বিশ্বে তেল এত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হয়ে উঠল কীভাবে?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:২২ | আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:৩৮
১৮৫৯ সালের ২৭ আগস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠানো হলো। উদ্যোক্তা এডউইন ড্রেকের শেষ আর্থিক সহায়তাকারী অবশেষে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন।
তিনি তার পাঠানো ওই বার্তায় বলেছেন, আপনার ঋণ পরিশোধ করুন, হাল ছেড়ে দিন এবং বাড়িতে ফিরে আসুন।
ড্রেক আশা করেছিলেন যে, তিনি হয়তো পাথরের ভাজে তেলের সন্ধান বা ‘রক অয়েল’ খুঁজে পাবেন। রক অয়েল হচ্ছে, এক ধরনের বাদামি বর্ণের ‘অপরিশোধিত’ তেল, যা কখনও কখনও পশ্চিম পেনসিলভেনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় মাটিতে বুদবুদ আকারে বের হয়।
তিনি ভেবেছিলেন যে, এই তেলকে পরিশোধিত করে কেরোসিনে পরিণত করবেন তিনি, যা ল্যাম্প জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা যাবে। আর একই সঙ্গে এটিই হবে ক্রমবর্ধমান হারে দাম বেড়ে চলা তিমির তেলের বিকল্প।
এ ছাড়া এর বাই প্রোডাক্ত বা উপ-জাত পদার্থ হিসেবে যা পাওয়া যাবে তা হলো গ্যাসোলিন। কিন্তু তিনি যদি এর জন্য কোনো ক্রেতা খুঁজে না পান তা হলে এটি ফেলেও দেয়া যাবে।
বার্তাটি পাঠানো হলো ঠিকই, কিন্তু ড্রেকের কাছে তখনো এটি পৌঁছায়নি। এরই মধ্যে মাটির নিচে থাকা একটি অপরিশোধিত তেল ভান্ডারে পৌঁছায় তার ড্রিল। ফলে অতিরিক্ত চাপের কারণে ৬৯ ফুট নিচ থেকে তেল বের হতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত বেঁচে যায় তিমিগুলো এবং পৃথিবীও পরিবর্তিত হতে যাচ্ছিল।
কয়েক বছর পরে, মাত্র কয়েক মাইল দক্ষিণে তেল ভান্ডারে কী পরিমাণ মজুদ রয়েছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
পেনসিলভেনিয়ার পিথোলে ১৮৬৪ সালে যখন প্রথম তেল পাওয়া যায়, ‘তখন সেখানকার ৬ মাইলের মধ্যে ৫০ জন বাসিন্দাও ছিল না,’ নিউইয়র্ক টাইমসের মতে।
বছরখানেক পর পিথোলের বাসিন্দা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গড়ে ওঠে ৫০টি হোটেল, দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত পোস্ট অফিসগুলোর মধ্যে একটি, দুটি টেলিগ্রাফ স্টেশন এবং কয়েক ডজন পতিতালয়।
কিছু লোকের ভাগ্য খুলে যায়। কিন্তু বাস্তবে অর্থনীতি বেশ জটিল এবং স্বাবলম্বীও বটে। কিন্তু পিথোল এর কোনটিই ছিল না এবং এক বছরের মধ্যে এটি বিরান হয়ে যায়।
এর তেলের মজুদ বেশি দিন টেকেনি। কিন্তু জ্বালানির জন্য আমাদের তৃষ্ণা বেড়েই যাচ্ছিল। কেননা তেলের ওপর ভর করেই আধুনিক অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল।
বিশ্বের শক্তির উৎসের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি দখল করে রেখেছে তেল। যেটা কিনা কয়লা, পরমাণু, জলবিদ্যুৎ এবং নবায়নযোগ্য শক্তি- এই তিনটি উৎস মিলিয়ে যা হয় সেটির তুলনায় দ্বিগুণ। তেল ও গ্যাস মিলে আমাদের বিদ্যুৎ শক্তির প্রায় এক-চতুর্থাংশ সরবরাহ করে থাকে। প্লাস্টিক তৈরির কাঁচামালও আসে এটি থেকে। আর পরিবহন খাত তো রয়েছেই।
এডউইন ড্রেকের হয়তো মাথায় প্রশ্ন থাকতে পারে যে গ্যাসোলিন কে কিনবে, অভ্যন্তরীণ জ্বালানি ইঞ্জিন তার এই প্রশ্নেরই যেন উত্তর নিয়ে আসে। গাড়ি থেকে শুরু করে ট্রাক, কার্গো জাহাজ থেকে শুরু করে জেট প্লেন, তেলভিত্তিক জ্বালানি এখনো মানুষ এবং পণ্যদ্রব্য বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন করে থাকে।
আর তাই বিস্ময়ের অবকাশ নেই যে, তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক দাম।
১৯৭৩ সালে, যখন আরব রাষ্ট্রগুলো কিছু ধনী জাতির কাছে তেল বিক্রিতে অসম্মতি জানাল, তখন মাত্র ছয় মাসে ব্যারেলপ্রতি দাম ৩ ডলার থেকে বেড়ে ১২ ডলারে গিয়ে ঠেকে। এর কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়। ১৯৭৮, ১৯৯০ এবং ২০০১ সালে তেলের দাম বাড়ার কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের মন্দা দেখা দিয়েছিল।
অনেক অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার পেছনেও আসলে তেলের রেকর্ড পরিমাণ উচ্চ দাম কাজ করেছিল। যদিও ওই মন্দার জন্য এককভাবে ব্যাংক ব্যবস্থাকে দায়ী করা হয়। তাই, তেল থাকলে, অর্থনীতিও সচল থাকে।
তা হলে আমরা কেন আসলে উদ্বেগজনকভাবে পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি?
ড্যানিয়েল ইয়েরগিনর ‘ম্যাজিস্টেরিয়াল হিস্টরি অব অয়েল, দ্য প্রাইজ’ শুরু হয়েছিল উইনস্টন চার্চিলের জন্য একটি দ্বন্দ্ব দিয়ে শুরু হয়েছিল। ১৯১১ সালে রয়াল নেভির প্রধান নিযুক্ত করা হয়েছিল চার্চিলকে। তার প্রথম সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল, সম্প্রসারণবাদী জার্মানিকে মোকাবেলা করতে, এর যুদ্ধজাহাজগুলোকে কি ওয়েলশের কয়লা দিয়ে চালিত করা হবে নাকি দূর পার্সিয়া বা ইরানের তেল দ্বারা চালিত করা হবে? কিন্তু এ ধরনের অনিশ্চিত একটি উৎসের ওপর কেউ কেন নির্ভর করবে? কারণ তেল চালিত যুদ্ধজাহাজগুলো দ্রুততর, উচ্চগতিসম্পন্ন, জ্বালানি সামলাতে কম লোকবলের দরকার হয় এবং বন্দুক ও গোলাবারুদের জন্য বেশি জায়গা পাওয়া যায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই তেল কয়লার চেয়ে ভালো জ্বালানি ছিল। ১৯১২ সালের এপ্রিলে চার্চিলের দুভার্গ্যজনক পতন আমাদের সেই একই বার্তা দেয় যার ওপর ভিত্তি করে আমাদের তেলের ওপর নির্ভরতা টিকে আছে এবং তার পর থেকে বৈশ্বিক রাজনীতিকে বদলে দিচ্ছে। চার্চিলের সিদ্ধান্তের পর ব্রিটিশ ট্রেজারি অ্যাংলো-পার্সিয়ান তেল কোম্পানির বড় অংশ কিনে নেয়, যা আসলে বিপির পূর্বসূরি। ১৯৫১ সালে ইরান সরকার এটিকে সরকারি জাতীয়তাভুক্ত করে। ব্রিটিশরা এর বিরোধিতা করে বলে যে সেটি আসলে তাদের কোম্পানি। ইরানিরা এটিকে তাদের বলে দাবি করে। আর এই বিতর্ক পরের কয়েক দশক ধরে চলেছিল। কয়েক দেশ বেশ ভালোই করছিল। সৌদি আরব বিশ্বের অন্যতম ধনী একটি দেশ তাদের তেল ক্ষেত্রের জন্য। এর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর মূল্য অ্যাপল, গুগল কিংবা আমাজনের চেয়ে বেশি। এখনো সৌদি আরবের অর্থনীতিকে কেউ জাপান বা জার্মানির মতো জটিল কিংবা পরিশীলিত বলে মনে করে না। এটি অনেকটা পিথোলের মতোই তবে আরও বড় পরিসরে। অন্যদিকে ইরাক থেকে ইরান, ভেনেজুয়েলা থেকে নাইজেরিয়া, কিছু কিছু তেল সমৃদ্ধ দেশ আবিষ্কারের পর থেকে উন্নতি করেছে। তবে অর্থনীতিবিদরা এতে ‘তেলের অভিশাপ’ বলে উল্লেখ করেন। হুয়ান পাবলো পেরেজ আলফনজো, ভেনেজুয়েলার তেল বিষয়কমন্ত্রী ১৯৬০ এর দশকে আরও বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বলেন, ‘এটা শয়তানের মল, আর আমরা এই মলে ডুবে যাচ্ছি।’ বেশি পরিমাণে তেল থাকাটা কেন সমস্যা?
রফতানির কারণে মুদ্রার মানের ওপর প্রভাব পড়ে, যা অভ্যন্তরীণভাবে তেল ছাড়া অন্য যে কোনো পণ্যের উৎপাদন মূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে। এর মানে হচ্ছে, উৎপাদন কিংবা জটিল সেবা শিল্পের বিকাশ কঠিন হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিকভাবে, অনেক রাজনীতিবিদই চেষ্টা করেছেন তার দেশের তেলের বাজারে তাদের নিজেদের এবং মিত্র রাষ্ট্রগুলোর জন্য একচেটিয়া বাজার তৈরি করার। স্বৈরশাসকরাও এর ব্যতিক্রম নয়। কারো কারো জন্য হয়তো টাকা আছে- তবে এ ধরনের অর্থনীতি দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়। আর এ কারণেই আমরা এমন কিছুর আশা করতে পারি যা তেলকে হঠিয়ে দেবে। রুখবে জলবায়ু পরিবর্তনও। কিন্তু তেলের কারণে ব্যাটারি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে না। এর কারণ হচ্ছে, যেসব মেশিন বা যন্ত্র আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ায় সেগুলোকে তাদের শক্তির উৎসটি নিজেদের সাথেই বহন করতে হয়। আর এ ক্ষেত্রে সেটি যত হালকা হয় ততই ভাল। এক কিলোগ্রাম পেট্রোলে ৬০ কেজি ওজনের ব্যাটারির সমান শক্তি পাওয়া যায় এবং ব্যাটারির তুলনায় ব্যবহারের পর এটি আর থাকেও না। খালি ব্যাটারিগুলোও পূর্ণ ব্যাটারির সমানই ভারী। বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোও শেষ মেশ উন্নত হতে শুরু করে। তবে বৈদ্যুতিক জাম্বো জেট গুলো বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। এমন এক সময় ছিলো যখণ মনে হতো যে, তেল হয়তো ফুরিয়ে যাবে-একে বলা হতো ‘পিক অয়েল’, যা তেলের দাম বাড়িয়ে আমাদের একটি স্বচ্ছ, নবায়নযোগ্য অর্থনীতির দিকে ধাবিত করত। আসলে তেলের ব্যবহারের তুলনায় এর আবিষ্কার অনেক দ্রুত হয়েছিল। এটি সম্ভব হয়েছিল ‘হাইড্রলিক ফ্র্যাকচারিং’ বা ‘ফ্রাকিং’-এর জন্য। এটি একটি বিতর্কিত পদ্ধতি যাতে পানি, বালু এবং রাসায়নিক উচ্চ চাপে মাটির নিচে পাম্প করা হতো যাতে করে তেল এবং গ্যাস বেরিয়ে আসে। ফ্র্যাকিং বলতে ঐতিহ্যগত তেল ক্ষেত্রে আবিষ্কার এবং আহরণের পরিবর্তে উৎপাদনকেই বেশি বোঝায়। এটি মানসম্মত এবং দ্রুত উৎপাদনশীলতার কারণে লাভজনকও বটে। এর দাম আসলে কত হবে তার ওপর নির্ভর করেই এর উৎপাদন শুরু হবে কি হবে না তার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অনেক সমালোচক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে। যাই হোক, পারমিয়ান অববাহিকা, যা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্র্যাকিং শিল্পের উৎস, এরই মধ্যে সৌদি আরব এবং ইরাক ছাড়া ওপেকভুক্ত ১৪ দেশের তুলনায় এককভাবেই বেশি উৎপাদন করে। মনে হচ্ছে যে, আমরা এখনো শয়তানের মলেই নিমজ্জিত হচ্ছি এবং এটা কিছু সময় ধরে চলতেই থাকবে।
খবর বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
ড্যানিয়েল ইয়েরগিনর ‘ম্যাজিস্টেরিয়াল হিস্টরি অব অয়েল, দ্য প্রাইজ’ শুরু হয়েছিল উইনস্টন চার্চিলের জন্য একটি দ্বন্দ্ব দিয়ে শুরু হয়েছিল। ১৯১১ সালে রয়াল নেভির প্রধান নিযুক্ত করা হয়েছিল চার্চিলকে। তার প্রথম সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল, সম্প্রসারণবাদী জার্মানিকে মোকাবেলা করতে, এর যুদ্ধজাহাজগুলোকে কি ওয়েলশের কয়লা দিয়ে চালিত করা হবে নাকি দূর পার্সিয়া বা ইরানের তেল দ্বারা চালিত করা হবে? কিন্তু এ ধরনের অনিশ্চিত একটি উৎসের ওপর কেউ কেন নির্ভর করবে? কারণ তেল চালিত যুদ্ধজাহাজগুলো দ্রুততর, উচ্চগতিসম্পন্ন, জ্বালানি সামলাতে কম লোকবলের দরকার হয় এবং বন্দুক ও গোলাবারুদের জন্য বেশি জায়গা পাওয়া যায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই তেল কয়লার চেয়ে ভালো জ্বালানি ছিল। ১৯১২ সালের এপ্রিলে চার্চিলের দুভার্গ্যজনক পতন আমাদের সেই একই বার্তা দেয় যার ওপর ভিত্তি করে আমাদের তেলের ওপর নির্ভরতা টিকে আছে এবং তার পর থেকে বৈশ্বিক রাজনীতিকে বদলে দিচ্ছে। চার্চিলের সিদ্ধান্তের পর ব্রিটিশ ট্রেজারি অ্যাংলো-পার্সিয়ান তেল কোম্পানির বড় অংশ কিনে নেয়, যা আসলে বিপির পূর্বসূরি। ১৯৫১ সালে ইরান সরকার এটিকে সরকারি জাতীয়তাভুক্ত করে। ব্রিটিশরা এর বিরোধিতা করে বলে যে সেটি আসলে তাদের কোম্পানি। ইরানিরা এটিকে তাদের বলে দাবি করে। আর এই বিতর্ক পরের কয়েক দশক ধরে চলেছিল। কয়েক দেশ বেশ ভালোই করছিল। সৌদি আরব বিশ্বের অন্যতম ধনী একটি দেশ তাদের তেল ক্ষেত্রের জন্য। এর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর মূল্য অ্যাপল, গুগল কিংবা আমাজনের চেয়ে বেশি। এখনো সৌদি আরবের অর্থনীতিকে কেউ জাপান বা জার্মানির মতো জটিল কিংবা পরিশীলিত বলে মনে করে না। এটি অনেকটা পিথোলের মতোই তবে আরও বড় পরিসরে। অন্যদিকে ইরাক থেকে ইরান, ভেনেজুয়েলা থেকে নাইজেরিয়া, কিছু কিছু তেল সমৃদ্ধ দেশ আবিষ্কারের পর থেকে উন্নতি করেছে। তবে অর্থনীতিবিদরা এতে ‘তেলের অভিশাপ’ বলে উল্লেখ করেন। হুয়ান পাবলো পেরেজ আলফনজো, ভেনেজুয়েলার তেল বিষয়কমন্ত্রী ১৯৬০ এর দশকে আরও বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বলেন, ‘এটা শয়তানের মল, আর আমরা এই মলে ডুবে যাচ্ছি।’ বেশি পরিমাণে তেল থাকাটা কেন সমস্যা?
রফতানির কারণে মুদ্রার মানের ওপর প্রভাব পড়ে, যা অভ্যন্তরীণভাবে তেল ছাড়া অন্য যে কোনো পণ্যের উৎপাদন মূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে। এর মানে হচ্ছে, উৎপাদন কিংবা জটিল সেবা শিল্পের বিকাশ কঠিন হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিকভাবে, অনেক রাজনীতিবিদই চেষ্টা করেছেন তার দেশের তেলের বাজারে তাদের নিজেদের এবং মিত্র রাষ্ট্রগুলোর জন্য একচেটিয়া বাজার তৈরি করার। স্বৈরশাসকরাও এর ব্যতিক্রম নয়। কারো কারো জন্য হয়তো টাকা আছে- তবে এ ধরনের অর্থনীতি দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়। আর এ কারণেই আমরা এমন কিছুর আশা করতে পারি যা তেলকে হঠিয়ে দেবে। রুখবে জলবায়ু পরিবর্তনও। কিন্তু তেলের কারণে ব্যাটারি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে না। এর কারণ হচ্ছে, যেসব মেশিন বা যন্ত্র আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ায় সেগুলোকে তাদের শক্তির উৎসটি নিজেদের সাথেই বহন করতে হয়। আর এ ক্ষেত্রে সেটি যত হালকা হয় ততই ভাল। এক কিলোগ্রাম পেট্রোলে ৬০ কেজি ওজনের ব্যাটারির সমান শক্তি পাওয়া যায় এবং ব্যাটারির তুলনায় ব্যবহারের পর এটি আর থাকেও না। খালি ব্যাটারিগুলোও পূর্ণ ব্যাটারির সমানই ভারী। বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোও শেষ মেশ উন্নত হতে শুরু করে। তবে বৈদ্যুতিক জাম্বো জেট গুলো বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। এমন এক সময় ছিলো যখণ মনে হতো যে, তেল হয়তো ফুরিয়ে যাবে-একে বলা হতো ‘পিক অয়েল’, যা তেলের দাম বাড়িয়ে আমাদের একটি স্বচ্ছ, নবায়নযোগ্য অর্থনীতির দিকে ধাবিত করত। আসলে তেলের ব্যবহারের তুলনায় এর আবিষ্কার অনেক দ্রুত হয়েছিল। এটি সম্ভব হয়েছিল ‘হাইড্রলিক ফ্র্যাকচারিং’ বা ‘ফ্রাকিং’-এর জন্য। এটি একটি বিতর্কিত পদ্ধতি যাতে পানি, বালু এবং রাসায়নিক উচ্চ চাপে মাটির নিচে পাম্প করা হতো যাতে করে তেল এবং গ্যাস বেরিয়ে আসে। ফ্র্যাকিং বলতে ঐতিহ্যগত তেল ক্ষেত্রে আবিষ্কার এবং আহরণের পরিবর্তে উৎপাদনকেই বেশি বোঝায়। এটি মানসম্মত এবং দ্রুত উৎপাদনশীলতার কারণে লাভজনকও বটে। এর দাম আসলে কত হবে তার ওপর নির্ভর করেই এর উৎপাদন শুরু হবে কি হবে না তার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অনেক সমালোচক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে। যাই হোক, পারমিয়ান অববাহিকা, যা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্র্যাকিং শিল্পের উৎস, এরই মধ্যে সৌদি আরব এবং ইরাক ছাড়া ওপেকভুক্ত ১৪ দেশের তুলনায় এককভাবেই বেশি উৎপাদন করে। মনে হচ্ছে যে, আমরা এখনো শয়তানের মলেই নিমজ্জিত হচ্ছি এবং এটা কিছু সময় ধরে চলতেই থাকবে।
খবর বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ