আজকের শিরোনাম :

ইরানের পক্ষে কত দ্রুত পরমাণু বোমা তৈরি করা সম্ভব?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৪৬

ইরান ঘোষণা করেছে যে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, তার কোনটিই তারা আর মেনে চলবে না। জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ইরানের মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এটি এমনিতেই খুবই ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। ইরানের এই ঘোষণার পর এই চুক্তি ভেঙ্গে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের আশংকার মধ্যে অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলছেন, ইরান কি তাহলে এখন পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে হাত দিতে চলেছে? যদি তারা চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পুরোদমে পরমাণু কর্মসূচি চালাতে থাকে, তাহলে কত দ্রুত তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে?

ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে না পারে, সেজন্যেই তাদের সঙ্গে চুক্তিটি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো।

প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে সম্পাদিত চুক্তিটিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময় একটি 'বাজে চুক্তি' বলে বর্ণনা করে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেও ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করে এখনো এই চুক্তির গুরুত্ব আছে।

এই পরমাণু চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে আন্তর্জাতিক তদারকিতে রাখা। ইরান দাবি করে যে তারা শান্তিপূর্ণ কাজেই তাদের পরমাণু কর্মসূচি ব্যবহার করতে চায়।

কিন্তু পরমাণু চুক্তিটির সবচেয়ে বড় গুরুত্ব ছিল- এটি মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের শঙ্কা দূর করেছিল। এই চুক্তির আগে এমন আশংকা ছিল যে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঠেকানোর নামে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালাতে পারে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন এই চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে বেরিয়ে গেল, তারপর থেকে ইরান ক্রমাগত এই চুক্তিতে আরোপ করা কিছু বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে চলেছে।

কিন্তু জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পর যে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ইরান এখন মনে হচ্ছে সব বিধিনিষেধই উপেক্ষা করবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইরান এখন তাদের পরমাণু কর্মসূচিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে? যেমন ধরা যাক, তারা কি ইউরেনিয়াম পরিশোধন ২০ শতাংশের উপরে নিয়ে যাবে?

পরমাণু বোমা তৈরির ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইরান যদি এখন সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে, তাহলে বোমা তৈরির উপকরণ পেতে তাদের অনেক কম সময় লাগবে। কিন্তু ইরান কি এই সময়ে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের তদারকির বর্তমান ব্যবস্থা মেনে চলবে?

২০১৮ সালের মে মাসে ইরানের সঙ্গে চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যা করতে চেয়েছিল, মনে হচ্ছে তারা সেই জায়গায় পৌঁছে গেছে।

কিন্তু বিশ্বের অন্য ক্ষমতাধর দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধী ছিল। একই সঙ্গে ইরান যে চুক্তিটি মেনে চলছে না, তা নিয়েও তারা অসন্তুষ্ট।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে ইরানের ক্ষমতাধর একজন জেনারেলকে হত্যার সিদ্ধান্ত দিলেন, সেটি তাদের স্তম্ভিত করেছে। এই ঘটনা এখন ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।

কত দ্রুত ইরান বোমা তৈরি করতে পারবে?

ইরান যদিও সবসময় বলে এসেছে তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ কাজের জন্য, তারপরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এ নিয়ে সংশয় ছিল। ২০১০ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে ২০১৫ সালে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয় পরমাণু চুক্তির পর।

চুক্তিটিতে বলা হয়েছিল, ইরানের ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। পরমাণু অস্ত্র তৈরি এবং পরমাণু জ্বালানি- উভয় ক্ষেত্রেই পরিশোধিত ইউরেনিয়ামের দরকার হয়।

চুক্তি অনুযায়ী ইরানকে 'হেভি ওয়াটার রিয়েক্টর' নতুন করে তৈরি করতে হয়। পরমাণু বোমার আরেকটি উপাদান প্লুটোনিয়াম পাওয়া যায় এই রিয়েক্টরে ব্যবহৃত জ্বালানি থেকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিদর্শকরা চুক্তি অনুযায়ী এই রিয়েক্টর নিয়মিত পরিদর্শন করার কথা।

২০১৫ সালের আগে পরিশোধিত ইউরেনিয়ামের বিরাট মওজুদ ছিল ইরানে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, প্রায় বিশ হাজার সেন্ট্রিফিউজেস ছিল তাদের। দশটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট এগুলো।

সেসময় মার্কিন বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, ইরান যদি খুব তাড়াহুড়ো করে কোন পরমাণু বোমা বানাতে চায়, তাদের সময় লাগতে পারে দুই হতে তিন মাস।

তবে এখন যেহেতু আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের কারণে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি অনেক সীমিত, তাই বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেও ইরানের সময় লাগবে অনেক বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কমপক্ষে এক বছর। তবে ইরান যদি সব বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাত্রা ২০ শতাংশে উন্নীত করে, তাহলে ছয় মাস বা তারও কম সময়ের মধ্যে এটি করা সম্ভব।
পরমাণু চুক্তির অন্য দেশগুলো অবশ্য এখনো আশা করছে ইরান ঐ পথে যাবে না।

রোববার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তারা ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চুক্তি-বিরোধী কিছু না করার জন্য।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ