ড্রাগনের রক্ত বয়ে চলেছে যে গাছ!

দূর থেকে দেখলে গাছগুলোকে মনে হবে ছাতা। সোজা কান্ডের ওপর ভর করে রয়েছে শাখা-প্রশাখা। আর তাতেই ভরে রয়েছে অগণিত পাতা। তাই ছাতার মতো মনে হয় তাদের। এই গাছে আঘাত করলে কিছুটা চমকে উঠবেন আপনি। কারণ, ক্ষত থেকে বেরিয়ে আসবে রক্ত! প্রচলিত রয়েছে, বহু বছর ধরে ড্রাগনের রক্ত বহন করে চলেছে এই গাছগুলো। আর তাইতো তাদের ‘ড্রাগন ট্রি’ বলা হয়।

অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত একটি দ্বীপ ‘ক্যানারি’। আর এই দ্বীপেই দেখা মিলবে আশ্চর্য এই বৃক্ষের। কিন্তু কেন এদের ড্রাগন ট্রি বলা হয়? ড্রাগনের রক্তের সঙ্গে এদের কী সম্পর্ক? সব প্রশ্নের পেছনে লুকিয়ে আছে অদ্ভুত এক কল্পকাহিনী।

গ্রিক পুরান অনুযায়ী, হেসপেরাইডস-এর বাগান থেকে হারকিউলিসকে তিনটি সোনার আপেল ফিরিয়ে আনতে হতো। কিন্তু আপেল আনা যে বড্ড কষ্টের। কারণ সেগুলো পাহারা দিচ্ছিল শতমুখী ড্রাগন ল্যান্ডন। আপেল আনতে হলে ড্রাগনকে মেরে তবেই আনতে হবে। আর তাই শুরু হয় হারকিউলিস-ড্রাগন যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে মৃত্যু হয় ড্রাগনটির। আর তার রক্ত ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।

সেই রক্ত থেকেই নাকি জন্মেছে এই গাছগুলো। তাইতো এদের নাম ড্রাগন ট্রি। ড্রাগনের রক্ত বুকে বয়ে চলেছে এরা। এই গাছ কাটলেই বয়ে যায় রক্তের ধারা। বিজ্ঞানীরা অবশ্য জানাচ্ছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, যেই তরলকে রক্ত বলে মনে করা হয় তা আসলে রেজিন। গাছের এক ধরণের উপক্ষার এটি।

নাম কিছুটা ভয়ানক হলেও এই গাছের কিন্তু রয়েছে অনেক উপকারিতা। বিশেষত রক্তবর্ণ সেই উপক্ষারের। প্রাচীনকালে পেটের নানা সমস্যায় ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হতো এই রক্ত। কাজে লাগানো হতো বিভিন্ন রঞ্জক হিসাবে কিংবা টুথপেস্ট তৈরিতে।

আরেকটি মজার বিষয় হলো সাধারণ গাছের মতো এই গাছে কোনো বর্ষবলয় তৈরি হয় না। তাহলে কীভাবে বয়স নির্ধারণ করা হয়? জানা যায়, কান্ডের সংখ্যা দেখে এর বয়স নির্ধারণ করা হয়।

আপনি কি কখনও এই ড্রাগন ট্রি দেখেছেন? সেগুন গাছের কচি পাতা ঘসলেও কিন্তু রক্তের খোঁজ মেলে! কখনোও সেই পাতা হাতে নিয়ে কি ঘষে দেখেছেন? ক্ষুদে বড়লা নামের আরেকটি গাছ থেকেও এমন লাল রং নিঃসৃত হয়। তবে আমাদের দেশে গাছটি বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় বলা চলে।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি