আজকের শিরোনাম :

ব্রিটিশ সংসদ : সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর কী হতে পারে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:১৯

ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আদালত প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সংসদ স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে যে রায় দিয়েছে, তা জনসনের জন্য একটা বড় ধরনের ধাক্কা।

ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ বা ব্রেক্সিটকে ঘিরে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সুপ্রিমে কোর্টের এই সিদ্ধান্ত তা আরও বাড়াবে। ব্রিটেন কীভাবে ইইউ থেকে বের হবে, কখন বের হবে কিংবা আদৌ বের হবে কিনা তা নিয়ে দেশটি এখন এক সংকটের মধ্যে রয়েছে।

ব্রিটিশ সংসদের দুটি কক্ষই অর্থাৎ হাউস অব কমন্স এবং হাউস অব লর্ডস ১০ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত রয়েছে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত। এ স্থগিতাদেশ ব্রিটেনে সরকারি পরিভাষায় পরিচিত ‘প্রোরোগ’ নামে।

অক্টোবরের ৩১ তারিখে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

সংসদ স্থগিত করে দেওয়ার এ সময়টা নিয়েই তৈরি হয় বিতর্ক। কারণ এর ফলে ব্রেক্সিটের জন্য নির্ধারিত তারিখের আগে সংসদ অধিবেশনের সময় সীমিত হয়ে যায়।

ব্রেক্সিটসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব মন্ত্রীদের কাছে চাওয়ার অথবা সরকারের আইনকানুন খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ এমপিদের জন্য সীমিত করে দেওয়া হয়।

বিরোধী দলের ঊর্ধ্বতন এমপিরা এই পদক্ষেপকে ‘ক্যু’ বলে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে সরকার সংসদের বর্তমান অধিবেশন শেষ করে দেবার জন্য এই পদক্ষেপ নিচ্ছে যাতে করে আগামী কর্মসূচিতে নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব আনা যায়।

মঙ্গলবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর এ পদক্ষেপ সংসদের দায়িত্বপালনে বাধা সৃষ্টি করেছে এবং এর জন্য আদালত সরকারকে দায়ী করেছে।

আদালত তার রায়ে বলেছে, গ্রীষ্মকালীন বিরতির পর এবং ৩১ অক্টোবরের আগে যে আট সপ্তাহ সংসদ চলার কথা ছিল তার মধ্যে পাঁচ সপ্তাহ সংসদ বন্ধ রাখা স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী সংসদ স্থগিত রাখার প্রথার মধ্যে পড়ে না।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, সংসদ স্থগিত করার নির্দেশটি ছিল অবৈধ। কাজেই সংসদ কখনই কার্যত স্থগিত হয়নি।

রায়ে বলা হয়েছে যে, ‘‘সংসদ যেহেতু স্থগিত বা ‘প্রোরোগ’ করা হয়নি, তাই এখন কী হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে খোদ সংসদ।”

হাউস অব কমন্সের স্পিকার, জন বারকো, বলেছেন তিনি সংসদের কার্যক্রম আবার শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন এবং বুধবার সকালে আবার সংসদ বসতে যাচ্ছে।

বরিস জনসন বিবিসিকে বলেছেন, ‘আদালেতের এই রায় আমরা মেনে নেব, কারণ বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তবে আমি বলতে বাধ্য যে আমি বিচারকদের সঙ্গে মোটেই একমত নই, আমি মনে করি এই রায় সঠিক নয়। কিন্তু আমরা এই রায় মেনে নেব এবং সংসদ অধিবেশন অবশ্যই আবার শুরু হবে।’

বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন সংসদ অধিবেশন আবার চালু করার দাবি জানিয়েছেন।

ব্রেক্সিটবিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির একজন এমপি, টম টুগেনধাত, তিনি কমন্স সভায় বসে আছেন এমন একটি ছবি টুইট করেছেন যার নিচে ক্যাপশান লেখা, ‘আমরা বসে পড়েছি...।’

ব্রেক্সিটের জন্য এর অর্থ কী?
আনুষ্ঠানিকভাবে, কিছুই বদলায়নি কিন্তু এর ফলে চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবার বিষয় নিয়ে চাপ দেবার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হাত এখন দুর্বল হয়ে যাবে।

ইতোমধ্যেই ৩১ অক্টোবর চুক্তি ছাড়া ইইউ ত্যাগ করা বন্ধ করে আইন পাস করা হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে বাণিজ্য, সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ এবং অভিবাসন বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভবিষ্যত সম্পর্ক কী হবে তা নির্ধারণ করে তবেই ব্রিটেন ইইউ ছাড়বে- বিনা চুক্তিতে ইইউ ছাড়া যাবে ন।

১৯ অক্টোবরের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও ইইউর মধ্যে যদি কোনো চুক্তিতে মতৈক্য না হয় এবং এমপিরা যদি চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে রাজি না হয়, তা হলে প্রধানমন্ত্রীকে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার জন্য আইনত ইইউর কাছে আবেদন করতে হবে।

কিন্তু বরিস জনসন এটা মোটেই চাননি। তাই সুপ্রিম কোর্টে তার এ পরাজয়ের ফলে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে পথ বের করার সুযোগ এখন তার সীমিত হয়ে যাবে।

এ ছাড়া সংসদ স্থগিত না হওয়ার অর্থ এখন দাঁড়াবে, সরকার যাতে চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট করার সুযোগ না নিতে পারে তার জন্য এমপিরা এখন নতুন আইন আনার বা নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য আরও সময় হাতে পাবেন।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ