করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে সাধারণ ছুটি কতটা কার্যকর হচ্ছে?
পারমিতা হিম • বিবিসি
০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৬:৫৮ | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণার সতের দিন পরে সংক্রমণ ঠেকাতে দশ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। গত মঙ্গলবার এ ছুটির মেয়াদ আগামী ৯ই এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। কিন্তু যে উদ্দেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেই সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করছেন না অধিকাংশ মানুষ।
সরকার ঘোষিত তিন সপ্তাহের সাধারণ ছুটিতে রাজধানীর মহাসড়কগুলো একেবারে ফাঁকা থাকলেও, রাজধানীর অলিগলি, পাড়া মহল্লায় একেবারেই ভিন্ন চিত্র। কোথাও কোথাও ফাঁকা রাস্তায় ক্রিকেট খেলতে দেখা যায় তরুণদের। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বাড়িতে থাকার অনুরোধ জানানো হলেও গ্রামাঞ্চলে এ নিয়ে সচেতনতা বেশ কম।
বাড়ির বাইরে বের হবার নির্দেশনা একেবারেই মানছেন না গ্রামে বসবাসকারীরা।
নোয়াখালীর তানজিলা আক্তার বলছিলেন, "নোয়াখালীর পর্যটন এলাকাগুলোতে মানুষের ভিড় বেড়ে গেছে। এই ছুটির মধ্যে অনেকেই বিয়ের অনুষ্ঠানও সেরে ফেলছেন।"
গাইবান্ধার একজন স্বাস্থ্যকর্মী সানজিদা রহমান জানান, "বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশ কম হওয়ায় এ নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই এ অঞ্চলের মানুষের।"
তিনি বলছিলেন, তার গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন করোনাভাইরাস উন্নত দেশের মত বাংলাদেশে মহামারি আকারে ছড়াবে না।
'ছুটি শব্দটি ব্যবহার সরকারের ভুল'
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশ অন্য দেশের সাথে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত ২১ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে। অথচ বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসক ও গবেষক ড. এম এ হাসান বিবিসিকে বলেন, "সাধারণ ছুটি শব্দগুলোর মধ্যে দিয়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব কমিয়ে ফেলা হয়েছে। এটি সাধারণ ছুটি নয় সেটি মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।" সাধারণ ছুটিকে সরকারের 'অঘোষিত লকডাউন' বলে মনে করছেন ভাইরোলজিস্ট ড. সাইফুল্লাহ মুন্সি। তিনি বলেন, "সংক্রমণ ঠেকাতে আরো আগেই এ পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল।" করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য এ বি এম আবদুল্লাহ সরকারের এ পদক্ষেপকে 'ত্রুটিপূর্ণ' বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, "ছুটি শব্দটা বলা সরকারের ভুল হয়েছে। তাছাড়া এটা আরো আগেই নেয়া দরকার ছিল।" ডা. আবদুল্লাহ বলেন, "দরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনা করে সরকার কিছুটা সময় নিয়েছে।" গার্মেন্টস কি খোলা থাকবে?
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়া ফাউন্ডেশনের মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ তৈরি পোশাক খাতে কাজ করে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ তৈরি পোশাক কারখানাতে ঘিঞ্জি পরিবেশে কাজ করেন কর্মীরা। গত ২৪ শে মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে ২৬ শে মার্চ সরকারি ছুটির দিন থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দশ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, যেখানে কাঁচা বাজার, খাবার, ওষুধের দোকান ও জরুরি পরিষেবার পাশাপাশি রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা চালু রাখার কথা বলা হয়। পরে এ ছুটির মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার বলেন, "মঙ্গলবার থেকে অধিকাংশ গার্মেন্টস বন্ধ থাকলেও সেগুলো এই বর্ধিত ছুটির আওতায় থাকবে তা এখনো অস্পষ্টই রয়ে গেছে।" 'সামাজিক দূরত্ব' রক্ষা জরুরি
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশের মুখপাত্র ড. বর্দন জাঙ রানা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে অবশ্যই যে পদক্ষেপগুলো নেয়া দরকার তার মধ্যে একটি হল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। তবে এটিই সব নয়। জনসাধারণকে এ সামাজিক দূরত্বের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করা ও দেশগুলিকে সমন্বিতভাবে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশে প্রথম আক্রান্ত শনাক্তের ২৪ দিন পরে, বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও হোম কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এসব ব্যবস্থা সারাদেশে সংক্রমণ রোধে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। এবিএন/জনি/জসিম/জেডি
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশ অন্য দেশের সাথে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত ২১ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে। অথচ বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসক ও গবেষক ড. এম এ হাসান বিবিসিকে বলেন, "সাধারণ ছুটি শব্দগুলোর মধ্যে দিয়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব কমিয়ে ফেলা হয়েছে। এটি সাধারণ ছুটি নয় সেটি মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।" সাধারণ ছুটিকে সরকারের 'অঘোষিত লকডাউন' বলে মনে করছেন ভাইরোলজিস্ট ড. সাইফুল্লাহ মুন্সি। তিনি বলেন, "সংক্রমণ ঠেকাতে আরো আগেই এ পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল।" করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য এ বি এম আবদুল্লাহ সরকারের এ পদক্ষেপকে 'ত্রুটিপূর্ণ' বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, "ছুটি শব্দটা বলা সরকারের ভুল হয়েছে। তাছাড়া এটা আরো আগেই নেয়া দরকার ছিল।" ডা. আবদুল্লাহ বলেন, "দরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনা করে সরকার কিছুটা সময় নিয়েছে।" গার্মেন্টস কি খোলা থাকবে?
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়া ফাউন্ডেশনের মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ তৈরি পোশাক খাতে কাজ করে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ তৈরি পোশাক কারখানাতে ঘিঞ্জি পরিবেশে কাজ করেন কর্মীরা। গত ২৪ শে মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে ২৬ শে মার্চ সরকারি ছুটির দিন থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দশ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, যেখানে কাঁচা বাজার, খাবার, ওষুধের দোকান ও জরুরি পরিষেবার পাশাপাশি রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা চালু রাখার কথা বলা হয়। পরে এ ছুটির মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার বলেন, "মঙ্গলবার থেকে অধিকাংশ গার্মেন্টস বন্ধ থাকলেও সেগুলো এই বর্ধিত ছুটির আওতায় থাকবে তা এখনো অস্পষ্টই রয়ে গেছে।" 'সামাজিক দূরত্ব' রক্ষা জরুরি
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশের মুখপাত্র ড. বর্দন জাঙ রানা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে অবশ্যই যে পদক্ষেপগুলো নেয়া দরকার তার মধ্যে একটি হল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। তবে এটিই সব নয়। জনসাধারণকে এ সামাজিক দূরত্বের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করা ও দেশগুলিকে সমন্বিতভাবে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশে প্রথম আক্রান্ত শনাক্তের ২৪ দিন পরে, বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও হোম কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এসব ব্যবস্থা সারাদেশে সংক্রমণ রোধে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। এবিএন/জনি/জসিম/জেডি
এই বিভাগের আরো সংবাদ