আজকের শিরোনাম :

ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে এডিস মশার যে প্রজাতিটি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০১৯, ১১:২৭

ঢাকার বাইরে গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর পেছনে এডিস এলবোপিক্টাস মশার একটি প্রজাতি দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর সাথে যে দুই ধরনের মশা জড়িত তার একটি এই এডিস এলবোপিক্টাস। অন্যটি এডিস এজিপ্টাই।

এর মধ্যে এজিপ্টাই ঢাকা বা শহরাঞ্চলে বেশি থাকে। আর এর বাইরে গ্রামাঞ্চলে এডিস এলবোপিক্টাসের ঘনত্ব বেশি দেখা যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস এলবোপিক্টাস যেহেতু মহামারী আকারে রোগ ছড়াতে পারে, সেহেতু এডিস এলবোপিক্টাসই রোগ ছড়াচ্ছে বলে আমরা ধারণা করছি। তবে এখনো এর গবেষণালব্ধ তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

তবে এ ধরনের মশা ঘরের ভেতরে নয় বরং বাইরে কামড়ায় বলেই জানিয়েছেন এ কীটতত্ত্ববিদ।

জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর সবচেয়ে উপযোগী সময় ধরা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, থেমে থেমে বৃষ্টি হলে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

২৮ আগস্ট প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সী অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব বলছে, এদিন ঢাকার ভেতরে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৫৫১ জন। আর ঢাকার বাইরে নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৬০৬ জন।

এ মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ। আর এ পর্যন্ত এ রোগে ৫২টি মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।

এডিস এলবোপিক্টাসের বৈশিষ্ট্য
কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, এডিস এলবোপিক্টাস মশার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ধরনের মশা ঘরের ভেতরে না, বাইরে থাকে। আর এ কারণেই ঘরের ভেতরে থাকলে এ মশা কামড়ায় না। বাইরে বের হলে কামড়ায়।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ মানুষই জানে না যে এডিস এলবোপিক্টাস কোথায় জন্মায়। এডিস এজিপ্টাইয়ের মতো এটি যে কোনো জায়গায় স্বচ্ছ পানি পেলেই বংশবৃদ্ধি করে না। বরং এর জন্য বিশেষ ধরনের পরিবেশের দরকার হয়।

বাশার বলেন, এডিস এলবোপিক্টাস যেখানে জন্মায় তার মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে গাছের কোটর। এ ছাড়া বাঁশ কাটার পর সেখানে থেকে যাওয়া গোঁড়ায় যে পানি জমে সেখানে এলবোপিক্টাস মশা বেশি হয়।

তিনি বলেন, ‘কলাগাছের দুটো পাতার মাঝখানে যে পানি জমে, কচু গাছের দুটো পাতার মাঝখানে যে পানি জমে, এগুলোকে আমরা বলি ন্যাচারাল কন্টেইনার। এলবোপিক্টাস জন্মায় ন্যাচারাল কন্টেইনারে।’

কীভাবে নির্মূল করা যাবে?
যেহেতু এলবোপিক্টাসের বংশবৃদ্ধি সম্পর্কে মানুষ কম জানে তাই এর নিয়ন্ত্রণও একটু বেশি কঠিন।

কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এলবোপিক্টাসকে ম্যানেজ বা নিয়ন্ত্রণ করাটা কঠিন। তাই এটি যদি ভেক্টোরিয়াল ক্যাপাসিটি (আক্রান্ত করার ক্ষমতা) খুব বেশি পেয়ে যায় তা হলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, এলবোপিক্টাস নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রকৃতিতে থাকা ন্যাচারাল কন্টেইনার বা পাত্রগুলোকে খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে বন্ধ করতে হবে। যেমন গাছের কোটর মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে, কলাগাছের পাতায় কোনা দিয়ে একটু কেটে দিলেই হয়। আর কচু গাছের বড় বড় ডগাগুলো ছেঁটে দিতে হবে।

এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করার ক্ষেত্রে তিনি সাতক্ষীরা জেলার উদাহরণ টানেন। বলেন, সেখানকার জেলা প্রশাসন, জেলা-উপজেলা, ইউনিয়নসহ সমস্ত মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে ডেকে ওয়ার্কশপ করিয়েছে। যেখানে এডিস এজিপ্টাই এবং এডিস এলবোপিক্টাসের জন্ম এবং এগুলো নির্মূলের উপায় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

এ ধরনের পদক্ষেপ যদি সবগুলো জেলাতে নেয়া যায় তাহলে ডেঙ্গু নির্মূল অনেক বেশি সহজ হবে বলেও মনে করেন তিনি।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ