বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
কেন ছাত্রদের আস্থা হারাচ্ছে ছাত্র রাজনীতি?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:২২
২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ আশার সঞ্চার করেছিল। তবে নির্বাচনের ৬ মাস পরে শিক্ষার্থীরা বলছেন তাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে ছাত্র সংগঠনগুলো।
তাদের অভিযোগ, ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সোচ্চার নয় ছাত্র সংগঠনগুলো। বিশেষ করে হল সিট নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজিফা তাসনিম খানম বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল ডাকসু হলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী বৈধভাবে সিট পাবে। কিন্তু তিনি এখনো সিট পাননি। এগুলো নিয়ে কেউ কথাও বলছে না। হলে থাকার জন্য জোর করে রাজনীতি করানো হয়। মিছিলে যেতে বাধ্য করা হয়। কেন একজন শিক্ষার্থীকে পড়ালেখা বাদ দিয়ে জোর করে রাজনীতি করাতে হবে?’
নাজিফা তাসনিম খানমের সঙ্গে একমত পোষণ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত সুলতানা।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি হওয়ার কথা ছাত্রদের নিয়ে। বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের কেন্দ্র করে হয় না, হয় দলকে কেন্দ্র করে। তাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতা অর্জন করা। ছাত্রদের কথা তারা বলছে না।’
একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো আন্দোলনের সুতিকাগার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেও বিশেষ অবদান আছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব থাকলেও দৃশ্যমান কার্যক্রম বাংলাদেশ ছাত্রলীগেরই সবচেয়ে বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সব ছাত্র সংগঠনই কমবেশি জাতীয় রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। নেতিবাচক জাতীয় রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে ছাত্র সংগঠনগুলি অনেক সময়ই ছাত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’
শিক্ষার্থীদের বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত হতে হবে এ বিষয়ে সব ছাত্র সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখন পর্যন্ত তাদের কর্মধারা পরিচালনা করতে পারেনি বলে শিক্ষার্থীরা এমন মনে করেন বলে জানান তিনি।
এদিকে ২৭ বছর পর আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৬ষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনের সময় ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকবার মিছিল করেছিল ছাত্রদল। এর পর এ সংগঠনের আর কোনো দৃশ্যমান কর্মসূচি দেখা যায়নি। এর জন্য ছাত্রদলের ওপর দমনপীড়নকে দায়ী করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘যারা ছাত্রদল সমর্থন করে কিংবা হয়ত শুধু ছাত্রদলের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিয়েছে, তাদের নানাভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। এ রকম যদি হয় তাহলে কীভাবে এ প্ল্যাটফর্ম বেছে নেবে শিক্ষার্থীরা?’
ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দাবিতে প্রায়ই নানারকম কর্মসূচি পালন করে থাকে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্র জোট। তবে এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার খুবই কম। বর্তমানে এ জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশে ছাত্র ইউনিয়ন।
দমন-পীড়নের বিষয়টি উল্লেখ করে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের ওপরই এক ধরনের পীড়ন চলছে।আমরাও এর বাইরে নই।
দেশের সামগ্রিক রাজনীতির প্রভাবেই ছাত্রদের কাছ থেকে ছাত্র রাজনীতি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, এখনকার ছাত্রছাত্রীরা অনেক বেশি সচেতন। তারা জানে কে কী করছে। ছাত্ররাজনীতির নামে কমিশন খাওয়া, প্রশাসনের সহযোগিতায় নানারকম দুর্নীতির যে অভিযোগ ছাত্রসংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে রয়েছে তারা এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল।
গত কয়েকবছরের ছাত্র আন্দোলনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বিভিন্ন ন্যায্য আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই একত্রিত হয়েছে। তারা ছাত্রসংগঠনগুলোর ওপর আর নির্ভর করতে রাজি নয়।
সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই। আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে ছাত্রসংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল।
এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ