আজকের শিরোনাম :

ঢাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগছে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩০

চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে ঢাকায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার মানুষের ওপর একটি সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে যে, শহরের ৬৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে অসুস্থ। এ ছাড়া মোট জনগোষ্ঠীর ৪৪ শতাংশই বিষণ্ণতায় ভুগছে।

গবেষণাটি চালায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।

কিন্তু এত মানুষের বিষণ্ণতায় ভোগার কারণ কী?
বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এসএম জুলফিকার আলী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এ বিষণ্ণতার বড় কারণই হতে পারে অসুস্থতা। এ ছাড়া ১৭% দরিদ্র। অর্থনৈতিক কারণে তাদের অনেকে বস্তিতে থাকে। বসবাসের সংস্থান নেই অনেকের। এ ছাড়া নগরীর ট্রাফিক জ্যাম, বাতাসের মান, বিশুদ্ধ পানির অভাব, ইভিটিজিংসহ আরও কিছু সমস্যা বিষণ্ণতার কারণ হিসেবে গবেষণায় উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, মূলত চারটি প্রধান কারণ পাওয়া গেছে যেগুলো মানুষের ওপর চরম মানসিক চাপ তৈরি করছে।
এগুলো হলো-
১. অসুস্থতায় ভোগা
২. দারিদ্র্য
৩. জীবনযাত্রার মান ও দৈনন্দিন জীবনের সমস্যার কারণে
৪. সব কিছু মিলিয়ে

কীভাবে বুঝবেন আপনি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত?
শরীরচর্চায় মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়
হ্যাকাররা ভবিষ্যতে আপনার স্মৃতি চুরি করতে পারবে

এর সমাধান কোথায়
সাধারণত বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ থাকে এবং অনেকেই এ জন্য চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তু সেটি আক্রান্ত হওয়ার পর কিভাবে সুস্থ হওয়া যায় তার একটি উপায়।

ড. জুলফিকার আলী বলছেন মানুষ যেন বিষণ্ণতার মতো সমস্যায় আক্রান্ত না হয় সেটিও তারা তাদের গবেষণায় দেখার চেষ্টা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এটি ঠিক শহরে মানুষ যেসব কারণে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হচ্ছে সেগুলোর সব রাতারাতি সমাধান সম্ভব না, তবে এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়া যায় যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুলবে। যেমন যানজট প্রতিনিয়ত মানুষকে মানসিক চাপে ফেলছে কিন্তু রাতারাতি রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এমন ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করা যার মাধ্যমে যানজটের প্রকোপ ৩০-৪০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব। আর সেটি হলে সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়বে যা মানুষের মানসিক চাপ কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে।

আবার হাসপাতালের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অবকাঠামোর ভেতরেই সেবাকে আরও অনেকখানি উন্নত বা এগিয়ে নেয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করেন এই গবেষক।

বিষণ্ণতা কমিয়ে আনতে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করে তিনি। এগুলো হলো-

১. প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে বা যাতে কার্যকর হয় তা নিশ্চিত করতে হবে যেমন ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম খুবই দুর্বল, এটা ঠিক হলে যানজট অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে।

২. নিচের দিকে জনগোষ্ঠী অর্থাৎ দরিদ্র বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী- তারা যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশি সুযোগ পায়। এখন সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ কম। এই বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

৩. টার্গেটেড ইন্টারভেনশন—সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শহরেও থাকা উচিত। যেমন বায়ু দূষণের মতো সমস্যা ব্যবস্থাপনা ও রেগুলেশনের মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ইটভাটার ক্ষেত্রে কিংবা যেসব গাড়ীতে কালো ধোঁয়া বা শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

গবেষণায় উঠে আসা বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য-
১. ঢাকায় অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে বেশি থাকা সত্ত্বেও এখানেও অনেক দরিদ্র আছে
২. ঢাকার মাত্র চার ভাগের একভাগের নিজস্ব বসবাসের জায়গা আছে
৩. ক্ষুদ্র পেশাজীবী বা বেতনভুক্ত চাকুরেরাই পেশাজীবী গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে
৪. অভিবাসন প্রবণতায় পরিবর্তন এসেছে। এখন উত্তরাঞ্চল থেকে বেশি লোক ঢাকায় আসছে
৫. ট্রাফিক জ্যাম, বায়ু দূষণ, বিশুদ্ধ পানির অভাব ও বাজে রাস্তাঘাট নগরবাসীর বড় সমস্যা
৬. আবার এসব অনেক অসুবিধা সত্ত্বেও মানুষ তেমন অসুখী নয় কারণ কাজের সুযোগের পাশাপাশি ঢাকাতেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বেশি আছে
৭. অন্যদিকে শিক্ষা নিয়েও উদ্বেগ আছে
মানসিক চাপ নাকি বিষণ্ণতা: মনোবিদ কী বলেন?

মনোবিদ মেখলা সরকার বিবিসিকে বলছেন অনেক কিছুই মানুষের মধ্যে সাময়িক মানসিক চাপ তৈরি করতে কিন্তু সেগুলোকে বিষণ্ণতা বলা ঠিক হবে না। বিষণ্ণতা একটি রোগ। মানুষ নানা কারণে চাপ বোধ করতে পারে। সেটি যদি তার জীবনযাত্রা বা দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত না করে তাহলে সেটি রোগ নয়। আর মানসিক চাপ মোকাবেলার ক্ষমতা মানুষের মধ্যে যত বেশি থাকবে সেটি তার জন্য ততই ভালো।

তিনি দুটি কারণে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারে- একটি হলো শারীরিক অন্তর্গত কারণ আর অন্যটি হলো বাহ্যিক পরিবেশ।

তিনি বলেন, ‘এখন নিয়মিত ট্রাফিক জ্যামে পড়া, বা অসুস্থতায় ভোগা কিংবা অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হলে মানুষ মানসিক চাপে ভুগতে পারে। তবে এ থেকে উত্তরণের চেষ্টাও তার থাকে। রাষ্ট্র বা সমাজে সবকিছু মনমতো হয় না। কিন্তু মানুষ সে চাপ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যায়। তাই মানসিক চাপে থাকা মানেই অসুস্থতা নয়।’

তবে ক্রমাগত মানসিক চাপ যদিও কারও কাজে কর্মে ব্যাঘাত ঘটায় মারাত্মকভাবে বা যদি তার উৎপাদনশীলতা কমে যায় বা তার আচরণে বড় ধরনের পরিবর্তন বা সে যদি নিজেকে সব কিছু থেকে গুটিয়ে নেয় তাহলে তা অবশ্যই উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলে জানান তিনি।

খবর বিবিসি বাংলার

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ