আজকের শিরোনাম :

ডাকঘর সঞ্চয়পত্র সুদের হার কমানো কতটা যৌক্তিক?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:০৬

বাংলাদেশে সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ, অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগী এবং শহরের বাইরে গ্রামে যারা থাকেন, অর্থ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে তাদের কাছে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক বেশ জনপ্রিয়। হঠাৎ সুদের হার অর্ধেক হবার ঘোষণায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকেরা।

সুদের নতুন হার ১৩ই ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে, অর্থাৎ এর আগে যারা আমানত রেখেছেন তারা পূর্ব নির্ধারিত হারেই সুদ পাবেন।

তব্ওু ভরসা রাখতে পারছেন না আমানতকারীরা। তাদেরই একজন ড. নাজমুল হক। তার ছেলেমেয়েরা বিদেশে যাবার আগে জমি জমা বিক্রি করে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে স্কিমে তিরিশ লাখ টাকা রেখেছিলেন। নতুন সুদহারের ঘোষণা শুনে তিনি রাজধানীর জিপিও-তে ছুটে এসেছেন।

মি. হক বলছিলেন, "ত্রিশ লাখ টাকার পুরোটাই তুলে নিয়ে যাব আমি। অনেক আশা করে এখানে টাকা রেখেছিলাম, ছেলেমেয়েরা এসে দেখবে যা পাবার কথা ছিল কিছুই নেই।"

এর আগেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ বছর সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে আয়কর কর্তনের হার দুইগুণ বাড়ানো হয়। আরোপ করা হয় নানা শর্ত।

এর ফলে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন গৃহিণী নীলা খন্দকারের মত অনেকেই , যাদের দৈনন্দিন ব্যয়ের পুরোটাই নির্ভর করে সঞ্চয়পত্রের ওপরে।

মিসেস খন্দকার বলছিলেন, "বড় ক্ষতির মুখে পড়বো আমি। আমার জীবনযাত্রায় এখন বড় পরিবর্তন আসবে। খাওয়া দাওয়ার খরচ কমাতে হবে। বিনিয়োগের আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আর কোথায়ই বা যাব?"

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডাকঘরে সঞ্চয়ে নিট বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। তবে মোট জাতীয় সঞ্চয় স্কিমে জমা ৮৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার তুলনায় এ অর্থ নিতান্তই কম।

তাই সরকারের সিদ্ধান্তকে 'একেবারেই অযৌক্তিক' বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ।

তিনি বলেন, "সরকার ব্যাংকের আমানতের ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ ও ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়নের জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকে বিনিয়োগ অবশ্যই বাড়াতে হবে, তবে সেটা নিম্ন আয়ের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নয়। এ অল্প পরিমাণ সঞ্চয়ে সুদ কমিয়ে ব্যাংকে বিনিয়োগ বাড়ানো অসম্ভব ব্যাপার।"

বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে শুধু ব্যাংকের সুদের হার কমিয়ে ঐ খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করা যাবে না বলে মনে করেন আরেক অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ এর এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, "মানুষ ব্যাংকের ওপর আস্থা হারিয়েছে। শেয়ার বাজার বা বন্ড মার্কেটে তাদের অতীত অভিজ্ঞতাও বেশ নেতিবাচক। সরকারের উচিত হবে অল্প আয়ের মানুষদের জন্য নিরাপদ সঞ্চয়ের সুযোগ রাখা।"

বাংলাদেশে প্রবীণ, কর্মহীন বা দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যাপক অর্থে কোন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। সুদের হার কমানোর এ সিদ্ধান্তের ফলে সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন লক্ষ্যমাত্রাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

নানা মহলের সমালোচনার পর ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে সুদের হার পুনর্বিবেচনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে তা কবে এবং ঠিক কত হারে হতে পারে তা এখনো অনিশ্চিতই রয়ে গেছে।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ