আজকের শিরোনাম :

বিবিসিকে প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

কুর্দিদের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালাতেন সাদ্দাম হোসেন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:০৮

‘এ এক ভয়াবহ অনুভূতি। আমি দেখলাম আমার চোখের সামনে মাকে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমার কোনো শক্তি ছিল না। আমি তাকে রক্ষা করতে পারিনি। এর পর আমি দেখলাম আমার দুটি বোনকে মেরে ফেলা হচ্ছে। শুধু আমার মা আর বোনেরা নয়, তারা আমার সব আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা করেছিল।’

তাদের অপরাধ এটাই ছিল যে- তারা সাদ্দাম হোসেনের ইরাকে কুর্দি পরিচয়ের মানুষ।

তৈমুর আবদুল্লা আহমেদ ১৯৮৮ সালের মে মাসে সেই দিনের কথা প্রায় প্রতিটি দিন মনে করেন, সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর।

তখন তিনি প্রায় নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন- তবে সেই ফেরা হয়েছে শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে নয়।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি ওইদিনই আসলে মারা গিয়েছিলাম। সেই কবরস্থানে আমার মা ও বোনদের সঙ্গে আমার হৃদয়ের মৃত্যু হয়েছিল।’

তবে তিনি যে পুরোপুরি অক্ষত ছিলেন তা নয়। বাহুতে ও পিঠে গুলি লেগেছিল তার। কিন্তু তার পরও তিনি অন্ধকারের মধ্যে গর্ত থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হতে পেরেছিলেন এবং এ কারণেই তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান।

ওই নৃশংসতার স্মৃতি আহমেদের মনে এখনো খুব স্পষ্টভাবে গেঁথে আছে এবং সেদিনের পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষ বর্ণনা দিতে পিছপা হন না।

তৈমুর আবদুল্লা বলেন, ‘আমি দেখলাম একটি গুলি আমার মায়ের মাথায় আঘাত করল এবং এর প্রভাবে তার স্কার্ফ খুলে গেল। আরেকটা বুলেট আমার বোনের গালের ভেতরে ঢুকে তার মাথা থেকে বেরিয়ে যায়। আমার অন্য বোনের বাহুতে গুলি করা হয়েছিল এবং রক্ত পানির মতো প্রবাহিত হচ্ছিল।’

যখন তৈমুর ঘুমাতে যান বা কোনো শিশু বা তরুণ বয়সী মেয়েদের দেখেন, তখন এই দৃশ্যগুলো বারবার তার মনে ফ্ল্যাশব্যাক হয় এবং তিনি চিন্তা করতে থাকেন যে তার পরিবারের সঙ্গে কী হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘আমি আর কখনও একজন সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে পারব না। যতবার আমি এসব নিয়ে ভাবি, আমি মরে যাই।’

তৈমুরের এখন বয়স ৪৩ বছর। বিবিসিকে তিনি জানান তাঁর বেঁচে থাকা এবং ন্যায়বিচারের দাবির এক অসাধারণ গল্প।

সচেতনতা নেই
জুনে, ইরাকি কর্তৃপক্ষ সেই জায়গাটি খনন করতে শুরু করে যেখানে আহমেদ বিশ্বাস করেন যে তার পরিবারের মানুষদের মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এই খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে তৈমুরকে কিছু জানাননি। তারা কুর্দি অঞ্চলে লাশগুলো পুনরায় দাফনের পরিকল্পনা করছে।

এতে তৈমুর ভীষণ রেগে যান- তিনি জানান যে এমন গোপনীয়ভাবে দেহাবশেষগুলো স্থানান্তরিত করার কোনো অর্থ নেই।

‘আমি চাই সমগ্র বিশ্ব আমাদের লোকদের সাথে কী ঘটেছিল তা দেখুক। আমি চাই যে গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগ মুহূর্তে যে নিরীহ শিশুটি মাকে আঁকড়ে ধরে ছিল, তাদের মৃতদেহ ক্যামেরা জুম করে দেখাক।’

তিনি মনে করেন যে এ গণহত্যার বর্বরতা সম্পর্কে খুব কম মানুষ অবগত আছে এবং তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে কাউকে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখেননি।

আহমদ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, কিন্তু বন্ধুরা যখন তাকে খবর দেন যে ওই গণকবরটি খোঁড়াখুঁড়ি করা হবে তখন তিনি দ্রুত ইরাকে ফিরে আসেন।

তিনি এখন গণকবরটি তোলা রোধে লড়াই করছেন যেখানে তার মা, বোন এবং নিকটাত্মীয়দের দেহাবশেষ রয়েছে।

কুর্দি গণহত্যা
গত এক দশকে ইরাকে অনেক কুর্দি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

ইরাকি সরকার বলেছে যে, এমন অন্তত ৭০টি গণকবর রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ১৭টি খোলা হয়েছে।

ইরান-ইরাক যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে সাদ্দাম হুসেইন ইরাকের উত্তরে বসবাসকারী কুর্দিদের বিরুদ্ধে ‘আল-আনফাল’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন।

উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি গোষ্ঠীকে শাস্তি দেয়া, যারা ইরানিদের সহযোগিতা করেছিল এবং আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল কুর্দিদের স্বশাসিত সমাজ ভেঙে দেয়া।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, পদ্ধতিগত জাতিগত নির্মূলে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হন, যাদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।

তবে কুর্দি সূত্রগুলো বলছে যে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। প্রায় ১ লাখ ৮২ হাজার জন।

বদলে গিয়েছিল গ্রামের মেজাজ
সাদ্দাম হোসেইনের বাহিনীর হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কার কথা শুনে ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে তৈমুরের পরিবার ও গ্রামের মেজাজ কীভাবে বদলে গিয়েছিল তা এখনো তার স্পষ্ট মনে আছে।

‘ইরাকের উত্তরাঞ্চলের গ্রামগুলো একে একে ঘেরাও করা হয়েছিল।’

তৈমুরে যতদূর মনে আছে যে তার গ্রামে পুরোপুরি তার বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা ছিলেন, যারা বেশিরভাগ কৃষক ছিলেন। কুলাজো গ্রামটি ছিল অনেক জনবহুল এবং চারিদিকে পাহাড়ের মাঝখানে ছোট এই গ্রামটি ছিল।

তৈমুর বলেন, ‘যদি ওই অঞ্চলটি কেউ ভালোভাবে না চেনেন তা হলে আমাদের গ্রাম খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।’

তবে সাদ্দামের শাসনামলে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক কুর্দিদের অভাব ছিল না।

‘ইরাকের সহযোগী এই কুর্দিরাই আমাদের গ্রামগুলোয় ইরাকি বাহিনীকে পথ দেখিয়ে এনেছিল।’

এপ্রিল মাসের একটি দিনে গ্রামের ১১০ জনের সবাইকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

‘তারা বলেছিল: আমরা জনগণের জন্য একটি শিবির খুলেছি এবং আপনারা সেখানে খুব আনন্দের সাথে বাস করতে পারবেন। সেখানে পানি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সব ধরণের সেবা রয়েছে।’

কেউ কেউ দল বেঁধে সামরিক গাড়িতে চড়ে বসেছিল। তবে তৈমুরের পরিবার তাদের নিজের ট্র্যাকটারে করে অনুসরণ করে।

পৃথকীকরণ
অবশেষে তাদের উত্তর ইরাকের তোপজায়ার একটি সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে, সবার থেকে পুরুষদের আলাদা করে ফেলা হয়। সেই সঙ্গে তাদের সঙ্গে থাকা সব জিনিষপত্র লুট করে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। বাবা আবদুল্লা আহমেদকে ওই শেষ বারের মতো দেখেছিলেন তৈমুর।

পরে সামরিক বাহিনী তাকে তার দুই বোন, মা, খালা এবং অন্যান্য তরুণ-তরুণীদের সাথে প্রায় এক মাস ধরে আটকে রাখে।

মে মাসের এক উত্তপ্ত দিনে, সব নারী এবং শিশুদের তিনটি সম্পূর্ণ ঢাকা সামরিক ট্রাকে তুলে দক্ষিণের অজানা গন্তব্যে কয়েক ঘণ্টা চালিয়ে নিয়ে যায়।

আহমেদ বলেছেন, ‘ট্রাকের ভেতরে খুব গরম ছিল। উত্তাপ ও ক্লান্তির কারণে দুটি মেয়ে সেখানেই মারা যায়। এর পর তারা মাঝখানে কোথাও থামে এবং আমাদের কিছু পানি খেতে দেয়। পানিতে কিছু রাসায়নিক মেশানো ছিল- যা আমাদের অসাড় করে দেয়। এর পর তারা আমাদের চোখ বেঁধে, হাত বেঁধে আবারও ট্রাকে ধাক্কা দিয়ে তুলে নিয়ে যায়।’

তৈমুর কোনভাবে নিজেকে মুক্ত করতে এবং চোখে বাঁধা কাপড় সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হন।

গোলাগুলি
পাঁচ মিনিট পরে, ট্রাকগুলো তাদের চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছে যায়। দরজাগুলো খোলার পরে তিনি দেখতে পান বুলডোজার দিয়ে পাশাপাশি তিনটি গর্ত খোঁড়া হচ্ছে।

তৈমুর আবদুল্লা বলেন, ‘আমি দেখলাম দুজন ইরাকি সেনা একে-৪৭ রাইফেল হাতে নিয়ে ওই গর্তের দিকে তাক করে আছে। নারী এবং শিশুদের- এমনকি এক মাস বয়সী শিশুদের ট্রাক থেকে নামিয়ে গর্তে ধাক্কা দিয়ে ফেলা হয়। হঠাৎ সৈন্যরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে - তারা একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও গুলি করে হত্যা করে, যিনি আর কদিন পরেই হয়তো জন্ম দিতে চলেছিলেন। তার পেট ছিঁড়ে টুকরো হয়ে যায়।’

তৈমুরকে তার বাম বাহুতে গুলি করা হয়েছিল। তিনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না।

‘আমি মারা যাওয়ার ভান করলাম। আমার মাথার আশেপাশে কাঁধে এবং পায়ের পাশ দিয়ে গুলিবর্ষণ হচ্ছিল। পুরো মাটি যেন কাঁপছিল। এক মুহূর্তে জায়গাটা রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়।’

তৈমুর পিঠে আরও দু'বার গুলিবিদ্ধ হন এবং আজও তিনি তার শরীরে সেই গুলির দাগ বয়ে বেড়াচ্ছেন।

‘আমি আমার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম,’ তিনি বলেন।

অব্যাহতি
আহমেদ বিশ্বাস করেন, তার অন্য বোনকে পাশের গর্তে হত্যা করা হয়েছিল। ‘তখন আমার বয়স ১২ বছর ছিল, আমার বোনদের মধ্যে বড়জনের বয়স ছিল ১০ বছরের মতো। আর বাকি দুজনের বয়স সম্ভবত ৮ এবং ৬ বছর।’

গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। সৈন্যরা চলে যাওয়ার পরে তৈমুর গর্ত থেকে বের হয়ে আসেন।

তিনি হেঁটে হেঁটে, হামাগুড়ি দিয়ে মরুভূমির দিকে ছুটতে থাকেন এবং একটি তাঁবুর কাছে এসে থামেন। ওই তাঁবুটি ইরাকি বেদুইন পরিবারের ছিল।

‘যেহেতু আমাকে হাসপাতালে নেওয়া বিপজ্জনক ছিল, তাই তারা আমাকে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়, তাদের ওষুধগুলোয় আমার গুলির ক্ষত সেরে ওঠে,’ -তিনি বলেন।

ওই ইরাকি পরিবার একটি কুর্দিশ ছেলেকে আশ্রয় দেওয়ার মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত ছিল, তবুও তারা তাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে তৈমুরের যতœ নিয়েছিল।

‘আমি জানতাম যে আমার একজন আত্মীয় ইরাকি সেনাবাহিনীতে চাকরি করছেন। আমি তার সাথে যোগাযোগ করি এবং তিন বছর পর কুর্দি অঞ্চলে চলে আসি।’

সংগ্রাম
১৯৯১ সালে তিনি কুর্দি অঞ্চলে পৌঁছানোর পরে শিগগিরই তার বেঁচে থাকার খবর ছড়িয়ে পড়ে।

‘যখন আমার বেঁচে থাকার গল্পটি প্রকাশ পায় তখন থেকেই ইরাকি বাহিনী এবং কুর্দি সহযোগীরা আমার সন্ধান করতে শুরু করে। তখন আমার বয়স হয়েছিল ১৫ বছর।’

তৈমুর তার অত্যাচারীদের থেকে বাঁচতে লুকোচুরি শুরু করেন। একপর্যায়ে, তাকে তার আত্মীয়ের বাড়ি ছেড়ে পুড়ে যাওয়া গ্রামগুলোর ধ্বংসাবশেষে লুকিয়ে থাকতে হয়।

‘আমি কুর্দিদের খালি গ্রামগুলোয় একা থাকতাম। আমার কোনো খাবার ছিল না। মাঝে মাঝে আমাকে গাছের পাতা খেতাম,’ সে বলে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়, এবং যুক্তরাষ্ট্রে তার আশ্রয়ের আবেদন গৃহীত হয়।

‘১৯৯৬ সালে, আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাই এবং একটি গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করি। আমি এখনো এই ব্যবসাই করছি,’ তিনি বলেন।

কবর সন্ধান করা
২০০৯ সালে, তৈমুর ইরাকে ফিরে যান। সে সময় তিনি তার মা ও বোনদের মাটিচাপা দেয়া স্থানটি সন্ধান করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

তিনি বাগদাদের ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে সামাওয়াহ অঞ্চলে গিয়ে ওই বেদুইন পরিবারকে খুঁজে পান যারা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল।

‘আমি তাদের বলেছিলাম যে আমাকে সেই তাঁবুর স্থানে নিয়ে যেতে যেখানে আমি তাদের সাথে প্রথম দেখা করেছিলাম। তারা যখন আমাকে সেই জায়গায় নিয়ে যায়, তখন আমি আমার অন্তর্দৃষ্টি ব্যবহার করি এবং কবরের সন্ধান পেতে সক্ষম হই।’

ধূ ধূ মরুভূমিতে কোন কিছুর অনুসন্ধান করা কোনও সহজ কাজ ছিলনা।

‘কবরটি যখন দেখলাম আমি কাঁপছিলাম। আমি কাঁদছিলাম। আমি অনুভব করলাম যে ঈশ্বর আমাকে হয়তো এই একটি কারণে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ঈশ্বর আমাকে একটি বড় লক্ষ্য দিয়েছেন এবং সেটা হল সেই নিরীহ মানুষদের নিয়ে কথা বলা, যাদের আর কথা বলার শক্তি নেই।’

তৈমুর তার পরিবারের সদস্যদের দেহাবশেষ সাবধান ফিরিয়ে আনতে রাজনীতিবিদদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন।

‘আমি ইরাকি সরকারের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম এবং তাদের বলেছিলাম যে এই কবর সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তারা যেন আমাকে অবহিত করেন। আমার মা ও বোনদের একটি ছবিও আমার কাছে নেই। আমি কবরস্থানে থাকতে চেয়েছিলাম কোনটি আমার মা এবং আমার বোন এবং আমি তাদের দেহাবশেষ নিয়ে একটি ছবি তুলতে চাই।’

তবে ইরাকি কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করেনি। ‘তারা আমার উপস্থিতি ছাড়াই কবরস্থানের কাজ শুরু করেছে,’ তিনি বলেন।

অসম্ভব কাজ
ওই কবরটি থেকে ১৭০টিরও বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়। যেখানে তৈমুর বিশ্বাস করেন যে তার আত্মীয়দের হত্যা করা হয়েছিল।

ইরাকি কর্মকর্তারা বলেছেন যে আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগের বিষয়টি কুর্দি প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে।

কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের মুখপাত্র ফাওদ ওসমান তাহা বলেছেন, ‘প্রত্যেক ভুক্তভোগীর স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করা আমাদের পক্ষে কঠিন। তৈমুর [আহমেদ] যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। আমরা এই দেশে বসবাসকারী লোকদের প্রতি মনোনিবেশ করছি। স্বজনদের জানানোর আগে লাশগুলি প্রথমে আমাদের পরীক্ষা করতে হবে। আমরা এমন কোনও ক্লু খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছি যা লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে সাহায্য করবে যেমন পোশাক বা আইডি কার্ড বা তারা কোথা থেকে এসেছেন এমন কোন চিহ্ন।’

তিনি বলেন যে, আরও পরীক্ষার জন্য দেহাবশেষ থেকে ডিএনএ নমুনা নেওয়া হবে এবং প্রতিটি মরদেহকে আলাদা কোড নম্বর দেওয়া হবে।

‘পরিবারগুলো সনাক্ত করার পরে আমরা তাদের মৃতদেহগুলি তাদের নিজ শহর বা গ্রামে নিয়ে যেতে এবং একটি বিশেষ শেষকৃত্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের কবর দিতে সহায়তা করব। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার চাই। তবে আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ যুদ্ধাপরাধীদের অনুসরণ করা নয়। আমরা প্রমাণ সংগ্রহ করি এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য বিশেষ আদালতে পাঠাই,’ তাহা বলেছেন।

বিচার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছুটে আসার পরে, তৈমুর মরুভূমির মাঝখানে শিবির স্থাপন করেন।

তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের গর্তটি খনন করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যেখানে তাঁর মা ও দুই বোনের দেহাবশেষ রয়েছে বলে তারা বিশ্বাস।

‘আমি এখানেই থাকব। আমি কবর রক্ষা করতে সব ধরণের চেষ্টা করে যাব।’

তৈমুর জানান যে তিনি স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মনোভাব দেখে বিরক্ত হয়ে আছেন। যারা আরও একটি গণকবর সন্ধানের কৃতিত্ব নিতে আগ্রহী।

‘কুর্দি গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। আমাদের এ ঘটনার পেছনে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ