারতের পর্যটনমন্ত্রী কে জে আলফানসোর মতে সেটা সম্পূর্ণ ভুল।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি পর্যটকরা কিন্তু এখানে এসে প্রচুর টাকা খরচ করেন। তাদের খরচের জায়গা মূলত দুটো- বিয়ের জন্য কেনাকাটা, আর মেডিকেল ট্যুরিজম।’

তিনি বলেন, এ দুটো খাতেই তারা বিপুল খরচ করেন। কোনো কার্পণ্য না করে দুই হাতে টাকা খরচ করেন। কাজেই আমি তো খুব খুশি, বাংলাদেশিদের বলব আপনারা আরও বেশি করে আসুন!

ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকা থেকে যে পর্যটকরা ভারতে আসেন, তারা তাদের বাজেটের একটা বড় অংশ খরচ করেন পাঁচতারা হোটেলে কিংবা প্যালেস অন হুইলসের মতো বিলাসবহুল ট্রেনে বা পরিবহনে।

দিল্লিতে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অপারেটরস বা আইএটোর প্রেসিডেন্ট প্রণব সরকার বলেন, বাংলাদেশি পর্যটকদের যে খরচের প্যাটার্ন তাতে এ দেশের পর্যটন খাত হয়তো সরাসরি ততটা লাভবান হচ্ছে না, কিন্তু দেশের অর্থনীতির জন্য তা অন্যভাবে সুফল বয়ে আনছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশিদের জন্য হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রির হয়তো তেমন লাভ নেই। কারণ অনেক সময়ই তারা হয়তো চেনাশুনো বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেই থাকছেন, এবং লো বাজেটেই তাদের চলে যাচ্ছে।’

প্রণব সরকার বলেন, ‘একজন ইউরোপিয়ান ট্যুরিস্ট যদি গড়ে দৈনিক একশো ডলার খরচ করেন, বাংলাদেশিরা কিন্তু ২০-২৫ ডলারের মধ্যেই খরচটা সীমিত রাখছেন। মানে ইউরোপীয়দের তুলনায় গড়ে একজন বাংলাদেশি আমাদের পর্যটন খাতে মাত্র ২৫ শতাংশ খরচ করছেন।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু তারা সেটা পুষিয়ে দিচ্ছেন অন্য জায়গায়। বিয়ের কেনাকাটার নানা জিনিসপত্র বিপুল পরিমাণে কিনে আর মেডিকেল ট্যুরিজমের জন্য যারা আসছেন, তারা হাসপাতালের বিল মিটিয়ে মোট খরচের অঙ্কটা হরেদরে পশ্চিমাদের মতো সেই একই দাঁড়াচ্ছে।’

এ ছাড়া আজমির শরিফের মতো তীর্থস্থানে গিয়েও অনেক অর্থ খরচ করেন একদল বাংলাদেশি।

ওদিকে পশ্চিমা পর্যটকদের মধ্যে একটা বড় অংশ থাকে ব্যাকপ্যাকার বা খুব কম বাজেটের পর্যটক- তাদের স্যুভেনির কেনার প্রায় কোনো বালাই-ই নেই।

অন্য শ্বেতাঙ্গ পর্যটকদের মধ্যেও কেনাকাটার বাতিক অতটা থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশিরা এখানে বিরাট ব্যতিক্রম, বলছিলেন কলকাতার হিন্দুস্তান ট্র্যাভেলসের শিবানী ভট্টাচার্য।

তার কথায়, ‘কলকাতায় আসা বাংলাদেশীদের প্রধান টার্গেটই থাকে শপিং। তাদের জন্য ট্র্যাভেল প্ল্যান করার সময় আমাদের সব সময় বলা হয়, অন্তত একটা পুরো দিন যেন কেনাকাটার জন্য বরাদ্দ থাকে! আসলে কলকাতায় আধুনিক ফ্যাশনেবল জামাকাপড় ও অন্যান্য আরও নানা জিনিস তুলনায় শস্তায় পাওয়া যায়, এই ধারণা থেকেই বোধহয় সেটা করা হয়!’

শিবানী ভট্টাচায বলেন, ‘পশ্চিমা দেশের পর্যটকরা যে একেবারে কেনাকাটা করেন না, তা নয়। তারা যত বেশি সম্ভব ঘুরতে চান। কিন্তু তারাও জিনিসপত্র কেনেন, তবে বড়জোর দু-একটা। কিন্তু বাংলাদেশিরা ব্যাগ ব্যাগ বোঝাই করে কিনে নিয়ে যান।’

ভারতের পর্যটন বিভাগ বিজ্ঞাপনী ক্যাম্পেন, প্রোমো বা রোড শোর মাধ্যমে চিরকাল পশ্চিমা দেশের পর্যটকদেরই টানার চেষ্টা করে এসেছে, কিন্তু পর্যটনমন্ত্রী কে জে আলফানসো বিবিসিকে বলেন সেই দৃষ্টিভঙ্গি এখন পাল্টানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমার দেশে সাদা, কালো না বাদামি চামড়ার পর্যটক আসলো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। যতক্ষণ তারা এদেশে কর্মসংস্থান তৈরি করছেন, আমার পকেটে টাকা আসছে আর ভারতকে দেখে তারা বলছেন বাহ্, কি সুন্দর দেশ তাতেই আমরা খুশি।’

কে জে আলফানসো বলেন, আর বাংলাদেশিরা কেনই বা ভারতে আসবেন না- এত কম খরচে এত ভালো ডাক্তার আর চিকিৎসা পরিষেবাই বা তারা কোথায় পাবেন? আমেরিকা-বিলেতের চেয়ে খরচের ভগ্নাংশেই তারা এখানে দারুণ চিকিৎসা পাবেন।

মাত্র দিনকয়েক আগেই ঢাকায় উদ্বোধন হয়েছে সারা বিশ্বের মধ্যে ভারতের বৃহত্তম ভিসা সেন্টার, বাংলাদেশিদের জন্য অনেক শিথিলও করা হয়েছে ভারতীয় ভিসার কড়াকড়ি।

আর পর্যটনমন্ত্রীর কথা থেকেই স্পষ্ট, কেন বাংলাদেশি পর্যটক টানতে আরও মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত!
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ