বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
আসামের এনআরসি : বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগ কতটা?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:৩৯
ভারতের আসামে নাগরিকদের যে তালিকা করা হয়েছে, তাতে বাদ পড়েছে ১৯ লাখের বেশি বাসিন্দা। এখন তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য বিদেশি ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হবে, যার সামনে রয়েছে দীর্ঘ আইনি লড়াই।
এরপরই প্রশ্ন আসবে তাদের বিদেশি হিসেবে ঘোষণা করা বা গ্রেফতারের প্রসঙ্গ।
তবে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব তাড়াতাড়ি সে রকম কিছু না ঘটলেও, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এখনি সতর্ক হওয়া উচিত।
শনিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, এ বিষয়ে ভারতের আশ্বাসের প্রতি বাংলাদেশ বিশ্বাস রাখে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০ অগাস্ট ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ঢাকা সফরের সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘সেখানে তিনি (জয়শঙ্কর) স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং (বাংলাদেশের জন্য) কোনো সমস্যা হবে না।’
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, '‘এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, তাই আমরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
উদ্বিগ্ন হওয়া আর সতর্ক হওয়া প্রয়োজন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসীন বলছেন, বাংলাদেশের এখনি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার আর প্রস্তুতি নেয়ার দরকার আছে। যারা বাদ পড়েছে, সেখানে আরো প্রক্রিয়া বাকি আছে, আদালতের ব্যাপার আছে। এসব প্রক্রিয়ার মধ্যে গিয়ে এ সংখ্যাটি কমে আসবে। তিনি বলেন, ‘ওই তালিকার মধ্যে অনেক ভুলভ্রান্তিও আছে। দেখা যাচ্ছে বাবা তালিকায় এসেছে, ছেলের নাম আসেনি। সেগুলোও ঠিক করতে হবে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এখন যে সংখ্যাটি আছে, সেটা হয়তো আরো কমে যাবে। কিন্তু তার পরও আমি মনে করি, বাংলাদেশের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে যে ঘটনা ঘটে গেছে, সে রকম পরিস্থিতি যাতে আর তৈরি না নয়, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের সতর্ক থাকা উচিত। বাংলাদেশের সরকারের জোরালোভাবে দাবি করা উচিত, যে এরা বাংলা ভাষায় কথা বললেও, তারা বাংলাদেশি নাগরিক না।’ অধ্যাপক আমেনা মহসীন বলেন, ‘ওরা এদের বাংলাদেশি বলার চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের পরিষ্কার করে বলা উচিত যে, এরা বাংলাদেশি নয়, এদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোন ধরণের দায়িত্ব নেবে না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই বার্তাটা পরিষ্কার করে দেয়া উচিত।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, ভারতের তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হতে পারে। বাংলাদেশের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে
সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির মনে করেন, এখনি উদ্বিগ্ন না হলেও বাংলাদেশের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ যেভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তালিকায় বাদ পড়াদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে, ভবিষ্যতে সেটা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখনো এই তালিকায় বাদ পড়াদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা বা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সরকারি তরফে কিছু বলা হয়নি। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের বক্তব্যে তেমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলছেন, ‘তালিকায় শেষ পর্যন্ত যারা বাদ পড়বে, তাদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠাতে ভারতের দিক থেকে কোন একটা সময়ে একটা প্রচেষ্টা হতে পারে। তবে এ ধরনের ঘটনায় দ্বিপাক্ষিক একটি বিষয় থাকে। সেখানেই এই বিষয়টা পরিষ্কার করতে হবে। এটা যেন সেই পর্যায়ে না গড়ায়, এ জন্য এখন থেকেই বক্তব্য তুলে ধরতে হবে।’ তিনি বলছেন, রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, সেভাবে একপাক্ষিকভাবে জোর করে এতো মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া ভারতের পক্ষেও সম্ভব হবে না। কোন কিছু করতে হলে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই ভারতকে সেটা করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, ‘এত মানুষকে বাংলাদেশ গ্রহণ না করলে ভারত জোর করে পাঠাতে পারবে না। একপাক্ষিক ব্যবস্থা ভারত নেবে আমার মনে হয় না। কাউকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চাইলে ভারত আলোচনার মাধ্যমে কোনো ব্যবস্থার মধ্যে যাবে। ভারত প্রস্তাব দিলেও সেটা তো আর আমাদের গ্রহণ করতে হবে না। অভারতীয় হলেই বা বাংলাভাষী মুসলিম হলেই তো আর বাংলাদেশি হয়ে যায়না। সেটা জোরালোভাবে বলতে হবে। সুতরাং ভারতের অভ্যন্তরীণভাবেই এই বিষয়টা সমাধান করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এরকম বিষয় তুলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সেই সম্পর্ক কি নষ্ট করতে চাইবে? হুমায়ুন কবির অবশ্য মনে করেন, ভালো সম্পর্ক থাকার পরেও এ ধরনের ঘটনা যে ঘটবে না সেটা বলা যায় না। তিনি যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোর উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, তাদের মধ্যেও খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এ রকম অভিবাসী ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা হয়েছে। এই ‘বিদেশিদের’ পরিণতি কী হবে?
তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা হতে পারে। যে হাজারখানেক মানুষকে আসামে ইতোমধ্যেই বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের বিভিন্ন কারাগারের ভেতর ছটি আটক কেন্দ্রে আটকে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এখন একটি আলাদা আটক কেন্দ্র তৈরি করছে যেখানে ৩০০০ লোককে রাখা যাবে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বার বার জোর দিয়ে বলেছে অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। তবে প্রতিবেশী বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বলে দিয়েছে আসাম থেকে তারা একজনকেও গ্রহণ করবে না। এবিএন/সাদিক/জসিম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসীন বলছেন, বাংলাদেশের এখনি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার আর প্রস্তুতি নেয়ার দরকার আছে। যারা বাদ পড়েছে, সেখানে আরো প্রক্রিয়া বাকি আছে, আদালতের ব্যাপার আছে। এসব প্রক্রিয়ার মধ্যে গিয়ে এ সংখ্যাটি কমে আসবে। তিনি বলেন, ‘ওই তালিকার মধ্যে অনেক ভুলভ্রান্তিও আছে। দেখা যাচ্ছে বাবা তালিকায় এসেছে, ছেলের নাম আসেনি। সেগুলোও ঠিক করতে হবে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এখন যে সংখ্যাটি আছে, সেটা হয়তো আরো কমে যাবে। কিন্তু তার পরও আমি মনে করি, বাংলাদেশের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে যে ঘটনা ঘটে গেছে, সে রকম পরিস্থিতি যাতে আর তৈরি না নয়, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের সতর্ক থাকা উচিত। বাংলাদেশের সরকারের জোরালোভাবে দাবি করা উচিত, যে এরা বাংলা ভাষায় কথা বললেও, তারা বাংলাদেশি নাগরিক না।’ অধ্যাপক আমেনা মহসীন বলেন, ‘ওরা এদের বাংলাদেশি বলার চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের পরিষ্কার করে বলা উচিত যে, এরা বাংলাদেশি নয়, এদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোন ধরণের দায়িত্ব নেবে না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই বার্তাটা পরিষ্কার করে দেয়া উচিত।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, ভারতের তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হতে পারে। বাংলাদেশের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে
সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির মনে করেন, এখনি উদ্বিগ্ন না হলেও বাংলাদেশের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ যেভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তালিকায় বাদ পড়াদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে, ভবিষ্যতে সেটা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখনো এই তালিকায় বাদ পড়াদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা বা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সরকারি তরফে কিছু বলা হয়নি। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের বক্তব্যে তেমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলছেন, ‘তালিকায় শেষ পর্যন্ত যারা বাদ পড়বে, তাদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠাতে ভারতের দিক থেকে কোন একটা সময়ে একটা প্রচেষ্টা হতে পারে। তবে এ ধরনের ঘটনায় দ্বিপাক্ষিক একটি বিষয় থাকে। সেখানেই এই বিষয়টা পরিষ্কার করতে হবে। এটা যেন সেই পর্যায়ে না গড়ায়, এ জন্য এখন থেকেই বক্তব্য তুলে ধরতে হবে।’ তিনি বলছেন, রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, সেভাবে একপাক্ষিকভাবে জোর করে এতো মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া ভারতের পক্ষেও সম্ভব হবে না। কোন কিছু করতে হলে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই ভারতকে সেটা করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, ‘এত মানুষকে বাংলাদেশ গ্রহণ না করলে ভারত জোর করে পাঠাতে পারবে না। একপাক্ষিক ব্যবস্থা ভারত নেবে আমার মনে হয় না। কাউকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চাইলে ভারত আলোচনার মাধ্যমে কোনো ব্যবস্থার মধ্যে যাবে। ভারত প্রস্তাব দিলেও সেটা তো আর আমাদের গ্রহণ করতে হবে না। অভারতীয় হলেই বা বাংলাভাষী মুসলিম হলেই তো আর বাংলাদেশি হয়ে যায়না। সেটা জোরালোভাবে বলতে হবে। সুতরাং ভারতের অভ্যন্তরীণভাবেই এই বিষয়টা সমাধান করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এরকম বিষয় তুলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সেই সম্পর্ক কি নষ্ট করতে চাইবে? হুমায়ুন কবির অবশ্য মনে করেন, ভালো সম্পর্ক থাকার পরেও এ ধরনের ঘটনা যে ঘটবে না সেটা বলা যায় না। তিনি যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোর উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, তাদের মধ্যেও খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এ রকম অভিবাসী ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা হয়েছে। এই ‘বিদেশিদের’ পরিণতি কী হবে?
তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা হতে পারে। যে হাজারখানেক মানুষকে আসামে ইতোমধ্যেই বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের বিভিন্ন কারাগারের ভেতর ছটি আটক কেন্দ্রে আটকে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এখন একটি আলাদা আটক কেন্দ্র তৈরি করছে যেখানে ৩০০০ লোককে রাখা যাবে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বার বার জোর দিয়ে বলেছে অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। তবে প্রতিবেশী বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বলে দিয়েছে আসাম থেকে তারা একজনকেও গ্রহণ করবে না। এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ