বিবিসির প্রতিবেদন
সোলেইমানি হত্যা : ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ভবিষ্যৎ কী?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ১১:২৬
‘আসছে, আসছে,’ ইরাকের রাজধানী বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর ঘাঁটিতে লাউডস্পিকারে রকেট হামলার ব্যাপারে সতর্ক সংকেত বেজে উঠেছে।
এই এলাকাটি হচ্ছে গ্রিন জোন, যা একসময়ের ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেনের প্রাসাদ এবং আশেপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে।
প্রথম সতর্ক সংকেতের কয়েক সেকেন্ড পরে দুটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল। এর পর আরেকটি ঘোষণা শোনা গেল, ঘাঁটির সবাইকে নিরাপদ অবস্থানে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
এসব কাতিয়ুশা রকেটের লক্ষ্য সম্ভবত একটু দূরের মার্কিন দূতাবাসটি।
একঘণ্টা পরে জানানো হলো যে, সবাই এখন নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারেন। একটি রকেট কাছের টাইগ্রিস নদীতে পড়েছে, কিন্তু দুটি রকেট পড়েছে দূতাবাস চত্বরে।
‘এটাই প্রথমবার নয়, আর এটা শেষবারও হবে না,’ বলছেন ৪২ বছর বয়সী বেসামরিক একজন ব্যক্তি পারি, যিনি এই ঘাঁটিতে একজন ক্ষৌরকার হিসেবে কাজ করেন।
একসময় তিনি আফগানিস্তানের কাবুলে মার্কিন ঘাঁটিতে কাজ করতেন, কিন্তু সেটা খুব বিপদজনক হয়ে ওঠায় তিনি সেখান থেকে চলে আসেন।
সবাই তাকে বলেছিল যে, বাগদাদে তিনি অনেকটা শান্তির জীবন কাটাতে পারবেন। কিন্তু প্রথম যেদিন তিনি দূতাবাসে কাজ করতে আসেন, সেদিন রাতেই দুটি রকেট হামলা হয়।
চরম মুহূর্ত
২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের লক্ষ্য করে ১০৯টি কাতিয়ুশা রকেট হামলা হয়েছে। জোট বাহিনী বলছে, ইরান সমর্থিত আধা-সামরিক গ্রুপগুলো এই হামলা করছে। এর পরে তেসরা জানুয়ারিতে ঘটলো বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, যিনি ছিলেন ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান। পাঁচদিন পরে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা করে জবাব দেয় ইরান। এই হামলার ফলে ইরাকে যেসব জোট বাহিনীর ঘাঁটিতে মার্কিন সেনা রয়েছে, সেসব ঘাঁটি নতুন করে নিরাপত্তা নিয়মনীতি তৈরি করতে বাধ্য হয়। ঘাঁটির বাইরে সকল কর্মকাণ্ড এখন নিষিদ্ধ এবং সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রকাশ্যে চলাফেরার ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক জিনিসপত্র ব্যবহার করতে হয়। ইসলামিক স্টেট গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সঙ্গে অনেক অভিযানে অংশ নিয়েছি এবং ইরাকে তাদের অনেক ঘাটিতে গিয়েছি। আমাকে বলা হয়েছিল, ঘাটির ভেতরে শরীরবর্ম পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ এখানে আমি নিরাপদ। কিন্তু গতবারে এসে ইউনিয়ন থ্রি ঘাঁটি আমি যেমন দেখেছি, সে তুলনায় এখন অনেক বেশি খালি। জোট বাহিনীর অনেক সদস্যকে, নেটো সৈনিকরাও যাদের মধ্যে আছে, পার্শ্ববর্তী কুয়েতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা আমাকে জানিয়েছেন, যখন হুমকি কমে আসবে, তখন আবার সৈনিকদের এখানে ফিরিয়ে আনা হবে। সম্পর্কের টানাপোড়েন
মার্কিন কর্মকর্তারা অনুভব করছেন, সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের পর সেখানকার পরিস্থিতি আরও জটিল এবং গভীর হয়ে উঠছে। ইউনিয়ন থ্রি বেস হচ্ছে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরাকি ও জোট বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। যখন আগেরবার আমি এখানে ছিলাম, মার্কিন এবং ইরাকি কর্মকর্তারা মিডিয়ার কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন যে, তাদের সম্পর্ক পেশাগত এবং ব্যক্তিগতভাবে কতটা গভীর। উভয় পক্ষই ক্যামেরার সামনে এসে আইএস দমনে তাদের যৌথ লক্ষ্যের কথা বলতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু এখন জোট কর্মকর্তারা ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে অস্বস্তি বোধ করছেন। একসময়ে যা চমৎকার বন্ধুত্ব ছিল, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি তার ওপর ছায়া ফেলতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় জেনারেল সোলেইমানির সঙ্গে আরও নিহত হয়েছিলেন ইরানপন্থি প্যারা মিলিটারি বাহিনীর উপ-প্রধান, আবু মাহদি আল-মুহানদিস। মজার ব্যাপার হলো, তার মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই তিনি বাগদাদের এই গ্রিন জোনে ছিলেন। তার শিয়া মুসলিম আধা-সামরিক বাহিনী ইরানের কাছ থেকে সহায়তা পেয়ে আসছে, কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাকি সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্য এবং আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই ঘাঁটিতে তিনি ইরাকি সেনাবাহিনীর জেনারেলদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, যারা আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার। ইরাকি অংশীদারদের ঘাটিতে যেতে হলে যে করিডোর দিয়ে প্রতিদিন যেতে হয় জোট বাহিনীর কর্মকর্তাদের, সেখানে অন্যান্য ইরাকি কমান্ডারদের পাশাপাশি এখনো মুহানদিসের ছবিও ঝোলানো আছে। অন্ধকারের মধ্যে
ইউনিয়ন থ্রি ঘাটির দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন যে, তারা শুধু সকালে ফোন ঘাটতে গিয়ে ওই হামলার খবর জানতে পারেন। ‘যদি এমন কোন অভিযান চলে, যে বিষয়ে আপনারা জানার প্রয়োজন নেই, তাহলে আপনাকে তা জানানো হয় না,’ নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানালেন এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। ‘পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে যদি আপনাকে পড়তে হয়, তা হলেও না।’ এমনকি বাগদাদের মার্কিন ঘাঁটিতে যে ড্রোন অপারেটররা ছিলেন, তারাও প্রথমে মনে করেছিলেন, বিমানবন্দরের কাছাকাছি কূটনৈতিক আবাসিক এলাকায় হয়তো রকেট হামলা হয়েছে। কারণ ওই এলাকা লক্ষ্য করে আগেও রকেট হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরণের পরে তারা যখন আগুন দেখতে পান, তখন বুঝতে পারেন যে, এটা ছিল ড্রোন হামলা। কিন্তু তারাও বুঝতে পারছিলেন না, কে হামলাটি চালিয়েছে। এই ড্রোন হামলার ঘটনার কয়েকদিন আগে, মার্কিন ঘাটিতে রকেট হামলার জবাব দেয়ার জন্য ইরাক-সিরিয়া সীমান্তের উভয় পাশে কাতিব হেজবুল্লাহ মিলিশিয়ার সদর দপ্তরে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী, যাতে ওই শিয়া আধা-সামরিক বাহিনীর ২৫ জন সদস্য নিহত হয়। তাদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বড় ধরণের বিক্ষোভে রূপান্তরিত হয় এবং বাগদাদের মার্কিন দূতাবাসে হামলা করেন শোকবিহবল জনতা। কিন্তু শিয়া মিলিশিয়ারা মনে করে, ড্রোন হামলার মাধ্যমে সব সীমা অতিক্রম করে ফেলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপের সঙ্গে ‘আইএসকে পরাজিত’ করার কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে তাতে ক্ষুব্ধ ইরানপন্থি আধা-সামরিক বাহিনী এবং রাজনৈতিকরা দাবি করেন যেন, অতিসত্বর ইরাক ছেড়ে মার্কিন বাহিনী চলে যায়। কিন্তু জোট বাহিনী আশা করছে যে, তারা ইরাকি সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আইএসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত দফার অভিযান শুরু করতে পারবে। কিন্তু এ বিষয়ে অনিশ্চয়তায় উভয় পক্ষের কমান্ডারদের গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে অনাগ্রহী করে তুলেছে। বিশেষ করে যখন পরের দিনই রাজনৈতিকরা তাদের বিরোধিতা করতে পারে। ‘আমাদের টিম সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়, এবং মিশন শেষ করতে চায়। আমরা ইরাকি জনগণকে বিশ্বাস করি এবং এবং ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকেও বিশ্বাস করি,’ বলছেন এক জ্যেষ্ঠ জোট কর্মকর্তা, যিনি আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কয়েকবার ইরাকে এবং ইরাকি কমান্ডারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তার ইরাকি সহযোগীদের সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হয়, তারা একত্রে চা পান করতেন, কিন্তু ওই হামলার পর থেকে সম্পর্ক যেন অনেকটাই আনুষ্ঠানিক হয়ে উঠেছে। ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীগুলো মনে করে তারা ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংকটের ফাঁদে পড়ে গেছে। ইরাকি জয়েন্ট অপারেশন কমান্ডের মুখপাত্র মেজর জেনারেল তাহসিন আল-খাফাজি বলছেন, '‘এটা আমাদের সমস্যা নয়। এমনকি এটা সামরিক কোন সমস্যাও নয়। ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমস্যা আছে আর তারা আমাদের মাঝখানে ফেলে দিয়েছে। এই দুই দেশের জন্যই আমার বার্তা হলো : আমাদের সমস্যা এখানে নিয়ে এসো না।’ ইরাকি সামরিক বাহিনী বলছে যে, জেনারেল সোলেইমানি হত্যার পর জোট সহায়তা না পাওয়ায়, আইএসের বিরুদ্ধে তাদের একাই লড়াই করা ছাড়া বিকল্প নেই। ‘প্রথমবারের মতো আমরা আমাদের এফ-১৬ ফাইটার জেটগুলোকে উড়িয়েছি, আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালানোর জন্য,’ বলছেন জেনারেল খাফাজি। ‘এটা ঠিক যে, আমরা একা লড়াই করতে পারবো, কিন্তু আমরা এখনো জোট বাহিনীর সঙ্গে মিলে কাজ করতে চাই, যদি রাজনৈতিক কোনো সমস্যা না থাকে।’ এই মুহূর্তে সবকিছুই একটা ভারসাম্যের ওপর দুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী এতদিন যে হুমকি মোকাবেলা করতো, তা আইএসে থেকে সরে একেবারে ভিন্ন কিছু হয়ে গেছে। সেটা বেরিয়ে এলো মার্কিন এয়ারম্যান আলেজানড্রো পেনার বক্তব্যে, যিনি মাত্র দুই মাস আগে ইরাকে এসেছেন। ‘যখন আমাদের এখানে মোতায়েন করা হয়, আমি ভেবেছিলাম আমি আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছি। কিন্তু কয়েকমাস পরে এখানে দেখতে পাচ্ছি, আরে না, এখানে অন্য প্রতিপক্ষও রয়েছে।’ এবিএন/সাদিক/জসিম
২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের লক্ষ্য করে ১০৯টি কাতিয়ুশা রকেট হামলা হয়েছে। জোট বাহিনী বলছে, ইরান সমর্থিত আধা-সামরিক গ্রুপগুলো এই হামলা করছে। এর পরে তেসরা জানুয়ারিতে ঘটলো বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, যিনি ছিলেন ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান। পাঁচদিন পরে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা করে জবাব দেয় ইরান। এই হামলার ফলে ইরাকে যেসব জোট বাহিনীর ঘাঁটিতে মার্কিন সেনা রয়েছে, সেসব ঘাঁটি নতুন করে নিরাপত্তা নিয়মনীতি তৈরি করতে বাধ্য হয়। ঘাঁটির বাইরে সকল কর্মকাণ্ড এখন নিষিদ্ধ এবং সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রকাশ্যে চলাফেরার ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক জিনিসপত্র ব্যবহার করতে হয়। ইসলামিক স্টেট গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সঙ্গে অনেক অভিযানে অংশ নিয়েছি এবং ইরাকে তাদের অনেক ঘাটিতে গিয়েছি। আমাকে বলা হয়েছিল, ঘাটির ভেতরে শরীরবর্ম পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ এখানে আমি নিরাপদ। কিন্তু গতবারে এসে ইউনিয়ন থ্রি ঘাঁটি আমি যেমন দেখেছি, সে তুলনায় এখন অনেক বেশি খালি। জোট বাহিনীর অনেক সদস্যকে, নেটো সৈনিকরাও যাদের মধ্যে আছে, পার্শ্ববর্তী কুয়েতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা আমাকে জানিয়েছেন, যখন হুমকি কমে আসবে, তখন আবার সৈনিকদের এখানে ফিরিয়ে আনা হবে। সম্পর্কের টানাপোড়েন
মার্কিন কর্মকর্তারা অনুভব করছেন, সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের পর সেখানকার পরিস্থিতি আরও জটিল এবং গভীর হয়ে উঠছে। ইউনিয়ন থ্রি বেস হচ্ছে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরাকি ও জোট বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। যখন আগেরবার আমি এখানে ছিলাম, মার্কিন এবং ইরাকি কর্মকর্তারা মিডিয়ার কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন যে, তাদের সম্পর্ক পেশাগত এবং ব্যক্তিগতভাবে কতটা গভীর। উভয় পক্ষই ক্যামেরার সামনে এসে আইএস দমনে তাদের যৌথ লক্ষ্যের কথা বলতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু এখন জোট কর্মকর্তারা ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে অস্বস্তি বোধ করছেন। একসময়ে যা চমৎকার বন্ধুত্ব ছিল, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি তার ওপর ছায়া ফেলতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় জেনারেল সোলেইমানির সঙ্গে আরও নিহত হয়েছিলেন ইরানপন্থি প্যারা মিলিটারি বাহিনীর উপ-প্রধান, আবু মাহদি আল-মুহানদিস। মজার ব্যাপার হলো, তার মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই তিনি বাগদাদের এই গ্রিন জোনে ছিলেন। তার শিয়া মুসলিম আধা-সামরিক বাহিনী ইরানের কাছ থেকে সহায়তা পেয়ে আসছে, কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাকি সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্য এবং আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই ঘাঁটিতে তিনি ইরাকি সেনাবাহিনীর জেনারেলদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, যারা আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার। ইরাকি অংশীদারদের ঘাটিতে যেতে হলে যে করিডোর দিয়ে প্রতিদিন যেতে হয় জোট বাহিনীর কর্মকর্তাদের, সেখানে অন্যান্য ইরাকি কমান্ডারদের পাশাপাশি এখনো মুহানদিসের ছবিও ঝোলানো আছে। অন্ধকারের মধ্যে
ইউনিয়ন থ্রি ঘাটির দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন যে, তারা শুধু সকালে ফোন ঘাটতে গিয়ে ওই হামলার খবর জানতে পারেন। ‘যদি এমন কোন অভিযান চলে, যে বিষয়ে আপনারা জানার প্রয়োজন নেই, তাহলে আপনাকে তা জানানো হয় না,’ নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানালেন এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। ‘পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে যদি আপনাকে পড়তে হয়, তা হলেও না।’ এমনকি বাগদাদের মার্কিন ঘাঁটিতে যে ড্রোন অপারেটররা ছিলেন, তারাও প্রথমে মনে করেছিলেন, বিমানবন্দরের কাছাকাছি কূটনৈতিক আবাসিক এলাকায় হয়তো রকেট হামলা হয়েছে। কারণ ওই এলাকা লক্ষ্য করে আগেও রকেট হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরণের পরে তারা যখন আগুন দেখতে পান, তখন বুঝতে পারেন যে, এটা ছিল ড্রোন হামলা। কিন্তু তারাও বুঝতে পারছিলেন না, কে হামলাটি চালিয়েছে। এই ড্রোন হামলার ঘটনার কয়েকদিন আগে, মার্কিন ঘাটিতে রকেট হামলার জবাব দেয়ার জন্য ইরাক-সিরিয়া সীমান্তের উভয় পাশে কাতিব হেজবুল্লাহ মিলিশিয়ার সদর দপ্তরে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী, যাতে ওই শিয়া আধা-সামরিক বাহিনীর ২৫ জন সদস্য নিহত হয়। তাদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বড় ধরণের বিক্ষোভে রূপান্তরিত হয় এবং বাগদাদের মার্কিন দূতাবাসে হামলা করেন শোকবিহবল জনতা। কিন্তু শিয়া মিলিশিয়ারা মনে করে, ড্রোন হামলার মাধ্যমে সব সীমা অতিক্রম করে ফেলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপের সঙ্গে ‘আইএসকে পরাজিত’ করার কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে তাতে ক্ষুব্ধ ইরানপন্থি আধা-সামরিক বাহিনী এবং রাজনৈতিকরা দাবি করেন যেন, অতিসত্বর ইরাক ছেড়ে মার্কিন বাহিনী চলে যায়। কিন্তু জোট বাহিনী আশা করছে যে, তারা ইরাকি সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আইএসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত দফার অভিযান শুরু করতে পারবে। কিন্তু এ বিষয়ে অনিশ্চয়তায় উভয় পক্ষের কমান্ডারদের গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে অনাগ্রহী করে তুলেছে। বিশেষ করে যখন পরের দিনই রাজনৈতিকরা তাদের বিরোধিতা করতে পারে। ‘আমাদের টিম সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়, এবং মিশন শেষ করতে চায়। আমরা ইরাকি জনগণকে বিশ্বাস করি এবং এবং ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকেও বিশ্বাস করি,’ বলছেন এক জ্যেষ্ঠ জোট কর্মকর্তা, যিনি আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কয়েকবার ইরাকে এবং ইরাকি কমান্ডারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তার ইরাকি সহযোগীদের সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হয়, তারা একত্রে চা পান করতেন, কিন্তু ওই হামলার পর থেকে সম্পর্ক যেন অনেকটাই আনুষ্ঠানিক হয়ে উঠেছে। ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীগুলো মনে করে তারা ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংকটের ফাঁদে পড়ে গেছে। ইরাকি জয়েন্ট অপারেশন কমান্ডের মুখপাত্র মেজর জেনারেল তাহসিন আল-খাফাজি বলছেন, '‘এটা আমাদের সমস্যা নয়। এমনকি এটা সামরিক কোন সমস্যাও নয়। ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমস্যা আছে আর তারা আমাদের মাঝখানে ফেলে দিয়েছে। এই দুই দেশের জন্যই আমার বার্তা হলো : আমাদের সমস্যা এখানে নিয়ে এসো না।’ ইরাকি সামরিক বাহিনী বলছে যে, জেনারেল সোলেইমানি হত্যার পর জোট সহায়তা না পাওয়ায়, আইএসের বিরুদ্ধে তাদের একাই লড়াই করা ছাড়া বিকল্প নেই। ‘প্রথমবারের মতো আমরা আমাদের এফ-১৬ ফাইটার জেটগুলোকে উড়িয়েছি, আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালানোর জন্য,’ বলছেন জেনারেল খাফাজি। ‘এটা ঠিক যে, আমরা একা লড়াই করতে পারবো, কিন্তু আমরা এখনো জোট বাহিনীর সঙ্গে মিলে কাজ করতে চাই, যদি রাজনৈতিক কোনো সমস্যা না থাকে।’ এই মুহূর্তে সবকিছুই একটা ভারসাম্যের ওপর দুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী এতদিন যে হুমকি মোকাবেলা করতো, তা আইএসে থেকে সরে একেবারে ভিন্ন কিছু হয়ে গেছে। সেটা বেরিয়ে এলো মার্কিন এয়ারম্যান আলেজানড্রো পেনার বক্তব্যে, যিনি মাত্র দুই মাস আগে ইরাকে এসেছেন। ‘যখন আমাদের এখানে মোতায়েন করা হয়, আমি ভেবেছিলাম আমি আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছি। কিন্তু কয়েকমাস পরে এখানে দেখতে পাচ্ছি, আরে না, এখানে অন্য প্রতিপক্ষও রয়েছে।’ এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ