আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ডেঙ্গু : মৌসুম শেষ হলেও প্রকোপ থেকে যাওয়ার আশঙ্কা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০১৯, ১০:১২

চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকায় মৌসুম শেষ হলেও আক্রান্তের সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এ জন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ধীরগতি আনা যাবে না বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব বলছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু সন্দেহে ২৪৮টি মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৭১টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ১০৭টি মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ। 

হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা আপ এবং ডাউনের মধ্যে আছে। তবে পিক সিজনের তুলনায় এ সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। এ বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল গত ৭ আগস্ট। ওই দিন ২৪২৮ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য ছিল। এখন এই সংখ্যা ২০০-তে নেমে এসেছে।’

তবে শীতের সময় এডিস নয় বরং কিউলেক্স মশার সংখ্যা বেশি থাকে বলে এই মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি বাড়ার আশঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি।

ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ‘কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও অতিরিক্ত ঝুঁকির কোনো আশঙ্কা নেই।’

তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পর মশার উপদ্রব বেড়েছে।

রাজধানীর বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা নিশাত রহমান। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি এবং একটু শীতশীত পড়ার পর থেকেই তার এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকায় এখনো সে আতঙ্কেই রয়েছেন। যেহেতু একটা বার মহামারী দেখে ফেলছি আমরা, তাই ভয়টা থেকে যাচ্ছে।’

মিরপুর এলাকার বাসিন্দা ফারজানা খালিদ। তিনি বলছেন, মশা কিছুটা বেড়েছে তার এলাকায়। আর এ জন্যই সম্প্রতি মশার কারণে রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমান খালিদ।

তিনি বলেন, ‘তিন মাস ধরে ডেঙ্গুর ভয়ে ছিলাম। তার পর মনে হচ্ছিল যে মশার উপদ্রবটা কমে গেছে। কিন্তু গত তিন দিনের বৃষ্টির কারণে মশাটা মনে হচ্ছে আবার ভালোভাবে ফিরে আসছে।’

শীতে আশঙ্কা বেশি থাকবে
শীতপ্রধান দেশ না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে সব সময়ই এডিশ মশা তৈরির উপযুক্ত আবহাওয়া থাকে বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

তিনি বলেন, নির্মাণাধীন ভবন, পানি সংকটের কারণে পানি ধরে রাখার প্রবণতাসহ নানা কারণে শীতের সময়ও মশা জন্মাবে। 

এখনো পর্যন্ত দুই শতাধিক রোগী আক্রান্ত হয়েছেন উল্লেখ করলে মিস্টার বাশার বলেন, এ সময় এই সংখ্যাটা বেশ উদ্বেগজনক।

বাশার বলেন, ‘যেহেতু এ বছর প্রকোপটা একটু বেশি ছিল তাই শীতেও একটু বেশি আশঙ্কা থাকবে। অন্যান্য বছর ডিসেম্বর-নভেম্বরে রোগীর সংখ্যা ১০০ হয়নি। আর এখন একদিনেই যদি দুইশর বেশি রোগী হয় তা হলে তা উদ্বেগজনক। কারণ টোটাল এক মাসেও একশ রোগী হওয়ার কথা না।’

আর তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কোনোভাবেই ধীর করা যাবে না। যেভাবে কার্যক্রম চলছিল সেভাবেই অব্যাহত থাকতে হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ শরীফ আহমেদ বলেন, যেহেতু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে তাই এ বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম কিছুটা ধীরগতি পেয়েছে। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পিক সিজনে সচেতনতা কার্যক্রম আমরা শুরু করেছিলাম ব্যাপকভাবে, বহুমুখীভাবে। সেটা আমরা কিছুটা কমিয়ে আনছি। তবে প্রধান কাজ অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গু মশার প্রজনন স্থল চিহ্নিত ও ধ্বংস করার কাজ চলবে। কেমিক্যাল কন্ট্রোল যেটা সেটাও চলবে।’

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অফ সিজনে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা কার্যক্রমের প্রয়োজন রয়েছে যাতে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে মশা জন্মাতে না পারে।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ