সেলাই মেশিন কীভাবে নারীকে মুক্তি দিয়েছিল

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ১১:০৪

১৮৫০ সালেও সামাজিক অগ্রগতির বিষয়টি ছিল পরাহত। এর কয়েক বছর আগে আমেরিকান ক্যাম্পেইনার এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যানটন নারীদের ভোটাধিকার চেয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন। এমনকি তার সমর্থকরাও অনেকে একে উচ্চাভিলাষী ভেবেছিলেন।

অন্যদিকে বোস্টনে একজন ব্যর্থ অভিনেতা নতুন কিছু আবিষ্কার করে নিজের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছিলেন। তিনি একটি ওয়ার্কশপের শোরুমে একটু জায়গাও ভাড়া করলেন কাঠের শিল্পকর্ম বানানোর মেশিন বিক্রির জন্য।

কিন্তু তখনকার ফ্যাশনে এটি আর যাচ্ছিল না। যন্ত্রটি দারুণ ছিল কিন্তু কেউ এটি কিনতে উৎসাহিত ছিল না। ওয়ার্কশপের মালিক হতাশ এই উদ্ভাবককে অন্য একটি যন্ত্রের কথা বললেন। আর সেটি হলো সেলাই মেশিন। এটাও ছিল কষ্টের কারণ খুব ভালো কাজ করছিল না এটি। অনেক চেষ্টার পরেও কেউ ঠিকমতো এটি বানাতে সফল হয়নি। তাই সুযোগটা ছিল এখানে। কিন্তু সেলাইতে অনেক সময় লাগত। একটা শার্ট সেলাইয়ের কাজেই লাগত প্রায় ১৪ ঘণ্টা। তাই এটি গতি বাড়ানোর কাজে একটি সম্ভাবনা ছিল। তখন ঘরে ঘরে স্ত্রী ও কন্যারা সেলাই করবে বলে আশা করা হচ্ছিল।

ব্যর্থ অভিনেতা সেইসঙ্গে উদ্ভাবক ছিলেন অ্যাইজ্যাক মেরিট সিঙ্গার। দারুণ কিন্তু কিছুটা কঠোর লোক ছিলেন তিনি। নারীসঙ্গ প্রিয় এই ব্যক্তির সন্তান সংখ্যা ছিলো কমপক্ষে ২২ জন।

বহু বছর ধরে তিনি তিনটি সংসার সামলেছেন। এর মধ্যে সব স্ত্রীরা একে অন্যের খবর জানত না। একজন তাকে মারধরের অভিযোগও এনেছিলেন।

সিঙ্গার ঠিক নারী অধিকারের সমর্থক ছিলেন না। তার জীবনীকার রুথ ব্রান্ডন বলছেন তিনি এমন একজন মানুষ যিনি নারী আন্দোলনে বাড়তি কিছু যোগ করেছেন। তিনি সেলাই মেশিনের মডেল তৈরি করেন। এবং তার নিজস্ব মডেলের সেলাই মেশিন বিক্রি শুরু করেন। এটা ছিল আকর্ষণীয় এবং এটাই ছিল প্রথম যা আসলে দারুণ কাজ করছিল। এতে একটি শার্ট সেলাই করতে এক ঘণ্টার বেশ সময় লাগছিল না।

তবে দুঃখজনকভাবে এটার আরও কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলো যেগুলোর প্যাটেন্ট ছিল অন্য উদ্ভাবকদের। ১৮৫০ সালের কথিত ‘সেলাই মেশিন যুদ্ধের’ সময় উদ্ভাবকরা সেলাই মেশিন বিক্রির চেয়ে এসব প্যাটেন্ট করাতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন।

শেষ পর্যন্ত একজন আইনজীবী তাদের এক জায়গায় আনেন এবং বোঝাতে সক্ষম হন যে তাদের সব প্যাটেন্ট একসাথে করলেই একটি দারুণ মেশিন হতে পারে। তা হলে তারা এক যোগে কাজ করবেন না কেন। আর এভাবেই আইনি বাধামুক্ত হয়ে মার্কেটে আসে অ্যাইজ্যাক মেরিট সিঙ্গারের সেলাই মেশিন এবং এটিই মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে।

সিঙ্গার ও তার বিজনেস পার্টনার এডওয়ার্ড ক্লার্ক বেশি জোর দিয়েছিলেন মার্কেটিংয়ে। সেলাই মেশিন তখন ছিলো ব্যয়বহুল। একটি গড়পড়তা পরিবারের জন্য কয়েক মাসের আয়ের সমান। ক্লার্ক এসব পরিবারের জন্য ভিন্ন ধারণা নিয়ে আসেন। পরিবারগুলো মেশিন ভাড়া নেবে কিছু ডলারের বিনিময়ে এবং এভাবে ভাড়া পরিশোধ করতে করতে মূল দামের সমান হয়ে গেলে তারা যন্ত্রটির মালিক হবে।

এবং যন্ত্রটি কেনার সময়ই ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা দেখার জন্য তারা লোকজনকে উৎসাহিত করেন। এর পরও সমস্যা ছিল। অনেকেই বাধা দেন কিংবা নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরেন। কেউ কেউ স্ত্রীর সংখ্যার বিষয়টিও বলতে থাকেন।

এসব কিছুর কারণে নারীরা এই দামি মেশিন চালাতে পারবেন কিনা তা নিয়েও আলোচনা তৈরি হয়।

কিন্তু সিঙ্গারের ব্যবসা নির্ভর করেছিল নারীদের ওপর তা ব্যক্তিগত জীবনে নারীকে যত কম সম্মানই দেখানো হোক না কেন। তিনি নিউইয়র্কে একটি দোকান ভাড়া করলেন এবং একজন তরুণীকে নিয়োগ করলেন তার যন্ত্র সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে।

সেখানে বেশ ভিড় শুরু হলো। সিঙ্গারের বিজ্ঞাপনেও নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়। যেখানে সরাসরি নারীর কাছে পণ্যটি বিক্রির কথাও বলা হয়। এর মধ্যেই নিহিত ছিল নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা।

‘যে কোনো নারী এর মাধ্যমে বছরে এক হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন’।

১৮৬০ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের লেখায় উঠে আসে, সেলাই মেশিনের মতো আর কোনো আবিষ্কার মা ও মেয়েদের এত স্বস্তি দিতে পারেনি।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ