বাংলাদেশিদের ভারতমুখী হওয়ার ৫ কারণ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২০, ১২:১০
ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস ২০১৯ সালের শেষদিন যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছেন, সেটি বেশ চমকপ্রদ।
তিনি জানান, ২০১৯ সালে ১৫ লাখ বাংলাদেশীদের ভারতের ভিসা দেয়া হয়েছে।
ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, কয়েক বছর আগেও প্রতি বছর ৭-৮ লাখ বাংলাদেশির ভারতীয় ভিসা দেয়া হতো। সে হিসাবে সেটি এখন দ্বিগুণ হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এতো বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কেন ভারতে যাচ্ছে?
চিকিৎসা
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা রওশন আক্তার ২০১০ সালে তার ছেলেকে নিয়ে ঢাকার একটি চক্ষু হাসপাতালে যান। অভিজাত এলাকায় বেসরকারি সে চক্ষু হাসপাতাল মধ্য বিত্তের জন্য বেশ ব্যয়বহুলও বটে। রওশন আক্তারের ছেলে তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তার একটি চোখের দৃষ্টি শীতকালে বেশ ঝাপসা হয়ে আসতো । চিকিৎসকরা বলছিলেন, তার চোখটি নষ্ট হয়ে গেছে। এর পর রওশন আক্তার তার ছেলেকে নিয়ে ভারতের একটি চক্ষু হাসপাতালে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি বিশেষ লেন্স দিয়েছেন, যেটি চোখে ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি এখন সবকাজ স্বাভাবিকভাবে সবকাজ করতে পারেন। রওশন আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে এখন ব্যাংকে চাকরি করে। ভারতের ডাক্তাররা বলেছে, আরও কয়েক বছর পরে ওর একটা অপারেশন করতে হবে। চোখ ঠিক হয়ে যাবে।’ রওশন আক্তারের মতো এ রকম হাজারো উদাহরণ রয়েছে বাংলাদেশে। এখানকার চিকিৎসকরা বলেছেন এক কথা, আর ভারতের চিকিৎসকরা বলেছেন ভিন্ন কথা। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর বাংলাদেশিদের গভীর আস্থা তৈরি হয়েছে। পর্যটন
শুধু চিকিৎসা নয়, ইদানীংকালে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ভারত। ঢাকার এক বেসরকারি চাকরিজীবী সায়মা (ছদ্মনাম)। ২০১৯ সালে তিনি চারবার ভারত ভ্রমণে গিয়েছেন। সায়মা মনে করেন, ভ্রমণ কিংবা কেনা-কাটার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ‘অনেক সস্তা’। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের কক্সবাজার ঘুরতে গেলে হোটেল ভাড়া, যাতায়াত এবং খাবার বাবদ যে টাকা খরচ হয়, এর চেয়ে কম খরচে ভারত ভ্রমণ করা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের তুলনায় ভারত অনেক বৈচিত্র্যময় বলে তিনি উল্লেখ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক সন্তোষ কুমার দেব বলেন, বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসা এবং ভ্রমণের জন্য ভারত যায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মনে করছে, একই পরিমাণ টাকা দিয়ে আমি যদি পার্শ্ববর্তী দেশ ঘুরে আসতে পারি, তাহলে আমি এখানে কেন থাকব?’ কম দামে কেনাকাটা
পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা ভারতীয় পোশাককে তাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকেই রাখেন। ঈদ, পূজা, বিয়ে কিংবা অন্য যে কোনো অনুষ্ঠানের কেনাকাটার জন্য ভারত যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে অনেক বাংলাদেশি। বাংলাদেশের বিভিন্ন মার্কেট কিংবা শপিং-মলে ভারতীয় পোশাকে সয়লাব। এসব পোশাক কমদামে কেনার জন্য অনেকে এখন ভারত যাওয়াকে শ্রেয় মনে করেন। ‘যে পোশাক আমি ভারত থেকে ৩ হাজার রুপি দিয়ে কিনতে পারি, সে একই পোশাক এখানে ৮-৯ হাজার টাকা লাগে। এ ছাড়া ওখানে গেলে আমি কমদামে একসাথে অনেক ড্রেস কিনে আনতে পারি।’ লাইফ-স্টাইল স্বাধীনতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষক সন্তোষ কুমার দেব বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় বাংলাদেশের তুলনায় বিধিনিষেধ অনেক কম। পর্যটনের জন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন, নানা বিধি-নিষেধের কারণে সেগুলো যথাযথ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার অনুমোদিত বার এবং ক্লাবের ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের নিয়মকানুন মেনে যদি পরিচালনা করা হয়, তাহলে হয়তো বাংলাদেশে টুরিস্টের সংখ্যা বাড়বে।’ ২০১৯ সালে যারা ভারতে ঘুরতে গিয়েছেন তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে বোঝা গেল, বাংলাদেশের ভেতরে নানা বিধিনিষেধের কারণে দেশের অভ্যন্তরে পর্যটনের বিষয়টি তাদের নিরুৎসাহিত করছে। ভারতে ঘুরতে গিয়ে তারা যতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সেটা বাংলাদেশে তারা করেন না। সায়মা বলেন, ‘আমি আনন্দের জন্য ঘুরতে যাই। হোটেল রুমে বসে থাকার জন্য আমি এতো কষ্ট করে কক্সবাজার যাবো না। কক্সবাজারে সন্ধ্যার পর আমার কিছু করার নাই। আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে যে আমি সন্ধ্যার পর কোথাও যাবো, সে রকম কিছু নাই। কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি হোটেল রুমে মধ্যে বসে থাকতে হয়, তাহলে তো আমার বাসার সাথে সেখানে কোনো পার্থক্য নেই।’ বৈচিত্র্য
লাইফ-স্টাইলের স্বাধীনতা ছাড়াও পর্যটনের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৈচিত্র্যের কারণে ভারত অনেক দেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। সায়মা বলেন, ‘ইন্ডিয়াতে গেলে অনেক কিছু দেখা যায়। আমি মরুভূমি দেখতে পাচ্ছি, সমুদ্র দেখতে পাচ্ছি, আমি ওখানে বরফ দেখতে পাচ্ছি। আমি একটা দেশের মধ্যে অনেক কিছু পাই।’ চিকিৎসা, পর্যটন কিংবা কেনাকাটা - সবকিছুর ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সামনে আসে সেটি হচ্ছে খরচ। ভারতে যারা প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করছেন তাদের ভাষ্য হচ্ছে চিকিৎসা, পর্যটন এবং কেনাকাটার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় ভারত একদিকে সাশ্রয়ী এবং অন্যদিকে মানও ভালো। এসব কারণে বাংলাদেশিরা এখন ভারত ভ্রমণের দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা রওশন আক্তার ২০১০ সালে তার ছেলেকে নিয়ে ঢাকার একটি চক্ষু হাসপাতালে যান। অভিজাত এলাকায় বেসরকারি সে চক্ষু হাসপাতাল মধ্য বিত্তের জন্য বেশ ব্যয়বহুলও বটে। রওশন আক্তারের ছেলে তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তার একটি চোখের দৃষ্টি শীতকালে বেশ ঝাপসা হয়ে আসতো । চিকিৎসকরা বলছিলেন, তার চোখটি নষ্ট হয়ে গেছে। এর পর রওশন আক্তার তার ছেলেকে নিয়ে ভারতের একটি চক্ষু হাসপাতালে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি বিশেষ লেন্স দিয়েছেন, যেটি চোখে ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি এখন সবকাজ স্বাভাবিকভাবে সবকাজ করতে পারেন। রওশন আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে এখন ব্যাংকে চাকরি করে। ভারতের ডাক্তাররা বলেছে, আরও কয়েক বছর পরে ওর একটা অপারেশন করতে হবে। চোখ ঠিক হয়ে যাবে।’ রওশন আক্তারের মতো এ রকম হাজারো উদাহরণ রয়েছে বাংলাদেশে। এখানকার চিকিৎসকরা বলেছেন এক কথা, আর ভারতের চিকিৎসকরা বলেছেন ভিন্ন কথা। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর বাংলাদেশিদের গভীর আস্থা তৈরি হয়েছে। পর্যটন
শুধু চিকিৎসা নয়, ইদানীংকালে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ভারত। ঢাকার এক বেসরকারি চাকরিজীবী সায়মা (ছদ্মনাম)। ২০১৯ সালে তিনি চারবার ভারত ভ্রমণে গিয়েছেন। সায়মা মনে করেন, ভ্রমণ কিংবা কেনা-কাটার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ‘অনেক সস্তা’। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের কক্সবাজার ঘুরতে গেলে হোটেল ভাড়া, যাতায়াত এবং খাবার বাবদ যে টাকা খরচ হয়, এর চেয়ে কম খরচে ভারত ভ্রমণ করা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের তুলনায় ভারত অনেক বৈচিত্র্যময় বলে তিনি উল্লেখ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক সন্তোষ কুমার দেব বলেন, বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসা এবং ভ্রমণের জন্য ভারত যায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মনে করছে, একই পরিমাণ টাকা দিয়ে আমি যদি পার্শ্ববর্তী দেশ ঘুরে আসতে পারি, তাহলে আমি এখানে কেন থাকব?’ কম দামে কেনাকাটা
পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা ভারতীয় পোশাককে তাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকেই রাখেন। ঈদ, পূজা, বিয়ে কিংবা অন্য যে কোনো অনুষ্ঠানের কেনাকাটার জন্য ভারত যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে অনেক বাংলাদেশি। বাংলাদেশের বিভিন্ন মার্কেট কিংবা শপিং-মলে ভারতীয় পোশাকে সয়লাব। এসব পোশাক কমদামে কেনার জন্য অনেকে এখন ভারত যাওয়াকে শ্রেয় মনে করেন। ‘যে পোশাক আমি ভারত থেকে ৩ হাজার রুপি দিয়ে কিনতে পারি, সে একই পোশাক এখানে ৮-৯ হাজার টাকা লাগে। এ ছাড়া ওখানে গেলে আমি কমদামে একসাথে অনেক ড্রেস কিনে আনতে পারি।’ লাইফ-স্টাইল স্বাধীনতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষক সন্তোষ কুমার দেব বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় বাংলাদেশের তুলনায় বিধিনিষেধ অনেক কম। পর্যটনের জন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন, নানা বিধি-নিষেধের কারণে সেগুলো যথাযথ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার অনুমোদিত বার এবং ক্লাবের ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের নিয়মকানুন মেনে যদি পরিচালনা করা হয়, তাহলে হয়তো বাংলাদেশে টুরিস্টের সংখ্যা বাড়বে।’ ২০১৯ সালে যারা ভারতে ঘুরতে গিয়েছেন তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে বোঝা গেল, বাংলাদেশের ভেতরে নানা বিধিনিষেধের কারণে দেশের অভ্যন্তরে পর্যটনের বিষয়টি তাদের নিরুৎসাহিত করছে। ভারতে ঘুরতে গিয়ে তারা যতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সেটা বাংলাদেশে তারা করেন না। সায়মা বলেন, ‘আমি আনন্দের জন্য ঘুরতে যাই। হোটেল রুমে বসে থাকার জন্য আমি এতো কষ্ট করে কক্সবাজার যাবো না। কক্সবাজারে সন্ধ্যার পর আমার কিছু করার নাই। আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে যে আমি সন্ধ্যার পর কোথাও যাবো, সে রকম কিছু নাই। কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি হোটেল রুমে মধ্যে বসে থাকতে হয়, তাহলে তো আমার বাসার সাথে সেখানে কোনো পার্থক্য নেই।’ বৈচিত্র্য
লাইফ-স্টাইলের স্বাধীনতা ছাড়াও পর্যটনের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৈচিত্র্যের কারণে ভারত অনেক দেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। সায়মা বলেন, ‘ইন্ডিয়াতে গেলে অনেক কিছু দেখা যায়। আমি মরুভূমি দেখতে পাচ্ছি, সমুদ্র দেখতে পাচ্ছি, আমি ওখানে বরফ দেখতে পাচ্ছি। আমি একটা দেশের মধ্যে অনেক কিছু পাই।’ চিকিৎসা, পর্যটন কিংবা কেনাকাটা - সবকিছুর ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সামনে আসে সেটি হচ্ছে খরচ। ভারতে যারা প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করছেন তাদের ভাষ্য হচ্ছে চিকিৎসা, পর্যটন এবং কেনাকাটার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় ভারত একদিকে সাশ্রয়ী এবং অন্যদিকে মানও ভালো। এসব কারণে বাংলাদেশিরা এখন ভারত ভ্রমণের দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ