আজকের শিরোনাম :

৯৬.৯% ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট এবং ৮১.৪% ভোট কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের দেখতে পাওয়া যায়

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ইডব্লিউজি’র পর্যবেক্ষণ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০১৮, ২১:৫২ | আপডেট : ৩০ জুন ২০১৮, ০০:৫২

ঢাকা, ২৯ জুন, এবিনিউজ : গত ২৬ জুন (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম দুই লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন বিরোধীদল বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে।

আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় এই সিটিতে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট দিয়েছেন গাজীপুর নগরবাসী। ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৫ জন পুরুষ এবং ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন মহিলা ভোটার।

৫৭টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৫৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন ও সংরক্ষিত ১৯ মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন এবং মেয়র পদের জন্য ৭ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

সর্বমোট ৩৪৫ জন প্রার্থী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পর্যবেক্ষণ নিন্মে তুলে ধরা হলো:

নির্বাচনে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)’র পর্যবেক্ষকগণ যেসব ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে সেগুলোর ৪৬.৫% কেন্দ্রে ১৫৯টি নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে পর্যবেক্ষিত বেশিরভাগই দুপুরের পর সংঘটিত হয়েছে। নির্বাচনী অনিয়মের মধ্যে রয়েছে-জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের ভেতরে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো এবং ভোটকেন্দ্রের ভিতরে অননুমোদিত ব্যক্তিদের অবস্থান। ইডব্লিউজি’র পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী পর্যবেক্ষণকৃত ভোটকেন্দ্রে ভোট প্রদানের গড় হার ৬১.৯%।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি:
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সর্বমোট ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ইডব্লিউজি পুরো ৫৭টি ওয়ার্ডেরই ১২৯টি (৩০.৪%) ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ভোটকেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে দৈকচয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে এসব কেন্দ্র বাছাই করা হয়। ইডব্লিউজি’র এই ব্যাপক পর্যবেক্ষণে যেসব বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয় সেগুলো হল: (১) ভোটকেন্দ্র খোলার সময়কাল, (২) ভোটগ্রহণ কার্যক্রম, (৩) ভোটকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা ও ভোটগণনা পর্যবেক্ষণ এবং (৪) ভোটকেন্দ্রের বাইরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ।

ভোটগ্রহণ শুরুর সময়:
ইডুব্লউজি’র নিয়োগকৃত পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বেশিরভাগ (৯৮%) ভোটকেন্দ্র ভোটগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুত ছিল এবং নির্ধারিত সময়েই ভোটগ্রহণের জন্য ভোটকেন্দ্র উন্মুক্ত করা হয়েছিল। ভোটগ্রহণ শুরুর সময় পর্যবেক্ষণকৃত সকল ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে; এর মধ্যে ৩৭.২% কেন্দ্রে ১-২০ জন ভোটার, ২০.২% কেন্দ্রে ২০-৪০ জন এবং ৪০.৩% কেন্দ্রে ৪০ জনেরও বেশি ভোটারের লাইন পরিলক্ষিত হয়েছে। ভোটগ্রহণ শুরুর সময় ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষকবৃন্দ ৯৬.৯% ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট এবং ৮১.৪% ভোট কেন্দ্রে বিএনপি মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদের দেখতে পাওয়া গেছে।

ভোটগ্রহণ কার্যক্রম:
বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রের (৮১.৪%) কক্ষগুলো যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ৯৫.৩% ভোটকেন্দ্রে ভোটরে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল এবং ভোটকেন্দ্রগুলোতে গড়ে ৯ জন নারী পোলিং অফিসারকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছিল। এদিকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে সকাল ১০টার সময় ভোট পড়েছে ১৭.৭%, দুপুর ১টার দিকে ৪০.৮%, বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫৫.৩% এবং বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৬১.৯% ভোট পড়েছে।

নির্বাচনী অনিয়ম:
ইডুব্লউজি’র পর্যবেক্ষকগণ ৪৬.৫% (৬০টি ভোটকেন্দ্র) ভোটকেন্দ্রে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের ভেতরে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো এবং ভোটকেন্দ্রের ভিতরে অননুমোদিত ব্যক্তিদের উপস্থিতি। অনিয়মের কারণে পর্যবেক্ষণকৃত ১২টি ভোটকেন্দ্রর ভোটগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরমধ্যে ৯টি ভোটকেন্দ্র ভোটগ্রহণ পুনরায় চালু করা হয়। পর্যবেক্ষকরা পর্যবেক্ষককৃত ১৫৯টি নির্বাচনি অনিয়ম দেখা যায়।

অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি ৬টি, ভোটারকে ভোটকক্ষে প্রবেশের পর অঙ্গুলে কালির ছাপ দিয়ে বলা হয়েছে আপনার ভোট দেয় হয়ে গেছে ৩টি, পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি ৩টি, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ৬টি, ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা করা হয়েছে ২৮টি, ভোটরদের ভোটকেন্দ্রে যেতে প্রার্তী কর্তৃক যাবাহন সরবরাহ করা হয়েছে ২৪টি, ভোটকেন্দ্রে অননুমোদিত ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা গেছে ৩০টি, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সহিংসা ঘটেছে ৮টি, ভোটকেন্দ্রের বাইরে সহিংসতা ঘটেছে ৯টি, অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মারা হয়েছে ২১টি, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ৫টি, অন্যান্য ৫টি।

ভোটগ্রহণ সমাপ্তি ও গণনা
ইডব্লিউজি’র পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র (৯৪.৮%) নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। পর্যবেক্ষিত ১২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৮টি কেন্দ্রের গণনা পর্যবেক্ষণ করা হয়। গণনার পূর্বে সকল ব্যালট বাক্সে নিরাপত্তা সিল সঠিকভাবে লাগানো ছিল। গণনার সময় ২১টি কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টরা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ বা আপত্তি উত্থাপন করেন।

গত ২৮ জুন প্রকাশিত ইডব্লিউজি’র প্রাথমিক বিবৃতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ইডব্লিউজি’র ব্যাখ্যা হুবহু তুলে ধরা হল:

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রাথমিক বিবৃতি প্রকাশের জন্য গত ২৮ জুন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পর্যবেক্ষকগণ যেসব ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে সেগুলোর ৪৬.৫% কেন্দ্রে ১৫৯টি নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত শিরোনাম এবং প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় ইডব্লিউজি’র প্রাথমিক বিবৃতির তথ্য-পরিসংখ্যান যথাযথভাবে উপস্থাপিত হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, শিরোনামগুলোতে বলা হয়েছে “ইডব্লিউজি ৪৬.৫% কেন্দ্রে অনিয়ম পেয়েছে”, “৪৬.৫% কেন্দ্রে অনিয়ম”, ৪৬.৫% কেন্দ্রে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, ‘Gazipur city polls not fair: EWG’, প্রকাশিত এসব শিরোনাম এবং সংবাদ যথাযথভাবে প্রকাশিত বা প্রচারিত না হওয়ায় ইডব্লিউজি’র ব্যাখ্যা নিন্মরূপ:

প্রথমত: ইডব্লিউজি’র ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২৯টি অর্খাৎ ৩০.৪% কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে এবং সকল তথ্য-পরিসংখ্যান শুধুমাত্র ঐসব কেন্দ্র থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক বিবৃতি অনুযায়ী ইডব্লিউজি ৬০টি কেন্দ্রে নির্বচনী অনিয়ম পেয়েছে- যা পর্যবেক্ষিত ১২৯টি কেন্দ্রের ৪৬.৫%।

দ্বিতীয়ত: প্রাথমিক বিবৃতির কোনো লাইনে কিংবা সংবাদ সম্মেলনে ইডব্লিউজি কখনও বলেনি যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ইডব্লিউজি’র এই বিবৃতি নির্বাচন নিয়ে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষিত ৩০.৪% কেন্দ্র থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। যেসব কন্দ্রে ইডব্লিউজি পর্যবেক্ষণ করেনি সেসব কেন্দ্র সম্পর্কে ইডব্লিউজি’র মন্তব্য করার সুযোগ নেই।

তৃতীয়ত: প্রাথমিক বিবৃতিতে বিভিন্ন রকমের “নির্বাচনী অনিয়মের কখা বলা হয়েছে- যেগুলো ইডব্লিউজি’র পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনের দিনে পর্যবেক্ষণ করেছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন (নির্বাচন আচরণ) আচরণ বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী ঐসব নির্বাচনী অনিয়ম শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়ায় অন্যান্য বিষয়ের সাথে ইডব্লিউজি এসব বিষয়ও পর্যবেক্ষণ করেছে। প্রাথমিক বিবৃতিতে যে সারণী দেওয়া হয়েছে, তাতে মোট ১৫৯টি নির্বাচনী অনিয়মের কথা বলা হয়েছে; এসব ঘটনার বেশিরভাগ ঘটনা ছিল কেন্দ্রে অননুমোদিত ব্যক্তির উপস্থিতি (৩০টি), কেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের মদ্যে নির্বাচনী প্রচারণা করা (২৮টি) এবং প্রার্থী কর্তৃক ভোটরদেরকে ভোটকেন্দ্রে আনা-নেওয়ার যানবাহন সরবরাহ করা (২৪টি)। সারণীটি থেকে আরো দেখা যায, জালভোটের ঘটনা পর্যবেক্ষিত হয়েছে ২১টি; এসব ঘটনা সংখ্যাগত দিক থেকে কম এবং এগুলো ঘটেছে পর্যবেক্ষিত ১১টি কেন্দ্রে যেখানে ইডব্লিউজি’র পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত ছিল।

এবিএন/মাইকেল/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ