আজকের শিরোনাম :

অভিজিৎ ব্যানার্জির নোবেল নিয়ে বাঙালির যত তর্ক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৫৫

এবছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন কলকাতার সন্তান অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি, তাঁর স্ত্রী এসথার ডুফলো এবং মাইকেল ক্রেমার।

এই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে কি বাঙালি জনগোষ্ঠীর কোন 'শ্রেষ্ঠত্বের' পরিচায়ক? তাকে নিয়ে বাংলাদেশের বাঙালি আর পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির প্রতিক্রিয়ায় কি একটা পার্থক্য থাকতে হবে?

ভারত ও বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে এরকম নানা প্রশ্ন নিয়ে শুরু হয়েছে নানামুখী আলোচনা-বিতর্ক ।

অভিজিৎ ব্যানার্জি এখন যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, কিন্তু তার জন্ম বাঙালি পরিবারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাও কলকাতায়।

তাই তার নোবেল প্রাপ্তিতে ভারত ও বাংলাদেশে বাঙালিদের মধ্যে একটা আনন্দ দেখা যাচ্ছে - যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

অনলাইন যুদ্ধ

সেই উল্লাস প্রকাশের মধ্যে দিয়েই উঠে এসেছে ভারতের বিভিন্ন জাতিসত্তার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা কিছুটা রেষারেষির মানসিকতা।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কল্পিত 'জাতীয় শ্রেষ্ঠত্ব' নিয়ে বড়াইয়ের প্রবণতাও।

বাংলাদেশ ও ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের আঁচও উঠে এসেছে নানা জায়গায় - বিশেষ করে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যম পরিমন্ডলে।

তা ছাড়া অভিজিৎ ব্যানার্জি ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করেছেন অতীতে - তাই তার নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিকে কেন্দ্র করে বিজেপি-সমর্থক ও বিজেপি-বিরোধীদের মধ্যেও একটা 'অনলাইন-যুদ্ধের' আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।

একজন টুইটারে একটি হিসেব দিয়েছেন : উপমহাদেশে কোন জাতিসত্তার কতজন নোবেল পুরস্কার জিতেছে।

টুইটারে 'যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারজয়ী' সকল বাঙালিকে সুপ্রভাত জানিয়েছেন একজন। আরেক জন লিখেছেন, বাঙালি নোবেল জিতলে তার কী প্রতিক্রিয়া হবে - তা ভাবলে তার ভয় হয়।

তার হিসেবে বলা হচ্ছে বাঙালিরা জিতেছে চারটি (রবীন্দ্রনাথ, অমর্ত্য সেন, মুহাম্মদ ইউনুস, অভিজিৎ ব্যানার্জি) তামিলরা জিতেছে ৩টি (রামন, চন্দ্রশেখর, ভেঙ্কটরামন), পাঞ্জাবিরা দুটি(হরগোবিন্দ খোরানা, আবদুস সালাম), পাশতুন ১ (মালালা ইউসুফজাই), হিন্দুস্থানী ১টি (সত্যার্থী)।

সুজি ডার্কিন্স নামে একজন অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছেন যে অভিজিৎ ব্যানার্জি নোবেল পেয়েছেন তার অর্থনীতির জ্ঞানের জন্য, তিনি বাঙালি এ জন্য নয়।

আরেক জন লিখেছেন, বাঙালিরা কথা বলে, তামিলরা কাজ করে... তিনজন বাঙালি 'হাওয়াই' নোবেল জিতেছেন, আর তিনজন মাদ্রাজী ও একজন পাঞ্জাবি নোবেল পেয়েছেন বিশুদ্ধ বিজ্ঞানে।

শূন্য আবিষ্কার: নতুন তত্ত্ব

শূন্য সংখ্যাটির ধারণা আবিষ্কারের সাথে জড়িয়ে আছে প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ আর্যভট্টের নাম । তার এ আবিষ্কারের সাথে নোবেল পুরস্কারকে জড়িয়ে মজার মন্তব্য করেছেন অগ্নিভ নিয়োগী নামে একজন।

টুইটারে তিনি লিখেছেন "কতজন গুজরাটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন - তা সন্ধান করতে গিয়েই শূন্য আবিষ্কার করেছিলেন আর্যভট্ট।"

অনেকে মনে করেন, এখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্য বলেই গুজরাটের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

কারণ, নরেন্দ্র মোদীর নীতির কড়া সমালোচক অভিজিৎ ব্যানাজির নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে মি. মোদী এবং বিজেপির প্রতিক্রিয়া ছিল নিস্পৃহ ধরণের।

কেউ কেউ বলেছেন, বিজেপি ও সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠরা যে অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জীর মতো অর্থনীতিবিদের নোবেল জয়কে ঠিকমতো হজম করতে পারছেন না, এটাই তার কারণ।

একজন লিখেছেন: কোন ভারতীয় নোবেল পেলে ধারাবাহিকভাবে এই প্রতিক্রিয়াগুলো হয়: প্রথমে দেখা যায় সম্মান পাবার উত্তেজনা। তারপর আত্মানুসন্ধান: এই বিজয়ীরা ভারতে বসে এ সাফল্য পান না কেন? তৃতীয় প্রতিক্রিয়া, ক্রোধ: এরা ভারত ছেড়ে গেল কেন? চতুর্থ প্রতিক্রিয়া: এদের নিয়ে গুগল সার্চ 'হা ঈশ্বর, ওরা এসব কী বলেছে?' পঞ্চম প্রতিক্রিয়া: এরা মানসিকভাবে 'পুরোপুরি ভারতীয়' নয়।

বাংলাদেশে কি বলা হচ্ছে?

বাংলাদেশেও অনেকে সামাজিক মাধ্যমে একজন বাঙালির নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করছেন।

তবে একজন ভারতীয় বাঙালি নোবেল পেযেছেন বলে বাংলাদেশীদের এত উল্লাসের কি আছে, এমন প্রশ্ন তুলেছেন অন্য কেউ কেউ।

একজন লিখেছেন, বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনুস যখন নোবেল পেয়েছিলেন তখন কি ভারতে বা পশ্চিমবঙ্গে এমন উল্লাস হয়েছিল?

এর সাথে অনেকে একমত প্রকাশ করলেও অন্য কয়েকজন নানা তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, মুহাম্মদ ইউনুসের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে ভারতেও অনেকেই আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন।

এটা কি আসলেই নোবেল পুরস্কার?

আরেকটি আলোচনাও দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমে - আর তা হলো : অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে এই নোবেল পুরস্কার আসলেই 'নোবেল পুরস্কার' কি না। বাংলাদেশ ও ভারত - দু'জায়গাতেই সামাজিক মাধ্যমে এ প্রসঙ্গ এসেছে।

কেউ কেউ তুলে ধরেছেন যে এটি আসলে ঠিক ঐতিহ্যগত নোবেল কমিটির দেয়া পুরস্কার নয়।

তারা নানা তথ্য উদ্ধৃত করে বলছেন, এটি হচ্ছে 'আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে' দেয়া সুইডিশ রিকজব্যাংক পুরস্কার।

এটি ১৯৬০এর দশকের একেবারে শেষ দিকে দেয়া শুরু হয়েছিল এবং এর পদকটিও অন্যান্য নোবেল পদকের চেয়ে একটু অন্যরকম দেখতে - যদিও 'অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার' হিসেবে এটিকেই বোঝায়।

ভারতে হিন্দুত্ববাদী নানা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, এমন ব্যক্তিরা এ নিয়ে কটাক্ষ করছেন সোমবার থেকেই।

কেউ যেমন বলছেন, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারই নেই, তাই অভিজিৎ ব্যানার্জী নোবেল পেয়েছেন, এমনটা বলা ঠিক নয়।

কেউ টেনে আনছেন আরেক নোবেলজয়ী বাঙালী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকেও। এরা মন্তব্য করছেন, অভিজিৎ ব্যানার্জী আর অমর্ত্য সেনদের মতো অর্থনীতিবিদদের জন্যই পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির এই 'দুর্দশা।' বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ