আজকের শিরোনাম :

পুরোন ঢাকার কারখানা সরাতে কতদিন লাগবে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০১৯, ২১:৪৫

বাংলাদেশে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুরোন ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১জন মানুষ নিহত হন।
আগুনের সূত্রপাত হয় ওয়াহিদ ম্যানসন নামের একটি ভবনে থাকা রাসায়নিকের গুদাম থেকে।

ঐ ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে সরকার ও সিটি কর্পোরেশন চুড়িহাট্টা থেকে রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা সরানোর উদ্যোগ নেয়।

কবে সরবে রাসায়নিক এবং প্লাস্টিক কারখানা ও গুদাম?

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, পুরোন ঢাকায় এই মূহুর্তে প্রায় ২৫,০০০ রাসায়নিক এবং প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদাম আছে।

সরকার বলছে, অগ্নিকাণ্ডের পর তাৎক্ষনিকভাবে অস্থায়ী ভিত্তিতে চকবাজারের কয়েকশো রাসায়নিকের কারখানা সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

কিন্তু, এখনো সেখানে ২৪০টির বেশি প্লাস্টিক কারখানা ও গুদাম রয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, ঢাকার কাছে পোস্তগোলা এবং টঙ্গীতে চকবাজারের রাসায়নিকের প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্থায়ীভাবে কাজ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, "তবে, এগুলো স্থায়ীভাবে সরাতে আরো প্রায় বছর দেড়েক সময় লাগবে, অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেয়া যাবে।"

"যে কোন কাজ ব্যক্তি উদ্যোগে হলে দ্রুত করা যায়, সরকারের কাজে কিছুটা সময় লাগে। নিরাপদে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা করছি আমরা।"

রাসায়নিক ও প্লাস্টিক কারখানা সরানোর জন্য সরকার ইতিমধ্যে তিনটি প্রকল্প পাস করেছে।

এগুলোর জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে। মুন্সিগঞ্জে তাদের জন্য যে শিল্প পল্লী করা হবে, সেখানে রাসায়নিক ও প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের সেগুলো বরাদ্দ দেয়া হবে।" শিল্প পল্লীতে ২,১৫৪টি প্লট করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্প সচিব।

ব্যবসায়ীরা কেন সরতে চান না?

চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর পুরোন ঢাকার বিভিন্ন অংশ থেকে রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা সরানোর দাবি নতুন করে আলোচনায় আসে।

এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যেগুলোর প্রধান সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, আবাসিক এলাকা থেকে গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেয়া এবং অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া।

কিন্তু তাতে সব সময়ই প্রধান বাধা আসে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেই।

নানা যুক্তি দেখিয়ে তারা সেখান থেকে কারখানা সরাতে চান না।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতির সহকারী সম্পাদক মোঃ নাজির হোসেন বলছিলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য পুরানো ঢাকায় থাকা সুবিধাজনক হয়।

তিনি বলেন, "এখানে যারা গোডাউন রাখে বা ব্যবসা করে তাদের সুবিধা অনেক। নিজের ভিটাবাড়ির নিচে ব্যবসা করছে, তার কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে। বাসা আর কাজের জায়গা একই জায়গায় হলে অনেক সুবিধা।"

"তাছাড়া, অন্য এলাকায় ব্যবসা করতে হলে অনেক সমস্যা, যেমন চাঁদাবাজির সমস্যা ফেইস করতে হয়।"

"আবার দেশের যেকোন জায়গায় জিনিসপত্র পাঠানোর জন্য পরিবহন পাওয়া এখানে কোন সমস্যা না, কিন্তু এই গাড়িগুলোই অন্যখানে যেতে চায় না।"

মিঃ হোসেন জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক সময়ই নদীপথে পাঠানো হয়, পরিবহন খরচ অনেক কম হয় তাতে। সেটাও আরেকটি বড় কারণ ব্যবসায়ীদের এখানে থাকার জন্য।

কেন সরছে না রাসায়নিক ও প্লাস্টিক কারখানা ও গুদাম?

চকবাজারের স্থানীয় মানুষেরা জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে অগ্নিকাণ্ডের পর তারা সচেতন হয়েছেন। কিন্তু তাতে রাসায়নিক ও প্লাস্টিকের গুদাম এবং কারখানা ভাড়া দেয়া বন্ধ নেই।

বসবাসের জন্য বাসা ভাড়া দেয়ার চাইতে গুদাম ও কারখানাকে ভাড়া দিলে বেশি অর্থ পাওয়া যায়। যে কারণে বাড়িওয়ালারা গুদাম ও কারখানা ভাড়া দিতে বেশি আগ্রহী থাকেন বলে অভিযোগ অনেকের।

এর বাইরে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের সহায়তাও পুরানো ঢাকায় রাসায়নিক গুদাম এবং কারখানা সরে না যাবার আরেকটি কারণ বলে মনে করেন অনেকে।

নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি

২০১০ সালে পুরানো ঢাকার নিমতলীতেও রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুন লেগে মারা গিয়েছিলেন ১২৪জন মানুষ।

সে সময়ও পুরোন ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা সরানোর দাবি উঠেছিল। সেসময় সরকারের গঠন করা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি ১৭ দফা সুপারিশ করেছিল।

সে সব সুপারিশের মধ্যে ছিল:

* আবাসিক এলাকা থেকে গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেয়া

* অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া

* আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক বা বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ মজুদ ও বিপণন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা

নয় বছরেও এসব সুপারিশের বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও পুরানো ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে।

চলতি মাসের মাঝামাঝি ইসলামবাগের পোস্তায় এক প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে বেশ কয়েকটি প্লাস্টিক ও জুতার কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যদিও ফায়ার সার্ভিস বলেছে ঈদের ছুটি থাকায় বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

কিন্তু পুরানো ঢাকার এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা কেন ঠেকানো নেয়া যায় না?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইসরাত ইসলাম বলছিলেন, এর একটি বড় কারণ আইনের প্রয়োগ না হওয়া এবং মানুষের সচেতন না হওয়া।

"আইন তো আছে, কিন্তু তার কোন প্রয়োগ দেখিনা আমরা। দুর্ঘটনা ঘটলে তখন তদন্ত কমিটি, সুপারিশ বিভিন্ন কিছু হয়, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয় না। যে কারণে সুপারিশগুলো মানুষ মানছে না।"

"অগ্নিকাণ্ডের জন্য পুরানো ঢাকা ঝুঁকিপূর্ণ হবার একটি বড় কারণ হচ্ছে, সেখানে ভবন নির্মাণের নিয়ম কানুন মেনে বাড়ি করা হয়নি, সেজন্য সেখানে অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি প্রায় উপেক্ষিত।

সেই সঙ্গে রাস্তাগুলো এত সরু যে আগুন লাগলে উদ্ধারকারী দলের পক্ষেও ঠিকমত পৌঁছানো মুশকিল।"

ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবারগুলো

চকবাজারে নিহত মানুষের স্বজনেরা বলছেন, নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার।

কিন্তু এখনো সে প্রতিশ্রুতির কোন বাস্তবায়ন হয়নি। যে কারণে অনেক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নিহত হবার পর পরিবারের বাকী সদস্যরা খুবই বিপাকে পড়েছেন। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ