আজকের শিরোনাম :

আফগান সংকট

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সই করার পর এখন তালেবান কী করবে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২০, ১৪:৪৪

দোহায় শনিবার স্বাক্ষরিত চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র, আফগানিস্তান এবং তালেবান কর্মকর্তা কোন পক্ষই ‘শান্তিচুক্তি’ আখ্যায়িত করেনি এখনো। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগে আফগানিস্তানে যখন থেকে সংঘাত কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়, যাকে বলে এক ধরণের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে, তখন থেকে দেশটিতে এ নিয়ে কিছুটা সতর্ক আশাবাদ দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিক জীবনের আশা কতটা করা যাবে সেটা এখনো কেউ বলতে পারছে না।

১৮ বছর ধরে চলছে এই আফগান যুদ্ধ, বছরের পর বছর ধরে তালেবান ক্রমে একটু একটু করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে বিভিন্ন এলাকায়, বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে স্থানীয় নির্বাচনে। যদিও দেশটির শহর অঞ্চলগুলোতে এখনো নিয়ন্ত্রণ নেই তাদের।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবান নেতৃত্ব উভয় পক্ষই এখন বুঝতে পারছে যে কোনো পক্ষই নিরঙ্কুশ সামরিক বিজয় লাভ করতে পারবে না।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে চান।

এখানে যুক্তরাষ্ট্র যে ছাড় দিয়েছে, মানে যার জন্য চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলো, তা হচ্ছে ২০১৮ সালে নেয়া নতুন মার্কিন নীতি। তার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মনে করত আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানকেই প্রথম আলাপ শুরু করতে হবে। কিন্তু আফগান সরকারকে তালেবান কখনই বৈধ হিসেবে মেনে নেয়নি। কিন্তু সে অবস্থান থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি তালেবানের সঙ্গে বৈঠকে বসে এবং তাদের প্রধান আপত্তি অর্থাৎ আফগানিস্তানে বিদেশী বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা শুরু করে। সেই আলোচনার ফলাফলই ক্রমে শনিবারের চুক্তি স্বাক্ষর পর্যন্ত পৌঁছায়।

বিনিময়ে তালেবান সম্মত হয়েছে, ঠিক যে কারণে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালিয়েছিল তা দূর করতে অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদের পথ থেকে সরে আসবে।

সংঘাতের অবসান কি হবে?
এখন এই চুক্তির পর তালেবানদের সঙ্গে আফগান রাজনীতিক, বিশেষ করে সরকারের আলোচনার পথ উন্মুক্ত হলো। তবে সেই আলোচনা সহজ হবে না। তালেবানদের ইসলামী রাষ্ট্র আর আধুনিক গণতান্ত্রিক আফগানিস্তান এই দুই ধারণার মধ্যে সমন্বয় সহজ নয়। কিন্তু নারী অধিকার প্রশ্নে এখন তাদের অবস্থান কী হবে? গণতন্ত্রকে কীভাবে দেখে তালেবান?

এসব প্রশ্নের উত্তর তখনি পাওয়া যাবে যখন আন্ত-আফগান আলোচনা শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তালেবান এসব প্রশ্নে তালেবানের অবস্থান পরিষ্কার নয়। আর আলোচনা শুরুর আগ পর্যন্ত সম্ভবত এগুলোই বড় বাধা। আলোচনা শুরুর আগে তালেবান তাদের ৫ হাজার কারাবন্দির মুক্তি দাবি করেছে। কিন্তু আফগান সরকার তালেবানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর কাজে এই বন্দিদের কাজে লাগাতে চায়।

এর পর দেশটিতে সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আশরাফ ঘানি ও তার প্রতিপক্ষ আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর মধ্যকার বিতর্কও আলোচনায় আছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থাও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সমন্বয়ে আলোচক দল তৈরিতে একটি বড় বাধা তৈরি করেছে।

বিবিসির কাছে এক আফগান কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, প্রক্রিয়া এখন শুরু হলেও ‘আন্ত-আফগান’ আলোচনা শেষ হতে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে যদি নতুন চুক্তি অনুযায়ী তালেবান প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটো সহযোগীরা আফগানিস্তান থেকে আগামী ১৪ মাসের মধ্যে সব সৈন্য সরিয়ে নেবে। কিন্তু যদি কোনো চুক্তি কার্যকর না হয়, তা হলে মার্কিন সেনারা দেশটিতে থাকবে না ১৪ মাস পর তারা চলে যাবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি ‘শর্তসাপেক্ষে’ হবে বলে আফগান কর্মকর্তারা মনে করেন।

এক কূটনীতিক বলেছেন, সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি আলোচনা শুরুর শর্ত, আলোচনার পরিসমাপ্তির নয়।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের পর যদি তালেবান নতুন করে সংঘাতে জড়াতে চায়, তখন সরকারি বাহিনী মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

কোন কোন বিশ্লেষক যদিও সতর্ক করেছেন এই বলে যে, এখনো পর্যন্ত তালেবানকে দেখে মনে হচ্ছে না যে তারা কোন ছাড় দেবে এবং চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টিকে তারা নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখে। যদিও তালেবান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বৈধতা চায় সেটা ইতোমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গেছে।

দোহায় যে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে চুক্তির সময় তাতে সেটি বোঝা গেছে, এবং চুক্তির শর্তগুলোকে তারা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের সুযোগ মনে করতে পারে। এখন যে কোনো সাধারণ আফগানের জন্য প্রধান চাওয়া হচ্ছে, স্বল্প সময়ের জন্য হলেও যেন সংঘাতের অবসান হয়।

আসছে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যখন বসন্ত শুরু হবে, এবং দেশটির আবহাওয়া উষ্ণ হয়ে উঠবে, যেটাকে সাধারণত ‘সংঘাতের মৌসুম’ শুরু হবে, তখন বোঝা যাবে চুক্তির কী ফল দৃশ্যমান হবে।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ