ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও বিলীন হবে না করোনা ভাইরাস

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২০, ১০:১০

করোনা ভাইরাস হয়তো কখনোই বিলীন হবে না। ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং ব্যবহার শুরুর পরেও হয়তো বছরের পর বছর করোনার উপস্থিতি থেকেই যাবে এবং মানুষের মধ্যে এর সংক্রমণ ঘটতে থাকবে।

করোনা নিয়ে এভাবেই সতর্ক করলেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে তারা হাম, এইচআইভি এবং চিকেনপক্সের উদাহরণ টেনে এনেছেন।

এদিকে করোনা রোগীর চিকিৎসায় বহুল আলোচিত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ইউরোপের চার দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ওষুধটির ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবুও মঙ্গলবার ভারতে অনুমতি পেল ওষুধটি।

এর আগে চলতি মাসের মাঝামাঝি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, করোনা হয়তো চিরতরে যাবে না। এইচআইভি ভাইরাসের মতো কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস স্থানীয় ভাইরাস হয়ে যেতে পারে।

তাই বিশ্বজুড়ে প্রতিটি মানুষকে এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা শিখতে হবে। কবে নাগাদ এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

আরও কিছু রোগের মতো করোনাও হয়তো স্থায়ী হয়ে যাবে। বর্তমানে চারটি করোনাভাইরাসের উপস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে, যেগুলোর কারণে সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত রোগ দেখা দেয়। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন কোভিড-১৯ এই তালিকায় ৫ম ভাইরাস হিসেবে স্থায়ীভাবে থেকে যাবে।

ইমিউনিটি সিস্টেম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ভাইরাসের কার্যকারিতা কমতে শুরু করবে। ফলে আমাদের শরীর এই ভাইরাসের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিবে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইপিডেমিওলজিস্ট এবং বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানী সারাহ কোবেই বলেন, এই ভাইরাস এখানেই থাকবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কীভাবে এর সঙ্গেই নিরাপদে থাকতে পারব।

সাম্প্রতিক সময়ে তিনজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ রোধে ৬ ফুট দূরত্ব যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রেও সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

একই সঙ্গে তারা বলছেন, বাতাসের মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার বিষয়টিকে বিশ্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত। বিজ্ঞানভিত্তিক একটি জার্নালে সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানেই সামাজিক দূরত্ব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।

সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উপসর্গহীন রোগীদের খুঁজে বের করতে প্রতিদিন ব্যাপক হারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন ওই বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সব পরিস্থিতিতে শুধু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত গাইডলাইনই যথেষ্ট নয়।

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাতালি ডিন বলেন, লোকজন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার কথা বলছে। কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ে ভবিষ্যতের জীবন-যাপন কখনোই স্বাভাবিক হবে না।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমরা ভিন্ন উপায় বের করতে পেরেছি এবং এটা আবিষ্কার করেছি যে কোনটি কাজ করছে। এভাবেই আমরা আমাদের সমাজ এবং জীবন-ব্যবস্থা পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছি।

হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ইউরোপে নিষিদ্ধ, ভারতে অনুমতি : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় বিতর্কিত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইউরোপের চার দেশ।
এগুলো হল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি ও বেলজিয়াম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও করোনা চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

তবুও মঙ্গলবার ভারতে করোনা চিকিৎসায় অনুমতি দেয়া হয়েছে এই ওষুধের। ভারতের শীর্ষ বায়োমেডিক্যাল রিচার্স সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) এই অনুমোদন দেয়।

তাদের মতে, ভারতে এই ওষুধটি করোনা রোগীদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে এবং ছয় সপ্তাহের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
সুতরাং এই ওষুধটি চালিয়ে নেয়া যায়। আইসিএমআর’র মহা-পরিচালক বলরাম ভারগাবা বলেন, আমরা হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনকে করোনা এড়ানোর জন্য অনুমোদন দিয়েছি। এটা চলতে পারে। কারণ, এটা সেবনে কোনো ক্ষতি নেই।

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সাধারণত ম্যালেরিয়া, বাত বা ত্বকে সংক্রমণ জাতীয় রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এই ওষুধ কার্যকরী বলে কেউ কেউ দাবি করলে তা প্রয়োগের অনুমতি দেয় অনেক দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওষুধটিকে ‘যুগান্তকারী’ হিসেবেও উল্লেখ করেন।

১০০ কোটি ভ্যাকসিন তৈরির লক্ষ্য নোভাভ্যাক্সের : যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি তাদের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন মানব শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে যাচ্ছে।

ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যভিত্তিক বায়োটেকনোলজি কোম্পানি নোভাভ্যাক্স অন্তত ১৩০ জনের শরীরে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা করতে যাচ্ছে। পরীক্ষা নিরীক্ষার পরবর্তী ধাপগুলোতে সফল হলে এ বছর ১০ কোটি ও সামনের বছর ১০০ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে নোভাভ্যাক্স।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ